X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে দেশের মানুষ!

জাকিয়া আহমেদ
২৬ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৯আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৯

অসংক্রামক রোগী বাড়ছে দেশে! দেশে সংক্রামক রোগ কমে এলেও অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের মানুষ। আর আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই এসব রোগ মোকাবিলায় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয় বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, দেশের মোট ৬১ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। গত ৬ বছরে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সার, ডায়াবেটিক, হার্ট ডিজিজ ও  স্ট্রোক এবং শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা- এ চারটি হলো অসংক্রামক রোগের মধ্যে প্রধান এবং অন্যতম। তামাক সেবন (স্মোকিং এবং নন স্মোকিং), অস্বাস্থ্যকর খাবার (অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার কিংবা আশঁ বা ফাইবার কম খাবার, প্রাণিজ আমিষ, জাঙ্কফুড) এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবেই মূলত শরীরে এসব রোগ বাসা বাঁধে।  

দেশে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ। যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও মাত্র ২৫ শতাংশ রোগীকে সেবার আওতায় আনা গেছে।

অপরদিকে, দেশে প্রতি একহাজার মানুষের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এক দশমিক আট জন এবং মৃত্যুবরণ করছেন এক দশমিক ৩ জন। আর প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যন্সার ধরা না পরলে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছেন রোগীরা।

অসংক্রামক রোগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন থেকে জানা যায়, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি রোগ ইন্সটিটিউট, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ।

হেলথ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন ২০০৫ সালে ৫৫৯ জন ও ২০১৪ সালে এক হাজার ৩৮৬ জন। ২০০৫ সালে ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন ৯০২ জন ও ২০১৪ সালে এক  হাজার ৯৮৩ জন। ২০০৫ সালে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন ৫৬১ জন ও ২০১৪ সালে  ৮৯৪ জন।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ রির্পোট-২০১৬’তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু কমাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হলেও অসংক্রামক রোগ বেড়েছে।

আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদন হেলথ বুলেটিন-২০১৬’তে বলা হয়েছে, দ্রুত নগরায়ন, প্রক্রিয়াজত খাদ্যের প্রসার, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, সড়ক দুর্ঘটনা এবং নানাবিধ মানসিক চাপের কারণে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। যেখানে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, শ্রবণ প্রতিবন্ধিতাকে অসংক্রামক রোগ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থ্যাপনার সুবিধার জন্য, সাপে কাটা, নারীর প্রতি সহিংসতা, পানিতে ডুবে মৃত্যু, এসিড সহিংসতাকেও অসংক্রামক রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৯৭ শতাংশ কমপক্ষে একটি ও ৫০ শতাংশ দুটি করে সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে আছেন, ৪ কোটি মানুষ ধুমপান ও পান জর্দা সেবন করেন, প্রায় ৬ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত সবজি ও ফল খেতে পারছে না এবং এক কোটি ৭০ হাজার মানুষ কায়িক পরিশ্রম করেন না। দেশের জনগোষ্ঠীর বয়োজ্যেষ্ঠদের শতকরা ১৮ ভাগ উচ্চ রক্তচাপ ও ৪ শতংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্ল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার চিকিৎসা খাতে অনেক ভালো কাজ করছে। কিন্তু কিছু ভুল নীতির কারণে অসংক্রামক রোগ আরও সংকটের দিকে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দানের ব্যাপারে সম্প্রতি যে আইন করেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। আমি মনে করি, শুধু নিকট আত্মীয় নয় বরং যে কারও কিডনি দান করার নিয়ম থাকা উচিত।’

জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এক লাখ ২২ হাজার মানুষ এবং মারা যান ৯১ হাজার মানুষ।’

দেশে বর্তমানে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চলতি শতাব্দীতে অসংক্রামক রোগের বিস্তার অনেক বেশি হয়েছে। সামনে এ হার আরও বাড়বে। এর প্রধান কারণগুলো মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সর্ম্পকিত। সেগুলো যদি আমরা পরিবর্তন না করি তাহলে অসংক্রামক রোগের সংক্রমন থামানো যাবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. এনায়েতুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এবছর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেক্টর প্রোগ্রামে অসংক্রামক রোগকে বিশেষভাবে গুরুত্ব এবং অত্যন্ত প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেটা চলতি বছর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চলবে।’

তবে শুধু ওষুধ দিয়ে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ জীবনযাত্রার ধরন। তাই মানুষকে সচেতন করার জন্য আমাদের মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছেন। আমরাও কেন্দ্রীয়ভাবে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছি।’

 

 

/এসএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
মেসির জোড়া গোলে মায়ামির আরেকটি জয় 
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চলছে ভোট গ্রহণ
যাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
১৬ শ্রমিকের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়ে চলছে ৯ জেলার হাসপাতালযাদের স্যালাইনে বাঁচে প্রাণ, তাদের মজুরি বাড়ে না
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে