X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনের সুবিধা ‘হাতছাড়া’ হয়েছে বাংলাদেশের!

জাকিয়া আহমেদ
০১ জুন ২০২০, ১৭:৪৬আপডেট : ০২ জুন ২০২০, ০৯:৫৪

লকডাউন ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে প্রথম দিনেই সর্বোচ্চ ৪০ জন মানুষের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোগী শনাক্তের ১৩তম সপ্তাহে এসে করোনায় সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। সঠিকভাবে লকডাউন ঘোষণা না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা, পরে লকডাউন বলা হলেও তা নিরবচ্ছিন্ন না থাকা এবং ঠিকমতো বাস্তবায়ন না করার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং সামনে আরও কঠিন সময় আসছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সবদিক থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। নমুনা পরীক্ষা যেমন বাড়ছে, শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্যত সাধারণ ছুটি কার্যকর না হওয়ার কারণে এটা হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় আনা, ঢাকা থেকে ফেরত যাওয়া, ঈদ উপলক্ষে শপিং মল সীমিত হলেও খুলে দেওয়ার ফলাফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে এখন যে সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়া হলো, এর ফলাফল পাওয়া যাবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হয় এবং প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। কিন্তু তার ঠিক এক মাস পর ২৬ এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়। এর ঠিক দুই সপ্তাহ পর থেকে সংক্রমণের দশম সপ্তাহ (১০ থেকে ১৬ মে) দেশে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি শুরু হয়। এরপর থেকে গত তিন সপ্তাহ ধরেই শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার বাড়ছে।
ঢাকা ফেরতরা ঢাকায় আসার পর অনেক মানুষ একসঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্যবিদ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'মতিঝিলের মতো ডাউন টাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খুলে দিলেও রাস্তায় মানুষের জট হবে, যা সংক্রমণ ছড়াবে। চূড়া থেকে নামার দুই সপ্তাহ পরে বোঝা যাবে চূড়া থেকে নেমেছি। আমরা রোগ সংক্রমণ কমানোর পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু বাড়ানোর কাজই করে যাচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'সংক্রমণ কমানোর পদক্ষেপ নিলে তার ফলাফল পাওয়া যাবে চার সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহ পর। কিন্তু সেটা আমরা করছি না, সংক্রমণ বাড়াবার কাজটাই করছি আমরা।'
'হোম কোয়ারেন্টিন কেউ মানেনি, সাধারণ ছুটির ভেতরে কতকিছু হলো, তাহলে লকডাউন কার্যকর হলো কেমন করে'- প্রশ্ন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ার ফল হবে ভয়াবহ। ঈদের ছুটির সময়ে যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে, ফিরে এসেছে, তাতে ১৪ দিনের ইনকিউবেশন পিরিয়ড পার হলে রোগী সংখ্যা লাফ দেবে।' তিনি আরও বলেন, 'সীমিত’ আকারে ঈদ শপিংয়ের ফলাফল পাওয়া শুরু হয়েছে, ছুটি তুলে দেওয়ার ফলাফল পেতে আরও সময় বাকি আছে।'
জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ এবং পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, 'লকডাউন যদি একটা সময় পর্যন্ত কঠিন করে রাখা যেত, তাহলে যে বেনিফিট পাওয়া যেত, সেই বেনিফিটটা আমরা মিস করে ফেলেছি। শুরুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থাতে ছিল। এতদিন ঢাকাসহ এর আশপাশের জেলাগুলোতে ৮৫ শতাংশের মতো রোগী ছিল, এটা রিলেটিভলি ভালো, কিন্তু ছড়িয়ে গেলে সামাল দেওয়া কঠিন। এখন সে সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেলো।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রাথমিকভাবে কড়াকড়ি করলে সুবিধা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু পরবর্তীতে যখন রোগী বাড়তে থাকে তখন লকডাউন করলেও ইফেক্টিভনেস কমে যায়। তবে লকডাউনের কিছুটা হলেও সুফল রয়েছে, নয়তো রোগী আরও বেশি হতো।'
ঢাকা এপি সেন্টার হওয়াকে একদিক থেকে ভালো ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এতে করে ঢাকাকে খুব ভালোভাবে কন্ট্রোল করা যেত, ঘেরাও করার মতো একটা ব্যবস্থা করা যেত। তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলকে দুই থেকে তিন সপ্তাহের কৌশলে ভাগ করে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া যেত।'
লকডাউনের ‍সুবিধা বাংলাদেশে হাতছাড়া হয়ে গেছে মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, 'লকডাউনের ‍সুবিধা বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে গেছে। তারপরও পালন করা হচ্ছিলো বলেই কিছুটা এই অবস্থায় ছিল, এখন আউটবার্স্ট হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রথম থেকে সাধারণ ছুটির কথা বলা হলেও আমরা লকডাউন হিসেবেই চেষ্টা করেছি, কেউ যেমন মানেনি তেমনি অধিকাংশই মেনেছে। অনেক দেশের তুলনায় মৃত্যু সংখ্যা কম ছিল এবং শনাক্তের সংখ্যাও কম ছিল। কিন্তু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর এই তিন জেলাকে কঠোরভাবে লকডাউন করা হলে ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কারণ, এসব এলাকায় শুরু থেকে রোগী সংখ্যা বেশি শনাক্ত হচ্ছিলো, কিন্তু সেটা করা যায়নি। তারই ফলাফল এখন রোগী শনাক্তের হার।'
একটানা যদি কঠোরভাবে ৪০ দিন লকডাউন থাকতো তাহলে আমাদের ‘সিচুয়েশন’ অনেক ‘ফেভার’-এ থাকতো বলে জানান চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী আতিক আহসান। তিনি মনে করেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর দফায় দফায় মানুষ বাইরে গেছে, পোশাক শ্রমিকরা ঢাকায় এসেছে, ফিরেছে। আর এখন যেটা পরিস্থিতি, সেটা ঈদের ছুটির ‘ইফেক্ট’ না, তার আগের ইফেক্ট। আর আজ যে ছুটি তুলে দেওয়া হলো, তার ইফেক্ট দেখা যাবে ১৮ জুনের দিকে, আবার ঈদের ছুটির ফলাফল দেখা যাবে ১০ জুনের দিকে। আর তখন যেটা দেখা যাবে, সেটা হবে বর্তমান রোগী শনাক্ত এবং মৃত্যুর চেয়ে অনেক বেশি। আমরা যে স্টেজ পার করলাম, যে ‘অপরচুনিটি’ হাতছাড়া হয়ে গেল, তাকে ফেরত পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই বলেও জানান আতিক আহসান।

/জেএ/এএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম