X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডিআইজি মিজান এখনও কেন বহাল?

জামাল উদ্দিন
১২ জুন ২০১৯, ২০:৫৩আপডেট : ১৩ জুন ২০১৯, ১৬:০৩

ডিআইজি মিজানুর রহমান (ফাইল ফটো)

পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মিজানুর রহমান নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ আছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলছে। সেই অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচাতে দুদক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার দাবি করেছেন নিজেই। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই অপরাধ ঢাকতে ঘুষ দিয়েছেন ডিআইজি মিজান।’ ঘুষ দেওয়ার মতো অপরাধ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এদিকে, ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দুদক কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু বহাল তবিয়তে ডিআইজি পদে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত আছেন মিজানুর রহমান। এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

এর আগে মরিয়ম আক্তার ইকো নামে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ওই সময় তিনি ডিআইজি পদমর্যাদায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়ায় ওই তরুণীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তাকে গ্রেফতারও করান তিনি। এছাড়া, এক সংবাদ পাঠিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে তখন তোলপাড় শুরু হলে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মইনুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তার বিরুদ্ধে থাকা অন্য অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত আইজিপি শাহাব উদ্দীন কোরেশীকে প্রধান করে দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। একইসঙ্গে মিজানুর রহমানকে ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়।

দু’টি তদন্ত কমিটিই ডিআইজি মিজানের কর্মকাণ্ডকে ‘অসদাচরণ ও নৈতিক স্খলন’ হিসেবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে। পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগও আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তদন্ত কমিটিগুলো গত বছরের (২০১৮) শুরুতেই প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেসব প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টিও পুলিশ সদর দফতর খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন জনসংযোগ শাখার এআইজি মো. সোহেল রানা।

ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে গঠিত দু’টি তদন্ত কমিটির একটির প্রধান ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশী। অন্য তদন্ত কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি। ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরও কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—জানতে চাইলে শাহাব উদ্দীন কোরেশী বলেন, ‘ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার পুলিশ সদর দফতরের নেই। তবে, তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো যথাসময়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছে।’
আর এ প্রসঙ্গে বুধবার একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ডিআইজি মিজান নিশ্চয়ই অপরাধ ঢাকতে ঘুষ দিয়েছেন। তার আগের অপরাধের বিষয়গুলোর তদন্ত চলছে। নতুন করে যদি ঘুষ দেওয়ার মতো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও ডিআইজি মিজানুর রহমান কীভাবে চাকরিতে বহাল থাকেন এবং তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক আইজি নুরুল হুদা বলেন, ‘পুলিশ সদর দফতর তো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। এখন কেন তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, সেটা তারা বলতে পারবেন।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী ও টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, যা সবার কাছে স্পষ্ট—এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেটা সংশ্লিষ্টরা নেবেন, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। সেটা যদি না হয়, তাহলে আমরা যে কথাটা বারবার বলছি, খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা একেবারেই চলে যাবে। এমনিতেই মানুষ তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে, নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়। সেজন্য অন্যায় করার প্রবণতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে যে, তখন সেই নিয়ন্ত্রণের জায়গা থেকে সুষ্ঠু জায়গায় ফেরত নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়বে। এখনও আমার মনে হয়, এসব ঘটনা থেকে সংকেত গ্রহণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা আছেন, তাদের মধ্যে আমরা দেখতে চাই স্বচ্ছভাবে এর বিরুদ্ধে একটি ব্যবস্থা নিয়েছেন। ডিআইজি মিজানের অপরাধের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও কেন বহাল রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছেও বিষয়টি বোধগম্য নয়, তাহলে দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় কার ওপরে আছে, কার কথায় কাজ হয় এবং চেইন অব কমান্ড বলতে আসলে কিছু নেই, সেটাই আমাদের ভেবে নিতে হবে?

এর আগে মঙ্গলবার (১১ জুন) টিআইবি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়, ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান রহমান ঘুষ দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার পরও তার স্বপদে বহাল থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘ঘুষ লেনদেনে জড়িত দুইপক্ষই সমানভাবে দায়ী। এছাড়া ‘নারী নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকার পরও তিনি স্বপদেই বহাল রয়েছেন।’’

ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কারা নেবে, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ ও এনটিএমসি) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি পুরোপুরি সচিবের এখতিয়ারে। তবে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।’

সর্বশেষ বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘুষ দাতা-গ্রহীতা উভয়কেই ধরা হবে।’ তিনি বলেন, ‘ঘুষ যে দেবে আর যে নেবে উভয়ই অপরাধী; সেটাই ধরে নিতে হবে। শুধু ঘুষ নিলে তাকে ধরা হবে, তা নয়; যে ঘুষ দেবে তাকেও ধরা হবে। কারণ, ঘুষ দেওয়াটাও অপরাধ। সেভাবেই বিচার করতে হবে। অপরাধ যারা করছে আর অপরাধে যারা উসকানিদাতা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা আমরা নিতে চাই।’ অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে
কাতারের আমিরের সফররাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে
পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট