X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর বিএনপি, নির্বাচিতরা সিদ্ধান্তহীন

সালমান তারেক শাকিল ও আদিত্য রিমন
২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:০৩আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৫৬

বিএনপি`র লোগো

ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ ঠেকাতে দলটির হাইকমান্ড কঠোর হলেও এখনও সিদ্ধান্তহীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী চার প্রার্থী। শনিবার (২৭ এপ্রিল) মধ্যরাত নাগাদ তারা নিশ্চিত হতে পারেননি, কী করবেন। এরমধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থীর দাবি, কোনও একটি পক্ষের চাপ অব্যাহত থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে দোটানায় পড়েছেন তিনি।

জানা যায়, ২৫ এপ্রিল দুপুরে হঠাৎ করেই সংসদে গিয়ে হাজির হন জাহিদুর রহমান। এরপর বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি শপথ নেন। জাহিদুর রহমান চারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন একবার। এরপরই বিপাকে পড়ে বিএনপি। দিনভর বাসায় অবস্থান করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত দুইদিনে দলে আলোচনা ছিল- নেতৃত্বের প্রভাব বিএনপিতে কমতে শুরু করেছে। না হলে চেইন অব কমান্ড না মেনে দলের সংকটকালে শপথ কেন নেবেন জাহিদুর রহমান। বিষয়টিতে ধাক্কা খায় বিএনপি।

এমনকি দলটির রাজনীতির গভীর পর্যবেক্ষক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদও বলেন, ‘এটা নিয়ে কী বলবো, বুঝতে পারছি না। দেখি দল কী সিদ্ধান্ত নেয়?’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। এদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে অংশগ্রহণ করেন তারেক রহমান। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের শপথ ঠেকাতে ডাকা হয় আইনজীবীদের। জানতে চাওয়া হয়, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক কী করণীয়। আলোচনা হয়, স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থীদের শপথ বাতিল করতে চিঠি দেওয়ার। পুরো বিষয়গুলোর আইনি দিকগুলো খুঁজে দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনজীবীদের।

বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্য হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ। জাহিদ শপথ নেওয়ার পর বিএনপির নেতারা সন্দেহ করছেন- হয়তো রবিবার বা সোমবার শপথ নিতে আরও দুইজন নির্বাচিত প্রতিনিধি সংসদে হাজির হতে পারেন।

স্থায়ী কমিটির একজনের ভাষ্য, ‘দলকে মূল্যায়নের সময় নিশ্চিতভাবেই প্রার্থীদের উপর বাড়তি নজর থাকবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা শপথ নেবেন তাদেরকে তো বহিষ্কার করা হবে। একই সঙ্গে ওই এমপির পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বিএনপির দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।

দলীয় আইনজীবী ও স্থায়ী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমানের সদস্য পথ বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা। এর জবাবে আইনজীবী বলছেন, বিএনপি যেহেতু সংসদে নেই, ফলে এই ধারা অনুযায়ী কোনও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না।

বৈঠক সূত্র জানায়, জাহিদুর রহমানসহ আরও কেউ শপথ নিলে তাদের সদস্য পদ বাতিল করতে সংসদের স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবে বিএনপি। এরপর প্রয়োজন হলে কোর্টেও যেতে পারে বিএনপি। এই চিঠি তৈরির জন্য দলের সিনিয়র আইনজীবীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির প্রভাবশালী একজন ভাইস চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি নির্বাচিত চার সংসদ সদস্য যেন শপথ না নেয় তা তাদেরকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে।

আগামী ২৯ এপ্রিল শেষ হচ্ছে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার সুযোগ। এর মধ্যে স্পিকার বরাবর সময় বাড়ানোর কোনও আবেদন না করা হলে নির্বাচিতদের আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করা হবে। বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে দু’জনের নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিজয়ী হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ত্রিশ তারিখ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচিত আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তেই আছি এখনও। কোনও কিছুই চূড়ান্ত নয়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আবদুস সাত্তার কোনও মন্তব্যেই নারাজ। তার ভাষ্য, ‘কোনও মন্তব্য করতে পারবো না।’

বিএনপির প্রার্থীদের শপথগ্রহণের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। বিএনপির সঙ্গে একই কথা আছে। এ কারণে নতুন করে কিছু বলার নেই।’

এদিকে, আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনকে। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আইনজীবীদের বৈঠকটি হয় সিনিয়র নেতাদের বৈঠকের আগে। এ বৈঠকে জয়নাল আবেদীন, ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

তরুণ একজন আইনজীবী জানান, হঠাৎ করে জয়নাল আবেদীনের কাছে মামলার দায়িত্ব দেওয়ায় আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দায়িত্ব এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি। এই মামলাতে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ বছরের সাজা খাটছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

/টিটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়