X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

রাঙ্গার বক্তব্য ব্যক্তিগত, দায় নেবে না জাতীয় পার্টি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ নভেম্বর ২০১৯, ২০:০০আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২১:১৭

জাতীয় পার্টি

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার দেওয়া বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে জানিয়েছেন দলটির দুই সংসদ সদস্য। ওই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত ও দুঃখিত উল্লেখ করে তারা বলেন, এটা তার (রাঙ্গা) নিজস্ব বক্তব্য। এটা কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়, এই বক্তব্য দল সমর্থন করে না। দল এর দায়িত্ব নেবে না।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নু একথা বলেন। এর আগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা রাঙ্গার ওই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে সংসদে তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন।

শহীদ নূর হোসেন ও গণতন্ত্র নিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গার দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের বক্তব্য দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তার বক্তব্য ভাইরাল হয়ে গেছে। তবে এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়। এটা কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে। ওই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত, আমরা দুঃখিত এবং আমরা এর জন্য অপমানিতবোধ করছি। আমরা মনে করি, এটা জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়, জাতীয় পার্টি এই বক্তব্য সমর্থন করে না। নূর হোসেন সম্পর্কে তিনি যেটা বলেছেন তা আমরা গ্রহণ করি না। আমাদের দল এটা গ্রহণ করে না। আমরা ঘৃণাভরে এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য, দল এর দায়িত্ব নেবো না।’

নব্বইয়ে নূর হোসেন জীবন দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য তার জীবন দিতে পারেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে সংগ্রাম করতে পারেন, সেই সাহসী যুবকের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা কখনোই এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখাইনি। এ ধরনের কথা উচ্চারণ করিনি। কোনও রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্য এটা হতে পারে না।’

মসিউর রহমান রাঙ্গার সমালোচনা করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একটা কথা আছে, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। এই লাই আমরা দেইনি। এই সংসদ তাকে লাই দিয়েছে। কী ধরনের ব্যক্তিত্ব; যার অতীত নেই-বর্তমান নেই। কিছুই ছিল না। হঠাৎ তাকে মন্ত্রী বানানো হলো। আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম। তিনি বিরোধী দলের চিফ হুইপ। আমি বললাম, তাজুল ইসলাম চৌধুরী (সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ) মারা গেছেন, আমি বক্তব্য রাখবো। তিনি বললেন, আপনারটা আপনি দেখবেন, আমি কেন নাম পাঠাবো? আমার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বললেন। আমি যতদিন ধরে রাজনীতি করি, তার বয়সও ততদিন হবে না। তিনি কোথায় আন্দোলন করেছেন? কোথায় সংগ্রাম করেছেন? তিনি যুব দলের নেতা ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলার ধৃষ্টতা তিনি কোথায় পেলেন? প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে কথা বলেছেন। গণতন্ত্রের ছবক দেন। লেখাপড়া জানে না, আবার কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহন শ্রমিক হয়ে হঠাৎ বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছেন। ধৃষ্টতা দেখান তিনি। আর তার জবাব দিতে হয় আমাদের। আসামিদের কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড়াতে হয়। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমরা দুঃখিত।’

রাঙ্গাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘লজ্জা করে না এসব কথা বলতে? আমরা তো আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছি। আজকের প্রধানমন্ত্রী সেদিন যদি আমার পরিচয় করিয়ে না দিতেন, আমাকে যদি ভোট না দিতেন, নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে আসতে পারতাম না। রাঙ্গা সাহেব! মানুষ এত অকৃতজ্ঞ হয় কীভাবে? পেছনে যদি আওয়ামী লীগ না থাকতো, ওই রংপুর নামতেও পারতেন না। কার কয়টা ভোট আছে তা আমাদের জানা আছে। দেশের মানুষ মনে করেন, যতদিন শেখ হাসিনা আছেন, ততদিন গণতন্ত্র টিকে থাকবে। দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে। উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান এখানে আছেন। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে গতরাতে আমার কথা হয়েছে। মসিউর রহমান রাঙ্গা যে বক্তব্য দিয়েছেন, এই বক্তব্য জাতীয় পার্টি গ্রহণ করে না। এটা একান্তই ব্যক্তিগত। ওই বক্তব্য তিনি কেন দিয়েছেন, এই সংসদের সদস্য হিসেবে সংসদেই মসিউর রহমান রাঙ্গা তার ব্যাখ্যা দেবেন।’

শহিদ নূর হোসেন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নূর হোসেন মারা যাওয়ার পর জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তার বিষয়ে এটাই ছিল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের দলের কেউ তার বিষয়ে কিছু বললে সেটা এই দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে। এটা তার ব্যক্তিগত মতামত। এর দায়-দায়িত্ব তার।’

সরকারি দল আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমাদের অনেক দোষ আছে। তবে ’৯৬ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা করে আসছি। এটা তো ঠিক? ২০১৪ সালে যখন অগণতান্ত্রিক সরকার আসার চিন্তাভাবনা করেছিল, তখন আমরা জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে মিলে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করেছি। এটা কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে।’

 

/ইএইচএস/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল