X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যেসব বিষয় নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১৪ মামলা

তোফায়েল হোসাইন
০৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:২৯আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:১৬

 

আদালতে খালেদা জিয়া (ছবি: ফোকাস বাংলা) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা ১৪টি মামলার বিচার চলবে বকশীবাজার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নয়। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতে এই মামলাগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে।

সোমবার (০৮ জানুয়ারি) আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে যে ১৪টি মামলা স্থানান্তরের কথা জানানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে ৯টি, বিশেষ জজ আদালতে ৩টি ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ২টি মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলার মধ্যে ১১টিই বর্তমান সরকারের আমলেই দায়ের করা।

মামলাগুলো হলো—দারুস সালাম থানায় করা নাশকতার আট মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা, যাত্রাবাড়ী থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলা।

নাশকতার আট মামলা

২০১৫ সালের প্রথম দিকে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি মামলাগুলোর অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা

২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোলবোমা ছোড়ার ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করে পুলিশ। এরপর খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২৫ জানুয়ারি এ মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায়

গ্যাটকো দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ  ২০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২১ জানুয়ারি তারিখ  ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলদারের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন।

নাইকো দুর্নীতি মামলা

নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক মাহমুদুল হাসানের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন।

কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা

বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক হোসনে আরা বেগমের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন।

মানহানির দুই মামলা

বাংলাদেশের মানচিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্বকে কলঙ্কিত এবং জাতীয় পতাকাকে অপমানিত করার অভিযোগে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করেন। ওই দু’টি মানহানির মামলা ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালতে আগামী ২১ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে, সোমবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মামলা স্থানান্তরিত করার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নয় বরং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে কোনও রাজনীতি নেই।’

খালেদা জিয়ার ১৪টি মামলার স্থানান্তর সম্পর্কে তার আইনজীবী মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে হয়রানি করার জন্যই এই কাজ করা হচ্ছে। মূলত এর মধ্যে সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করেছে সরকার। তবে, জনগণ তাদের অধিকার রক্ষার জন্য জাগ্রত হবে।সরকারের এ কৌশল কাজে লাগবে না।

জানতে চাইলে বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলো স্পেশাল অ্যাক্টের মামলা নয়। এগুলো দণ্ডবিধি আইনের অধীনে মামলা। এ সব মামলা বিশেষ আদালতে (বিচারের জন্য) কখনও নেওয়া হয়নি। কিন্তু এটাই প্রথম। একমাত্র মার্শাল ল’-এর সময় এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিলে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এমনটা আমরা কখনও দেখিনি। আর যেখানে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার করা হয়েছে, সেখানে খালেদা জিয়ার মামলার বিচার কেন হবে? তিনি বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী এবং একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলে চেয়ারপারসন। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত হয়ে করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যেই বকশীবাজারে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বিচারাধীন রয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। মামলা দু’টি আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারি যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য আছে।

 

/ইউআই/ এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাভিকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছেন বার্সা প্রেসিডেন্ট
জাভিকে বরখাস্ত করতে যাচ্ছেন বার্সা প্রেসিডেন্ট
ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজকে  নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজকে নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেছেন: আইজিপি
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করেছেন: আইজিপি
ঈদ উপলক্ষে বাজারে এলো ওয়ালটনের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য
ঈদ উপলক্ষে বাজারে এলো ওয়ালটনের বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক