X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভবন ২২ লাখ, রাজউক দেখেছে ২ লাখ!

শাহেদ শফিক
২১ মে ২০১৯, ২০:২৭আপডেট : ২২ মে ২০১৯, ০১:০২

রাজধানীতে বহুতল ভবন রাজধানী ঢাকায় ২২ লাখের মতো ভবন রয়েছে, এ তথ্য বছর তিনেক আগের। বর্তমানে ভবনের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম না মেনে ভবন তৈরি করার কারণেই দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে,মহানগরীর ভবনের সংখ্যা নিয়ে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে। ফলে রাজধানীতে এখন কতটা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, আর কতটা ঝূঁকিপূর্ণ নয়, তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই রাজউকের।

তবে সংস্থাটির রয়েছে একাধিক জরিপ প্রতিবেদন। এসব প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর দুই-তৃতীয়াংশ ভবন বা প্রায় ৭৫ শতাংশ ভবনই নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি। ফলে নিরাপদ নগরী বিনির্মাণে কর্তৃপক্ষের (ভবন নির্মাতা) উদাসীনতাকেই দায়ী করা হয়েছে। এই জরিপ পরিচালনা করতে গিয়ে নগরীর ২২ লাখ ভবনের মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৪ হাজার ১০৬টি ভবন সরেজমিন দেখেছে বলে দাবি রাজউকের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত রাজউকের আওতাধীন এক হাজার ৫২৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২২ লাখ ভবনের মধ্যে ২ লাখ ৪ হাজার ১০৬টি ভবনে জরিপ করেছে রাজউক। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, আগেই নির্মিত এক লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৬টি ভবনের মধ্যে এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮৩টি ভবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যত্যয় (কম-বেশি) পাওয়া গেছে। তার মানে ৭৫ শতাংশ ভবন তৈরি হয়েছে সঠিক নিয়মের তোয়াক্কা না করেই। নির্মাণাধীন ৮ হাজার ৭৩০টি ভবনের মধ্যেও ৩ হাজার ৩৪২টি ভবনের অনুমোদিত নকশায় ব্যত্যয় রয়েছে। কিন্তু এরপরেও সেসব ভবনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রাজধানীতে এমন বহুতল ভবনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

রাজউকের তথ্য বলছে, সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় ২২ লাখের বেশি ইমারত রয়েছে। এরমধ্যে ৮৪ শতাংশ ভবন একতলা। আর তিন হাজার ২৭৩টি ১০ তলার অধিক বা বহুতল ভবন। এই তথ্য ২০১৬ সালের। গত তিন বছরে এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সব নিময়-কানুন অনুসরণ করে ভবন নির্মাণের পর মাত্র ১৬৫টির মতো ভবন ব্যবহারের অনুমতিপত্র বা অকুপেন্সি সনদ পেয়েছেন মালিকরা। রাজউকের আইন অনুযায়ী শুধু এই ভবনগুলোই সব নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়েছে। বাকি ভবনগুলো ব্যবহারের জন্য রাজউক থেকে কোনও অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেনি।

সম্প্রতি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর নগরীর বহুতল ভবনের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে রাজউক। তবে সংস্থাটির ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, তিন হাজার ২৭৩টি ভবন থাকলেও রাজউক এ পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৮১৮টি ভবনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত বের হওয়ার জন্য বিকল্প সিঁড়ি নেই। বাকি ৬৭ শতাংশ ভবনে এই সিঁড়ি থাকলেও ব্যবহার উপযোগী মাত্র ৪৩ শতাংশ। আর বাকি ৩৪ শতাংশ ভবনের সিঁড়ি ব্যবহার অনুপযোগী বলে মনে করছে রাজউক।

গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে রাজউকের ২৪টি টিমের তৈরি করা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কেবল বিকল্প সিঁড়িই নয়, ১৫ শতাংশ বহুতল ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি। আর বহুতল ভবন নির্মাণে ৩৭ শতাংশ ভবনের যে পরিমাণ উন্মুক্ত স্থান রাখার কথা তা রাখেনি। ৪৭৪টি বহুতল ভবনের মালিকরা অভিযান চলাকালে রাজউককে নকশা দেখাতে পারেনি। এছাড়া, সরকারের অন্য সংস্থার ৪৪টি বহুতল ভবনেরও নকশা পায়নি রাজউক। সংস্থাটির ২৪টি টিমের তদন্তে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের চিত্র মেলে ভবনগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। দেখা গেছে, ১৮১৮টি ভবনের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আছে মাত্র ৫৩৯টিতে। ৬০২টি ভবনে অগ্নিনির্গমন সিঁড়িও নেই।

নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বর হোসেনের মতে, ‘নগরীর এই অবস্থার জন্য দায় রাজউককেই নিতে হবে। কারণ, ভবন নির্মাণের সময় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতেন, তাহলে কোনও ভবনই নকশা ব্যত্যয় করে নির্মাণের সুযোগ থাকতো না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলে আসছে। আমরা সম্প্রতি আমাদের ৮টি জোনে ২৪টি টিম নামিয়ে বহুতল ভবনের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছি। সেখানে বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে অন্য ভবনগুলোর কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। আসলে কী পরিমাণ ভবন নিয়ম মেনে নির্মাণ করেছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে বর্তমানে আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি ঘটেছে। এখন অকুপেন্সি সনদ ছাড়া ভবনে সার্ভিস লাইন সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

/এফএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে লড়ছে ভাই-ছেলে, শাজাহান খান বললেন, ‘পরিবারের ঐতিহ্য’
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে লড়ছে ভাই-ছেলে, শাজাহান খান বললেন, ‘পরিবারের ঐতিহ্য’
সিলিং ফ্যানের যত্নে ৬ টিপস
সিলিং ফ্যানের যত্নে ৬ টিপস
শাসন করতে গিয়ে ছুরির আঘাতে মেয়ের মৃত্যু, গ্রেফতার বাবা
শাসন করতে গিয়ে ছুরির আঘাতে মেয়ের মৃত্যু, গ্রেফতার বাবা
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান