X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজান মামলার রায় আজ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৩০আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০৬:৩০

হলি আর্টিজান বেকারি বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলা মামলার রায় আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর)। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায় ঘোষণা করবেন। মামলার তদন্ত সংস্থা এবং সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযুক্ত আট আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের দাবি- সরকার পক্ষ আসামিদের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন।
এদিকে হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে পুরানো ঢাকার আদালত পাড়াসহ রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচিত এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই দিন রাত পৌনে ৯টার দিকে সশস্ত্র পাঁচ জঙ্গি বেকারিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে যার মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, সাত জন জাপানি, এক জন ভারতীয় নাগরিক। জঙ্গিদের দমনে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। জঙ্গিরা বেকারিতে যাওয়া অতিথিদের রাতভর জিম্মি করে রাখে। পরদিন সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান- অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করে তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি করে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও একজন বেকারি শেফ নিহত হন। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হন আরও একজন বেকারিকর্মী।
আলোচিত এই ঘটনায় এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির কাছে। প্রায় দুই বছর তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিটিটিসি। অভিযোগপত্রে হামলায় মোট ২১ জনের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত সংস্থা। তবে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জনসহ অন্যান্য অভিযানে আরও আট জন নিহত হয়। এ কারণে সম্পৃক্ত ২১ জনের মধ্যে ১৩ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্র জমা হওয়ার তিন দিনের মাথায় গত বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে শুরু হয় বিচারকাজ। আদালতে ২১১ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ, স্বাক্ষীদের জেরা, ক্রস-এক্সামিনেশন শেষে আজ ২৭ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য হয়।
মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি’র অতি উগ্র অংশ যারা দেশে খেলাফত বা কথিত শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা এ হামলা চালিয়েছে। তারা নিজেদের নব্য জেএমবি’র পরিচয় দিয়ে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালায়। নব্য জেএমবি’র মূল সমন্বয়ক ও হামলার মূল পরিকল্পনকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। তার সঙ্গে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা সরোয়ার জাহান, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকলেট, তানভীর কাদেরী, রায়হানুল কবির ওরফে তারেক, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মেজর অব. জাহিদুল ইসলাম, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জল ওরফে বিকাশ, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদীসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ পরস্পর যোগসাজশ করে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। জঙ্গিরা বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হামলাটি চালায়। তারা বেকারিতে ঢুকে ৪৫ জন ব্যক্তিকে জিম্মি করে। এর মধ্যে ২২ জনকে গুলি, বোমা ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, জড়িত ২১ জনের মধ্যে সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জন মারা যায় সেনাকমান্ডো অভিযানে। তারা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ। এছাড়া হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে জড়িতদের মধ্যে আরও আট জন মারা যায়। তারা হলো, তামিম চৌধুরী (২৭ আগস্ট ২০১৬), সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান (৮ অক্টোবর ২০১৬), তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ (৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬), নূরুল ইসলাম মারজান (৬ জানুয়ারি ২০১৭), বাশারুজ্জামান চকোলেট (২৭ এপ্রিল ২০১৭), মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (২৭ এপ্রিল ২০১৭), মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম (২৭ আগস্ট, ২০১৭) ও রায়হান কবির ওরফে তারেক (২৭ জুলাই ২০১৬)।
জানা গেছে, চার্জশিটে জীবিত আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তারা হলো- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদীসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ। এদের মধ্যে রিপন ও খালিদ পলাতক ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বলেছেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই হামলাকে তারা ‘ওয়েকআপ কল’ হিসেবে বিবেচনা করে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম চালানো হয়। একের পর এক অভিযানে জঙ্গিদের সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।

 

 

/এনএল/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক