সরকারকে চাপে রাখার মতো কোনও আন্দোলন বিএনপি করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যর্থ অপজিশন, এত ব্যর্থ বিরোধী দল আর আসেনি। এই ব্যর্থতার জন্য বিএনপির টপ টু বটম সব নেতার পদত্যগ করা উচিত।’ শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম, মওদুদ আহমদ, মোশাররফ হোসেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইক দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে আওয়াজ দিলেই কি সরকার হটে যাবে? এই সরকারের গণভিত্তি খুবই শক্তিশালী, এই সরকারের গণভিত্তি বাংলাদেশের মাটির অনেক গভিরে প্রথিত। আমাদের শেকড় অনেক গভীরে। আমরা হঠাৎ এসে জনসমর্থহীনভাবে সরকারে আসিনি। এটা যেন তারা ভুলে না যান।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের বিএনপি যে দাবি বিএনপি তুলেছে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে, এই দু’টি দাবিই সংবিধান সম্মত নয়। প্রথম বিষয়টি সংবিধানসম্মত নয়।আর দ্বিতীয় বিষয়টি আইনি বিষয়। তারা যদি মামলা মোকাবিলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে, ওয়েলকাম। সরকার যদি বাধা দিতো, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোনও প্রভাবিত করতে চাইতো, তাইলে খালেদা জিয়া এত মামলা থেকে জামিন পেতেন না। প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, সরকার যদি হস্তক্ষেপ করতো তাহলে কিভাবে এসব মামলা থেকে জামিন পেলেন।’ তিনি বলেন, ‘সেই মামলার জন্যও আপনারা আইনি প্রক্রিয়া যান, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না।’
আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়—মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মওদুদ আহমেদের কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তারা যেসব দাবি সংবিধান বাইরে গিয়ে মেনে নেওয়ার দাবি করেছেন। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে, এটা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব। মওদুদ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন, তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছরের দখল করা বাড়িটা রক্ষ করতে পারেননি। তার পক্ষে এ ধরনের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না।’
খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজপথে সরকারে দশ বছর হয়ে গেলো, এই দশ বছরের বারবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সবই সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক ছোটখাটো আন্দোলনের ডাক নয়, খালেদা জিয়াও সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, এর সঙ্গে বাস্তবতা কতটুকু, এটা আপনারা জানেন। দশ বছরে একটি দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোন আন্দোলন বিএনপি নামক বিরোধী দল করতে পারেনি।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে বিএনপির কেন ভয়, সেটা আমরা বুঝে ফেলেছি। বিএনপির ভয় হচ্ছে ইভিএমে ভোট হলে বিএনপি আর কেন্দ্র দখলের পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না, ভোট জালিয়াতির কথা বলতে পারবে না। ভোট কারচুপির কথা বলতে পারবে না। বিএনপি আর পোলি এজেন্টদের বের করে দেওয়ার পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না, এ কারনেই বিএনপি ইভিএম চায় না।’
বিএনপির প্রতি সেতুমন্ত্রীর তিন প্রশ্ন
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডিমনিটি অধ্যাদেশ জারি এবং এরপর এই অধ্যাদেশকে ৫ম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করার কী ব্যাখ্যা জাতির সামনে আছে বিএনপির? এটা আমি জানতে চাই।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবল প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার যে কাজটি তারা করেছেন এর ব্যাখ্যা কী?
তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, তরিঘড়ি করে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আট দিন আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে কেন ৭ ধারা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে?
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা নিতে শুরু করেছি। এ মাসেই আমাদের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করবো। জোট নিয়েও আমরা পরোক্ষভাবে আলাপ আলোচনা করেছি। যারা আমাদের এত দিনের শরিক তাদের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
