বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বরে রাখা প্লেস বোর্ডে এনাম নামের এক শিক্ষার্থী লিখলেন ‘রামপাল চাই না, বাঘ চাই’। শাকিল নামের এক ক্ষুদে শিক্ষার্থী কাঁচা হাতের বানানে লিখলো ‘যারা বাঘ শিকার করে তাদের বিচার চাই’। ঘন্টাখানেকের মধ্যে এরকম আরও নানা মন্তব্যে ভরে গেল বোর্ডটি। সবার মন্তব্যে একই আকুলতা- ‘সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা করতেই হবে।’
পাশেই দর্শকরা উপভোগ করছিলেন পথনাটক- ‘বাঘ এসেছে’। সেখানে অভিনয়ের মাধ্যমে বাঘ রক্ষায় নানা সচেতনতামূলক বার্তা দিলেন ওয়াইল্ড টিমের সদস্যরা।
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল ‘টাইগার ক্যারাভ্যান’। ‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ সুরক্ষা করব’ এই স্লোগানকে ধারণ করে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমটি চলবে আগামী দুই বছর পর্যন্ত। ঘুরবে সারাদেশের ১০০ টি স্থান। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা- ইউএসএআইডির অর্থায়নে বন বিভাগের পরিচালনায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে বন্যপ্রাণি বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড টিম।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে বাঘের আদলে তৈরি ‘টাইগার ক্যারাভ্যান’ বাসটি। ভেতরে বাঘ, হরিণ, কুমির ও গাছপালার ভাস্কর্য। যেন এক টুকরো সুন্দরবন!
দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বরে শুরু হয় পথনাটক ও নানা প্রদর্শনী। পথনাটকে বাঘের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ওয়াইল্ড টিমের এক সদস্য তুলে ধরেন সুন্দরবনে বাঘের সংকটাপন্ন অবস্থা। কেউ বনরক্ষী, কেউ শিকারী আর কেউবা সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের সামনে হাজির করেন সুন্দরনের ভেতরের পরিস্থিতি। পথনাটক থেকে বাঘ তথা সুন্দরবন রক্ষায় যে কোন অভিযোগ জানাতে দেওয়া হয় হটলাইন নাম্বার- ০১৭৫৫৬৬০০৩৩।
সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। প্রদর্শিত পথনাটকের বিভিন্ন দৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিজয়ী হন ১৮ শিক্ষার্থী। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বাঘ সুরক্ষার সচেতনতামূলক ছবি সম্বলিত টি-শার্ট, নোটবুক ও স্পাউস। আবার এই ১৮ জন বিজয়ীর মধ্য থেকে সালমান নয়ন নামের এক শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় ’টাইগার হিরো’ উপাধি।
‘আই স্ট্যান্ড ফর টাইগার’ ইংরেজিতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে গেলেন ‘টাইগার ক্যারাভান’র সামনে। কেউবা সেলফি তুললেন ‘বাঘ মামা’র সাথে। হ্যাশট্যাগ ক্যাপশনে ছবিগুলো ঘোরাঘুরি করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বাঘ সুরক্ষার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জার্নালিজম এ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই বাঘ বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সকলের। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলের সচেতন হতে হবে।’
এপিএইচ/