X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪ কারণে কাজে ফিরতে পারেননি রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা

উদিসা ইসলাম
২৪ এপ্রিল ২০১৮, ০৭:৫৬আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১২:১৭

রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অধিকাংশ শ্রমিক কাজে ফিরতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে গবেষক ও শ্রমিক নেতারা চার ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। কারণগুলো হলো—শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক সহায়তার অভাব, দুর্ঘটনার পর প্রশিক্ষণ না পাওয়া ও মানসিক অস্থিরতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবন ধসে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা ৫/১০ বছরেই সেরে উঠবেন—এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। তাদের অনেকের জন্যই আজীবন চিকিৎসা সুবিধা বরাদ্দ করতে হতে পারে। কেননা, এ ধরনের ভিকটিমদের এক অসুখ থেকে আরেক অসুখের দিকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ফলে যারা এসব শ্রমিককে চিকিৎসা সহায়তা দিতে অসুস্থতার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিলেন, তারা সেটি সঠিকভাবে করেছিলেন—তা বলা যাচ্ছে না। আর এ কারণেই অনেক ভুক্তভোগীর প্রয়োজন সত্ত্বেও চিকিৎসা সহায়তা চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ হয়নি।

রানা প্লাজা মোটিফ জানা গেছে, রানা প্লাজার শ্রমিকদের ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনও কোনও কাজ করতে পারছেন না। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের গবেষণা বলছে, জীবিত শ্রমিকদের মধ্যে ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন ঠিকই; কিন্তু বারবারই তারা কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কিংবা মালিকপক্ষই তাদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ওই দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও পোশাক খাতের উন্নয়নে সরকার, মালিক ও ক্রেতারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের। যদিও পাশাপাশি তারা এ-ও বলছেন, বেশিরভাগ ভুক্তভোগী শ্রমিক কোনোভাবেই নিরাপদ বোধ করছেন না।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। ওই ভবনে মোট পাঁচটি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে ১ হাজার ১৫৩ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে।

অ্যাকশন এইড গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফলোআপের সময় কাজে যুক্ত না হতে পারার কারণ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বলেছেন। এছাড়া সামাজিক সহায়তার অভাবের কথাও এসেছে। আমরা নিবিড়ভাবে কথা বলতে গিয়ে জেনেছি, শ্রমিকেরা কাজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কারখানায় গিয়ে কয়েকদিন পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন দুই-তিন দিন ছুটি নিতে হয়। এভাবে প্রতি মাসে ৫/৬ কর্মদিবসে ছুটি কাটালে অসন্তুষ্ট হন মালিকপক্ষ।’

নিয়মিত ফলোআপ না রাখা শ্রমিকদের পুনর্বাসনকে ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে নুজহাত জেবিন বলেন, ‘তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে ধারাবাহিকতা ছিল না। যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তারা পরে গিয়ে জানতেই চাননি যে ওই প্রশিক্ষণ তারা কাজে লাগাতে পারছে কিনা।’

রানা প্লাজার শ্রমিকদের অনেকেই ‘রিকারিং ইনজুরি’ বা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতার শিকার উল্লেখ করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের ব্যক্তিরা একটি অসুখ থেকে সেরে উঠতে উঠতেই আরেকটি অসুখে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার প্রয়োজন—এমন শ্রমিকের তালিকা যখন করা হয়েছিল, তখন হয়তো একজন শ্রমিকের ব্যথা ছিল না। ছয় মাস পর হয়তো তার ব্যথা বেড়েছে। ততদিনে তিনি চিকিৎসা সহায়তার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।’ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ব্র্যাকের সহায়তায় প্রায় ৯শ’ জনের জন্য একটি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাকিদের কী হলো? যে মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই ৯শ’ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, অন্যরা হয়তো সেইগুলোর মধ্যে পড়েন না।’

শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মারাত্মকভাবে আহতদের মধ্যে ৩১০ জনের তালিকা আছে আমাদের কাছে। তাদের কারও পা কাটা পড়েছে, কারও হাত কাটা পড়েছে, কারও মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি। অথচ মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি গত ২১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে বললেন, সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বললেন, রানা প্লাজা ট্রাস্টে ক্ষতিপূরণের টাকা পড়ে আছে, কেউ নিতে আসে না। এটি একেবারেই মিথ্যাচার। গুরুতর আহতদের চিকিৎসা চালানো সম্ভব হলে এতদিনে অনেকে সুস্থ হয়ে যেতেন।’ তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজার শ্রমিক শিউলি, হালিমা, নিলুফা মারাত্মক আহত হওয়ার পরও তাদের পুনর্বাসন হয়নি।

কিছু শ্রমিক কাজে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে তাদের শারীরিক জটিলতাগুলো প্রকট আকারে ফিরে এসেছে উল্লেখ করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রী জলি তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা কাজে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের নতুন জটিলতার মুখে পড়ছেন। এক রোগ থেকে আরেক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা স্থায়ীভাবে অক্ষম ও পঙ্গুদের ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তেমন উদ্যোগ ‍গুছিয়ে করা হয়নি। আহত শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে যদি কাজ দেওয়া যেত, তাহলে তারা সেই করতে পারত। গুরুতর আহত কোনও শ্রমিক নিশ্চয় খানিকটা সেরে ওঠার পরও অন্য স্বাভাবিক শ্রমিকদের মতো কারখানায় কাজ করতে পারবেন না। এই নেত্রী মনে করেন, চিকিৎসার ধারাবাহিকতাটা থাকা জরুরি।’

/টিআর/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা
সালাউদ্দিনের সমালোচনা আর ঢাকার গরম নিয়ে বাংলাদেশ কোচ যা বললেন
সালাউদ্দিনের সমালোচনা আর ঢাকার গরম নিয়ে বাংলাদেশ কোচ যা বললেন
১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
সোনার দাম১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা ২ মে
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা ২ মে
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ