X
রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

উপসর্গ দেখেই চিকিৎসার পথে সরকার

জাকিয়া আহমেদ
২৯ জুন ২০২০, ১০:০০আপডেট : ২৯ জুন ২০২০, ১০:০০

করোনা পরীক্ষা

করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্বারোপ করলেও বাংলাদেশ পুরোপুরি সে দিকে যেতে পারছে না। শুরুতে দেশের একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হলেও এখন ৬৬টি পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এটি বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত নয়। মানুষ পরীক্ষা করাতে পারছে না, নমুনা দিতে পারলেও রিপোর্ট পাচ্ছে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন পর। রিপোর্ট না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এই অবস্থায় সরকার উপসর্গ দেখে চিকিৎসার পথে এগোচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, শুরুতে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানে করোনার পরীক্ষা করা হলেও বর্তমানে ঢাকা এবং এর বাইরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ল্যাবরেটরি আরও বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। করোনা সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'যেকোনও মূল্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর জন্য সবার্ত্মক চেষ্টা করতেই হবে।'

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা রবিবার (২৮ জুন) দুপুর আড়াইটাই স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৪৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৭৩৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৯৯টি। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৮০৯ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ০৫ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪০৯ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হলেন ৫৫ হাজার ৭২৭ জন। শনাক্ত বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় স্বল্প মেয়াদে পাঁচ লাখ টেস্টিং কিট সংগ্রহ করা জরুরি বলে মনে করে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি তাদের সুপারিশে বলে, করোনাভাইরাস শনাক্তে টেস্ট আরও বাড়ানো দরকার। যে জায়গাগুলোতে এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেখানে টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে এবং টেস্টের জন্য স্থানও বাড়াতে হবে; যাতে আক্রান্তরা দ্রুত শনাক্ত হন। বর্তমানে শুধু করোনার উপসর্গ নিয়ে আসাদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কমিউনিটিতে যেসব মানুষের উপসর্গ আছে, কিন্তু রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আসছেন না, তাদের খুঁজে বের করে টেস্ট এর আওতায় আনতে হবে।'

গত ৭ জুন অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, এখন থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

রোগীদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার কারণে ভোগান্তি এবং ভিড়ের জন্য রোগের সংক্রমণের বিস্তার রোধের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিভার ক্লিনিক এবং কোভিড-১৯ ডায়াগনস্টিকের অ্যাপয়েন্টমেন্টও করা হয়েছে অনলাইনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ক্রমেই পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার জন্য মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। অনেকে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেও নমুনা দিতে পারছেন না। ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে। আবার পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে পারলেও সে ফলাফল পেতে এমনও হয়েছে রোগী কিছুটা সুস্থ হয়ে গেছেন, আবার তার অবনতি হয়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে তাই চিকিৎসকদের বলা হয়েছে করোনার উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।'

উপসর্গ দেখে করোনার চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'কোটি কোটি মানুষের কী আপনি টেস্ট করতে পারবেন? এটা সম্ভব হয়? আমরাতো টার্গেটেড টেস্ট করি। যেখানে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, মানুষর মধ্যে লক্ষণগুলো তীব্র, তাদের টেস্ট করানো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, যার প্রয়োজন নেই সেও টেস্ট করতে আসছেন। এত টেস্ট করা সম্ভব নয় এবং করাও যাবে না।'

তিনি বলেন, 'শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের লক্ষণ ‍থাকে না এবং তাদের হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হয় না। এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়।'

জাহিদ মালেক বলেন, 'যাদের লক্ষণ মৃদু তাদের বাসায় থাকার জন্যই পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে তারা আমাদের লিস্টে থাকে এবং আমাদের ফলোআপে থাকে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে তাদের সেবা দেওয়া হয়।'

তবে টেস্ট না করে উপসর্গ দেখে চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'অনেকের তো তীব্র লক্ষণ থাকার পরও কোভিড-১৯ পজিটিভ হয় না, তাহলে তাদের কীভাবে চিকিৎসা করা হবে। একইসঙ্গে যখন কেউ সুস্থ হয়ে যাবেন তখন তার পরীক্ষা না হলে কেমন করে বোঝা যাবে তিনি কোভিডমুক্ত ছিলেন কিনা।'

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, 'টেস্টতো সবাইকে করা যাবে না। লক্ষণ দেখা দিলেই তাদের তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশন করতে হবে। তার সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। টেস্টের আশায় বসে থেকে সংক্রমণ বাড়ানো যাবে না।'

আর এ জন্য কমিউনিটিতে হেলথ ওয়ার্কারদের কাজে লাগাতে হবে মন্তব্য করে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, 'গ্রাম থেকে শহরে কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের নিয়ে আসতে হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাতে ঘরে ঘরে তাপমাত্রা মেপে তাদের শনাক্ত করতে হবে, আইসোলেশনে নিতে হবে।' প্যান্ডেমিক বাড়লে এছাড়া কোনও উপায় নেই বলে জানান ডা. মুশতাক হোসেন।

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপকূলে ‘মে আতঙ্ক’
উপকূলে ‘মে আতঙ্ক’
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ মে, ২০২৪)
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’: ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’: ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ
ড্রয়ে লিগ শেষ রিয়ালের, ক্রুসের অশ্রুসিক্ত বিদায়
ড্রয়ে লিগ শেষ রিয়ালের, ক্রুসের অশ্রুসিক্ত বিদায়
সর্বাধিক পঠিত
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
ব্যক্তি পর্যায়ের কর হার বাড়বে
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
‘তুফান’র গানে প্রীতম, আছেন পর্দায়ও!
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ
রঙমিস্ত্রি থেকে যেভাবে এমপি আনার হত্যায় জড়ায় জিহাদ
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলেন কেএসআরএমের ১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী