X
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনে দলের নির্দেশ উপেক্ষিত

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ জুলাই ২০২৩, ১৯:৫০আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩, ২৩:৩২

সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যর প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করছে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হবে। এতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের নানা ‘অপকর্মের’ চিত্রও তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছিল দলটি। কিন্তু ব্যানার-ফেস্টুনে সরকারের নানা উন্নয়ন চিত্র দেখা গেলেও তা ঢাকা পড়ে গেছে নেতাদের বড় বড় ছবিতে।

সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যর প্রতিবাদে শাস্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার আগে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সামনে সমাবেশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, সিটি কলেজ মোড়, কলাবাগান হয়ে ধানমন্ডি ৩২ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে শেষ হয়।

শোভাযাত্রা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নানা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সব ব্যানার-প্ল্যাকার্ডেই যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবির চেয়ে নিজ আসনের সংসদ সদস্য ও নেতাদের সঙ্গে নিজের ছবিটি বড় করে তুলে ধরেছেন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা।

সমাবেশ ও পদযাত্রায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে নানা আকারের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে সরকারের উন্নয়ন চিত্র থাকলেও তা ঢাকা পড়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বড় বড় ছবিতে।

ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনে দলের নির্দেশ উপেক্ষিত

অন্যদিকে, শোভাযাত্রার কোনও মিছিলেই দল নির্দেশিত বিএনপি-জামায়াতের ‘অপকর্মের’ কোনও চিত্র দেখা যায়নি। তবে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের স্লোগান দিতে শোনা গেছে মিছিলে।

এই দৃশ্য দেখে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া কয়েকজনকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে শোনা যায়, নেতা-বন্দনায় ব্যস্ত সবাই। নিজেদের প্রচারে ব্যস্ত তারা। দলের পক্ষ থেকে বারবার বলার পরেও তারা শুনছে না। সুনির্দিষ্ট করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরতে বলেছে দল। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

কথা বলতে চাইলে কেউ নাম বলতে চাননি। তবে একজন বলেন, নিজেকে প্রচারে এত ব্যস্ত থাকার তো দরকার নেই। ছোট নেতারাও এখন নিজের প্রচারে বড় নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার-পোস্টার বানায়। এর তো কোনও দরকার ছিল না। দলের নির্দেশমতো সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা উচিত। সামনে নির্বাচন। তাই এখনই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।

সরকারের উন্নয়ন চিত্র নেতাদের ছবিতে ঢাকা, এমন একটি ছবি হাতে ধরে স্লোগান দেওয়া লালবাগ থাকা আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ফারুক বলেন, আমার হাতে যে প্ল্যাকার্ড দেওয়া হয়েছে, আমি সেটিই ধরে আছি। এসব নেতারা জানেন, আমি কী বলবো!

আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সভায় ওবায়দুল কাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মও তুলে ধরতে হবে। এগুলো যাতে জনগণের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। এমনকি সবশেষ ১২ জুলাই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এক সমাবেশেও তিনি এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসের কর্মসূচিতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে যেন নেতাদের ছবি না থাকে। ছবি থাকবে শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার।

ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনে দলের নির্দেশ উপেক্ষিত

গত ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভা আয়োজিত হয়। সেখানে এখন থেকে ‘শান্তি সমাবেশ’ নাম পরিবর্তন করে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ পালনের কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সমাবেশে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের ‘অপকর্ম’ তুলে ধরার নির্দেশ দেন।

সে অনুযায়ী আজকের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের ‘নানা অপকর্মের’ চিত্রও তুলে ধরার নির্দেশ দেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা।

সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যানার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে নিজেদের ছবি বড় করে আত্মপ্রচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশও জারি করেছিল আওয়ামী লীগ।

দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে; যাতে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ছবি থাকছে। অথচ সেখানে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি খুব ছোট আকারে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টিকটু।

এসব বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি থাকলে সেসব বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন সরিয়ে ফেলানোর জন্য সারা বাংলাদেশর সব নেতা-কর্মীকে নির্দেশ দেন তিনি।

/এমআরএস/এনএআর/
সম্পর্কিত
মুক্তিযুদ্ধ যেমন অক্ষয়-অমর, বঙ্গবন্ধুও তেমন: কাদের সিদ্দিকী
ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে জামায়াতকে আমন্ত্রণ
এনবিআরের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ দাবি
সর্বশেষ খবর
সরকারি জমিতে অস্থায়ী মণ্ডপ সরানো প্রসঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
সরকারি জমিতে অস্থায়ী মণ্ডপ সরানো প্রসঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ফ্লাইটে বার্ড হিট, মাঝ আকাশ থেকে ফিরে এলো বিমান
ফ্লাইটে বার্ড হিট, মাঝ আকাশ থেকে ফিরে এলো বিমান
নিসাঙ্কার পর তাইজুলের শিকার ধনাঞ্জয়া
নিসাঙ্কার পর তাইজুলের শিকার ধনাঞ্জয়া
অক্সিজেন ফেসিয়াল করলে এই ৭ উপকার পাবেন
অক্সিজেন ফেসিয়াল করলে এই ৭ উপকার পাবেন
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন