X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার কারাবাসের তিন মাস, অপরিবর্তিত বিএনপির কর্মসূচি

আদিত্য রিমন
০৮ মে ২০১৮, ০৮:৩১আপডেট : ০৮ মে ২০১৮, ১২:১৪

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করাবাসের তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ৮ মে। এদিন সুপ্রিম কোর্টে তার জামিন শুনানির কথা রয়েছে। তবে তার জামিন হওয়া না হওয়া নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে কোনও পরিবর্তন আসছে না। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, যেভাবে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়ে আসছে আগামীতেও সেই ধারা বজায় থাকবে। সহসাই কর্মসূচির ধরন পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও বিএনপি নেতারা গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে এবং ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা শুরু থেকে আশা করে আসছি, এখনও করছি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। কারণ এ মামলার কোনও ভিত্তি নেই। সরকার রাজনৈতিক কারণে তাকে সাজা দিয়েছে এবং আটকে রেখেছে।

তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন থাকলে আমাদের চেয়ারপারসন নিশ্চয়ই জামিন পাবেন। সরকার প্রতিহিংসাবশত তাকে জামিন না দিলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি। আগামীতেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। তবে বাস্তবতাই বলে দেবে কখন কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে গত তিন মাসে কয়েক দফায় বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এগুলো মূলত স্বাক্ষর সংগ্রহ, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, স্বারকলিপি প্রদান ও ঘরোয়াভাবে সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় সমাবশ করেছে দলটি। তবে এই তিন মাসে ঢাকা ছয় বার সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশে করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে গত রবিবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি। দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রয়োজন হলে আগামীতে বিএনপির কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ম্যাডামের জামিন না দেওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। এসব মামলায় সাধারণভাবে জামিন হয়ে থাকে। তা না হলে এটি নজিরবিহীন হবে। এরপর যদি জামিন না হয়, তাহলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী সিনিয়র নেতরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন আগামী দিনের আন্দোলনের কৌশল কী হবে।

তিনি আরও বলেন, তবে এ মুহুর্তের বাস্তবতা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এরপর বাস্তবতা অনুযায়ী কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে হবে।

আগামী দিনের আন্দোলনের ধরন ঠিক করতে গত ৪ মে এক যৌথ সভায় মিলিত হন বিএনপি নেতারা। সেখানে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্ঠা পরিষদ, সম্পাদকমণ্ডীর সদস্যদের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আন্দোলন নিয়ে দুই ধরনের মতামত আসে। একটি পক্ষ মনে করে, এখনই কঠোর আন্দোলনে যাওয়া উচিত। অন্য পক্ষের মতামত, চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরও কিছু দিন চালিয়ে নিয়ে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহুর্তে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। তাহলে সেই আন্দোলন নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া যাবে। কারণ চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরও সারাদেশে ব্যাপক হারে গ্রেফতার হচ্ছে নেতাকর্মীরা। আর এ মুহুর্তে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হলে সরকারের হামলা-মামলা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে নেতাকর্মীরা। ফলে নির্বাচন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা তাদের মতামত নিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা এ বিষয়ে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপি সূত্র জানা গেছে, রবিবার গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর দলের সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে মিছিল, গণমিছিল, মানবপ্রাচীর ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে জনসভার মতো বিষয়গুলো তাদের আলোচনায় উঠে আসে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আমাদের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। আগামীতে আরও কর্মসূচি আসবে। নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়।

দলটির নেতারা বলছেন, ৮ মে খালেদা জিয়ার শুনানির দিন সারাদেশে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন যদি জামিন হয় তাহলে আনন্দ মিছিল হবে। আর জামিন না হলে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ মিছিল করা হবে। এরপর দলীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলনে করে চেয়ারপাসনের মুক্তির দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মনে করছেন, মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার জামিন না হলে দলটির উচিত হবে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বাইরে নতুন কোনও কৌশল বের করা। যাতে তার মুক্তি আন্দোলনকে তরান্বিত করা যায়। তবে সেটা অবশ্যই অহিংস কিন্তু ফলপ্রসূ হতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউন’কে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রত্যাশা খালেদা জিয়ার জামিন হবে। যদি তা না হয় তাহলে নিশ্চয় দলটির সিনিয়র নেতারা চলমান আন্দোলনের বাইরে নতুন কোনও কৌশল বের করবেন।

চলমান আন্দোলনে অবশ্য পরিবর্তন চান দলটির জেলা পর্যায়ের নেতারাও। কারণ তারা মনে করেন, এ আন্দোলন দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে এ মুহুর্তে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে নয় তারা। কারণ সামনে রোজা, এরপর ঈদ। এখন কঠোর আন্দোলনে গেলে সাধারণ মানুষ সাড়া দেবে না। তাই ঈদের পরে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাছের রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে দেশনেত্রীকে কারাবন্দি করে রেখেছে। তাকে মুক্তি করতে হলে চলমান আন্দোলন পরিবর্তন করতে হবে। তবে সেটা ঈদের পর হলে ভালো হবে।’

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা ভালো বলতে পারবেন, এ আন্দোলন দিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে কি-না। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা পালন করবো। তবে আমি মনে করি, কর্মসূচি পরিবর্তন হওয়া দরকার।’

 

/এমপি/আপ-এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ