নৌকার টিকিট নিয়ে চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমার মুখ খোলাবেন না। মুখ খুললে সরকারের অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি আপনাদের (আওয়ামী লীগের) সঙ্গে আছি। আমাকে সাইজ করার চেষ্টা করলে নিজেরাই সাইজ হয়ে যাবেন।’
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের শাহ সুফি সৈয়দ শফিউল বশর (ক.) মাইজভান্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরিফ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও এই আসনে নজিবুল বশরকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নজিবুল বশরের দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এর সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ঋণের ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাহফিলে নজিবুল বশর বলেন, ‘আমি দুদকের মামলার বিরুদ্ধে রিট করবো। দুদকের মামলার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করবো, কারণ আমরা পরিষ্কার। আমি এবং আমার ছেলের জন্য মাইজভান্ডার দরবার শরিফ কলঙ্কিত হবে, তার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। দুদক মাইজভান্ডার ও তরিকত বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।’
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালককে উদ্দেশ করে নজিবুল বশর আরও বলেন, ‘৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরে জমা দিয়ে দিলে আর আত্মসাৎ হয় নাকি? ৬৫ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে, দুদক কর্মকর্তা তা গোপন করেছেন। দুদক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে চেনে নাই।’
সরকারের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই উল্লেখ করে নজিবুল বশর বলেন, ‘আমি ১৪ দলীয় জোটে আছি এবং থাকবো। তারা এখনও নজিবুল বশর কে, তা চেনে নাই। আমার জন্য অনেক দেশ কথা বলবে, বিএনপিকে ঘরে ঢোকানো সম্ভব, নজিবুল বশরকে নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সিট আমি ঠিক করি। সরকারও তা জানে। কওমিদের সঙ্গে গণ্ডগোলের সময় আমি সরকারকে সহযোগিতা করেছি। আগামী নির্বাচনেও এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হবো। আমি ভেসে আসি নাই। মাইজভান্ডারের দিকে যারাই অসৎ উদ্দেশ্যে হাত দিয়েছে, তাদের হাত পুড়ে গেছে। মুখ খুললে সরকারের অসুবিধা হয়ে যাবে। আমার মুখ খোলাবেন না। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।’
এদিকে, নজিবুল বশরের এমন বক্তব্যে ফটিকছড়িতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মাহফিলে সরকারকে নিয়ে নানা বিষোদগার করেছেন, তা আমি ফেসবুকে দেখেছি। তার বক্তব্য শুনেছি। এলাকার লোকজনও আমাকে এ নিয়ে কথা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ফটিকছড়ি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসন থেকে আমার নির্বাচন করার কথা ছিল। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। উল্টো বিষোদগার করছেন। তার দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। আর নজিবুল বশর বলছেন, এ মামলা সরকার করিয়েছে।’
ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মহুরি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সরকার ও দুদককে নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তা আমি ফেসবুকে শুনেছি। অবশ্যই তার এসব কথা আমরা আমলে নিইনি। বিষয়টি হচ্ছে দুদক মামলা করেছে তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে। এখন আদালত এবং দুদকের মুখোমুখি হবেন তারা। যদি অর্থ আত্মসাৎ না করেন সেটা প্রমাণ করবেন। প্রমাণ করতে না পারলে শাস্তি পাবেন। এখানে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তো লাভ নেই। তিনি তরিকত ফেডারেশনের হলেও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই কথা তার ভুলে গেলে চলবে না।’