X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

যৌন হয়রানি রোধে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি খোদ সুপ্রিম কোর্টেও

বাহাউদ্দিন ইমরান
২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৩৪আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৫৭

সুপ্রিম কোর্ট

সংবিধানের আলোকে সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ) প্রতিটি রায় বাস্তবায়ন করা সব নাগরিক কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক। এমনকি দেশের বিচার বিভাগও এর বাইরে নয়। অথচ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কর্মস্থলে কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ বছরেও খোদ সুপ্রিম কোর্টে (কোর্ট প্রশাসন, আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস) তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিক নির্দেশনা চেয়ে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলীর ওই রিটের শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। 

হাইকোর্টের ওই রায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেওয়া হয়। আদেশে বলা হয়— কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচ জন সদস্য থাকবে এবং এর বেশির ভাগ সদস্য হতে হবে নারী। এছাড়া, কমিটিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে দুই জন সদস্য নিতে হবে। তবে সম্ভব হলে একজন নারীকে কমিটির প্রধান করতেও রায়ে বলা হয়।

ওই রায়ের উল্লিখিত ‘কর্মস্থল’ বলতে বিচার বিভাগ ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত শাখাগুলোকেও বুঝাবে কিনা, তা জানতে চাইলে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘অবশ্যই। অ্যাটর্নির কার্যালয় একটি কর্মস্থল। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও একটি কর্মস্থল, এটি মোটেও ক্লাব নয়, এটি একটি পেশাদারী সংগঠনের প্রতিষ্ঠান। সমিতি পরিচালিত হওয়ার জন্য আচরণবিধি রয়েছে। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে। আর বার কাউন্সিলও একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠনের বিষয়টি কেউই এড়িয়ে যেতে পারেন না।’ 

অথচ কমিটি গঠনের সেই রায় বিগত ১০ বছরেও কার্যকর করেনি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের কোনও রায়  থাকলে— তা অবশ্যই সবার মেনে চলা উচিত।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা সকবার জন্যই বাধ্যতামূলক।’ 

আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘রায় অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠন না হওয়ার বিষয়টি সত্য। তবে এ ধরনের কমিটি করে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এ ধরনের কমিটি করবেন।’

এদিকে, রায়ের পর দীর্ঘ ১০ বছরেও বিচার বিভাগে তথা সুপ্রিম কোর্টে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠিত না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। ওই রায়ের আলোকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন চেয়ে গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পৃথক পৃথক চিঠি দেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা বেশ কিছু সম্মেলন করেছে। ওইসব সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বেশ প্রভাব ফেলেছিল। সম্প্রতি মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের মৃত্যুর পর সর্বত্র যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি আন্দোলন জেগে উঠেছে। তাই কমিটি গঠন করতে বলা আদালতের রায়টি বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু করি। আমি যেখানে (সুপ্রিম কোর্টে) আছি, সেখানে অনেকেই অনেক কথা (নারী আইনজীবীদের অভিযোগ) বলেন। কিন্তু আমাদের এখানে কোনও কমিটি হয়নি। তাই কমিটি গঠনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আমরা চিঠি পাঠিয়েছি।’ 

ওই চিঠির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিটি গঠন চেয়ে আমাদেরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির আগামী সভায় ওই চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

এদিকে, চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিঠি প্রদানকারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছি। কীভাবে এবং কাদের নিয়ে কমিটি করা যায়, সে বিষয়েও আলাপ হয়েছে।’ 

তবে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘পুরো সুপ্রিম কোর্টে (কোর্ট প্রশাসন, আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি কার্যালয়) কমিটি গঠনের তো এখতিয়ার আমার নেই। সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কমিটি গঠনের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির। আর আইনজীবীদের জন্য কমিটি করার এখতিয়ার বারের (আইনজীবী সমিতি) সভাপতি ও সম্পাদকের। আর আমার অফিসের (অ্যাটর্নি কার্যালয়) বিষয়ে কমিটি গঠনের এখতিয়ার আমার। তাই যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আমি আমার কার্যালয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি।’    

এই রায়টি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আশ্বাস প্রদান করেছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন,‘আদালতের রায়টি কারা মানেননি, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে অভিযোগ এলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’

 

/বিআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
সর্বাধিক পঠিত
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ