২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষভাগ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার সুযোগ রয়েছে। তবে, ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যাশা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই হোক নির্বাচন। কারণ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোড় সালকে ‘শুভ’ মনে করে। ওই সময় নির্বাচন চাচ্ছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের এমন প্রত্যাশা থাকলেও জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে চাইবে সেভাবেই দিনক্ষণ বাস্তবায়িত হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা অতীতের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিজোড় সালে যেসব নির্বাচন হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের পরাজয় বেশি ঘটেছে। যেমন ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা পরাজিত হয়েছে। আবার সর্বশেষ যে ৫টি নির্বাচন হয়েছে তাতে দেখা গেছে জোড় সালের নির্বাচনে ফলাফল ইতিবাচক হয়েছে—১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গও টেনেছেন। তাই বিজোড় সাল পরিহার করতে ২০২৩ বাদ দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জোড় সাল ২০২৪ সালে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আরও জানান, এই হিসাব করেই চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারিতে। যাতে ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে সংসদের মেয়াদ নিয়ে জটিলতার মুখোমুখি হতে না হয়।
আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ও ধরে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে ওই বছরের ১০ জানুয়ারি অর্থাৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের দিন ধার্য করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে কমিশন তাদের প্রস্তুতির কথা সরকারকে অবহিত করে। নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন হবে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যথাসময়ে নির্বাচন হবে।’
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে।’
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সেই হিসেবে দ্বাদশ নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হবে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর। ভোট শেষ করতে হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে। ফলে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বরের পর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনও সময় ভোট হতে পারে। আবার সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচনের একটি আইনি বিধান আছে। সর্বশেষ দুটি নির্বাচন হয়েছে সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যে।