X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘অসাধারণ’ পোস্টমর্টেমে কতদিন লাগে?

উদিসা ইসলাম
৩০ মার্চ ২০১৬, ০৭:৩৯আপডেট : ৩০ মার্চ ২০১৬, ২০:০২

এজিবি কলোনির ঘটনায় নিহত রুনা ও তার পরিবার সাধারণত একটি লাশের পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) প্রতিবেদন তৈরি করতে সাত দিনের বেশি সময় লাগার যৌক্তিক কারণ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে জটিল কোনও মামলার ক্ষেত্রে রাসায়নিক পরীক্ষায় কিছু বাড়তি সময় লাগতে পারে। এই বাইরে সময় লাগলে বুঝতে হবে তা ইচ্ছাকৃত এবং মামলাকে প্রভাবিত করার মতো কারণ আছে। আর পাঁচ মাসেও যদি কোনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি না হয়, তবে তা অবশ্যই ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে গণ্য হওয়া জরুরি।
ময়নাতদন্ত চিকিৎসকরা বলছেন, যে মামলাগুলো দ্রুত আদালতে যাবে বলে মনে হয়, সেগুলোর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমরা গুরুত্বের সঙ্গে আগে দিয়ে দিই। তাছাড়া পুলিশ একটু তাগাদা দিলে হত্যা ও অপমৃত্যুর মামলায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সাধারণত দেরি হয় না।
আইনজীবীরাও বলছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে সময়ের কোনও ধরা বাঁধা নিয়ম মানা না হলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
তবে বাস্তবতা হলো, গত পাঁচ মাসেও তৈরি হয়নি এজিবি কলোনিতে বখাটেরদের বাইকের চাকার নিচে হত্যাকাণ্ডের শিকার রুনা আক্তারের (২৬) মামলার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন।
ময়নাতদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারণ’ মামলায় এতোদিন লাগার কথা না।
‘অসাধারণ’ মামলাও আছে নাকি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেগুলোর সঙ্গে উঁচু লেভেলের কেউ জড়িত সেগুলো ‘অসাধারণ’ মামলা। এসবের প্রতিবেদন কবে হবে কেউ জানে না।
দিনের পর দিন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত না হলে আদালত কিছু বলেন কিনা, এ প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, আদালতে নানাভাবে সময় চাওয়া হয়। অনেকসময় প্রতিবেদন প্রস্তুত থাকলেও তা হাজির যেন না হয় সে ব্যবস্থা করারও নজির আছে।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর মতিঝিল এজিবি কলোনিতে বখাটেদের বাইকের চাকার নিচে প্রাণ হারান গণপূর্ত বিভাগের হিসাব সহকারী রুনা আক্তার (২৬)। রুনাকে ওড়না টেনে রাস্তায় ফেলে তারপর শরীরে মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে  চাকায় পিষে পালায় বখাটেরা। এখন পর্যন্ত মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। মতিঝিল থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র কুণ্ড মামলা নেওয়ার পরবর্তী ১৫ দিন নানাভাবে ছুটিতে থাকার কথা জানালেও মঙ্গলবার মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনও আসেনি, তদন্ত চলছে।
মামলা বিষয়ে কী বুঝছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না। আর মামলার পরিস্থিতি কী তা নিয়ে আমি কী বলব?
কেন বলতে পারবেন না- প্রশ্নে দুলাল বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলে বাকি কাজ হবে।
এটা খুব জটিল কোনও ময়নাতদন্ত কিনা- জানতে চাইলে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ৫ মাস সময় লাগার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। এর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে।

জনিয়া নিহতের ঘটনায় জনতার বিক্ষোভ
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কখনও কখনও অভিযোগ থেকে দ্রুত অব্যাহতি দিতেও ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ আছে। রাজধানীর কাফরুলে মার্চের প্রথম সপ্তাহে ন্যাম গার্ডেন অফিসার্স কোয়ার্টারে কিশোরী গৃহকর্মী জনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর পর হত্যার অভিযোগ উঠলেও আদালত থেকে হত্যামামলা করতে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপমৃত্যু মামলা রাখা হয়। যে মামলায় আদালতের আদেশের পর হত্যামামলা নিতে বাধ্য হলো পুলিশ, সে ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাজির হয়েছে। যেখানে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি এবং উপর থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ আছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। এখন তাকে কেউ ফেলে দিয়েছে নাকি সে স্বেচ্ছায় লাফ দিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।
যদিও নিহতের বাবা ওসমান গণি অভিযোগ করে বলেন, জানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ওরা (গৃহকর্তার পরিবার) ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। এখন সে লাফ দিয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদন এলেও আমাদের কিছু করার নেই। জনিয়া রাজধানীর কাফরুলের সরকারি কোয়ার্টার ন্যাম গার্ডেনে ৩ নম্বর ভবনের ৪র্থ তলায় যুগ্ম সচিব আহসান হাবিবের বাসায় গৃহর্কমী হিসেবে কাজ করতো।
সর্বশেষ কৃষ্ণকলি ও খালিকুর রহমানের বাসায় তাদের গৃহকর্মীর মৃত্যু ঘটায় খালিকুরকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন মঞ্জুর না করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন না দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
কেন এই দীর্ঘদিনের অপেক্ষা এবং এর বিপরীতে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, দীর্ঘদিন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়ার বিষয়টা ইচ্ছাকৃত। কোনও কোনওটা হুটহাট দিয়ে দেওয়া হয়, কোনওটা আবার ঝুলিয়ে রাখা হয় অযৌক্তিকভাবে। ময়নাতদন্ত কেন ৫ মাসেও সম্পন্ন হয়নি সেটা জানতে চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা যেতে পারে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ড. সোহেল মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদেরকে ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া এবং সারাদেশে মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার পর প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে হয়। রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হলে সামান্য দেরি হয়। তবে সেটা ৫ মাস একেবারেই হওয়ার কথা না।
তিনি বলেন, পুলিশ কোনটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটাও একটা বিবেচনার বিষয় হিসেবে কাজ করে। সংবেদনশীল মামরা হলে আমরা কখনওই দেরি করি না।
/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা