করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য তৈরি র্যাপিড কিট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনও দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। দ্রুত পরীক্ষা পদ্ধতির যথার্থতা যেহেতু এখন পর্যন্ত আস্থার সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে না, সেহেতু আমরাও সেটি নিতে চাচ্ছি না। র্যাপিড টেস্টে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফলস পজেটিভ এবং ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। সোমবার (২৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মিডিয়া সেল আয়োজিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে গণস্বাস্থ্যের করোনাভাইরাস শনাক্তের র্যাপিড কিট নিয়ে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান।
হাবিবুর রহমান খান ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফলস নেগেটেভি ও ফল পজেটিভ বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘আমার হয়তো করোনাভাইরাস নেই, কিন্তু বলা হলো আছে। তাহলে আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা কী হতে পারে ভাবেন। আবার আমার করোনাভাইরাস আছে, কিন্তু বলা হলো নেই, এতে কী হতে পারে ভাবেন।’
গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাংবাদিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্যের র্যাপিড কিট পরীক্ষারও আপাতত কোনও সুযোগ নেই। তবে ভবিষ্যতে র্যাপিড কিট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ও নির্দেশিত হলে, গণস্বাস্থ্যের কিট নিতে সরকারের কোনও আপত্তি থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ কিট পরীক্ষার বিষয়াদি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসনকে যেভাবে দোষারোপ করেছেন তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে গণস্বাস্থ্য তাদের দাবির ক্ষেত্রে কোনও প্রটোকল মেইনটেইন করেনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না রেখেই ঢালাওভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করেছে।’
ব্রিফিংয়ে ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যের একটি কিট নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা ও বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। আমি বিভ্রান্তি দূর করার জন্য চেষ্টা করবো। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বড় অভিযোগ, তারা যে কিট উদ্ভাবন করেছে, তাতে আমরা বাধা দিচ্ছি। আমি এই অভিযোগ খণ্ডন করতে চাই, কীভাবে তাদের সঙ্গে প্রক্রিয়া শুরু হলো। মার্চ মাসের ১৮ তারিখে আমাদের কাছে আবেদন নিয়ে আসা হয়। তারা র্যাপিড কিট তৈরি করতে চায়। ওই সময় কোনও দেশ র্যাপিড কিট ব্যবহার করেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দেয়নি, পরদিন ১৯ মার্চ সকালে রি-এজেন্ট আনতে আমরা অনুমোদন দেই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংবাদ সম্মেলন করেছে, আমাদের সেখানে ডাকা হয়েছিল। আমরা সেখানে যাইনি। কারণ এখনও এটি ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। এটা তো হ্যান্ডওভার হয় না। এটি যখন এপ্রুভড হবে, তখন বড় করে অনুষ্ঠান করবেন, জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠান করবেন। সে কারণে আমরা সেখানে যাইনি। আমরা নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তারা শুনেননি। তারপরেও তারা অনুষ্ঠান করেন, সেখানে প্রেস ব্রিফিং হয়, আপনার শুনেছেন। উনি (জাফরুল্লাহ) মন্ত্রণালয়, ও অধিদফতরের বিরুদ্ধে অনেক ধরনের কটূক্তি করেছেন।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান খান বলেছেন, ‘গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রকৃত পক্ষে গণস্বাস্থ্যকে সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সরকারের কোনও প্রটোকল আজ পর্যন্ত মেইনটেইন করেনি। ওষুধ প্রশাসন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরকারিভাবে বারবার পরিদর্শনে গিয়েছে এবং সে জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিনিধিগণ সরকারকে একাধিকবার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাপত্রও পাঠিয়েছে। যেগুলো তারিখসহ আমাদের কাছে রক্ষিত আছে। কিন্তু তারা যা মুখে বলেছে বাস্তবে সে কাজগুলো করেনি।’ উল্টো সরকারকে জনসম্মুখে হেনস্তা করতে নানারকম বিভ্রান্তি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।