X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির

সালমান তারেক শাকিল
১৪ আগস্ট ২০১৮, ০২:৩৮আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০১৮, ১২:০৯

বিএনপি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গত শনি (১১ আগস্ট) ও সোমবার (১৩ আগস্ট) দুই দিনের জরুরি বৈঠকের পর সিদ্ধান্তে এসেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পূর্বশর্ত দিতে দলটির নীতিনির্ধারকরা নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত। স্থায়ী কমিটির গৃহীত এ সিদ্ধান্ত আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। যেকোনও কৌশলে মতামত নেওয়া হবে কারাগারে বন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও। দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দিনব্যাপী স্থায়ী কমিটির সক্রিয় সদস্যদের বৈঠকটি দ্বিতীয়দিন সোমবার সন্ধ্যা পৌনে আটটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আগামী নির্বাচনের অংশ নেওয়ার দাবি প্রস্তাব করার বিষয়ে একমত হন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি, কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলাগুলো প্রত্যাহার করা, বর্তমান দশম সংসদ ভেঙে দেওয়া, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা। এছাড়া আরও কিছু দাবি যুক্ত হতে পারে চূড়ান্ত তালিকায়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এর লিখিত রূপ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। পাশাপাশি যেকোনও কৌশলে মত নেওয়া হবে ছয় মাসের বেশি কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার। এছাড়া দুদিনব্যাপী স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচির ধরন নিয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘সাত-আটটি দফা হতে পারে সব মিলিয়ে।’

স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী দুজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঈদুল আজহার পর এবং সেপ্টেম্বরের আগে প্রস্তাবটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের উদ্দেশ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। আবার আরেক জন সদস্য বলেন, ‘ঈদের আগে দিলেই ভালো। অক্টোবরে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হবে। এ কারণে দ্রুত হলে ভালো।’

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দাবিগুলো প্রস্তাব করার পরই কর্মসূচি নিয়ে সামনে আগাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন হলেই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ মাধ্যমকে জানাবে বিএনপি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন প্রবীণ সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।’

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তার দাবি তুলে ধরেছিলেন। দাবিগুলো হচ্ছে: ১. নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। ২. সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ৩. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ৪. ভোটকেন্দ্রে সব ভোটারকে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। ৫. ভোটের সময় মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিতে হবে এবং ৬. কোনও কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা চলবে না।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য নিয়ে এখনও জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বরং দলটিকে সঙ্গে নিয়েই আগামী নির্বাচন মোকাবিলার করার চিন্তা আছে বিএনপির। স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘না না, তাদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্তের সময় আসেনি। সিদ্ধান্ত যা ছিলো, তাই আছে। জোটে তো তারা আছেই, এটা তো বারবারই আমরা বলেছি।’

জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জোটভিত্তিক নির্বাচন হবে। জোট ভাঙার কোনও সম্ভাবনা দেখি না। যারা বিএনপিকে রিপ্রেজেন্ট করে, তাদের অফিসিয়াল কথাই তো আমরা তেমন কোনও কিছু দেখি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়া যে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে জোট করেছিলেন, সেই প্রয়োজনীয়তা এখন আরও বেশি। ফলে, জোটভাঙার চিন্তা কোনও জোটের শরিক দলের কেউই করে না। বিএনপির মহাসচিব জোটের অখন্ডতা রাখার বিষয়ে খুব পজেটিভ।’

গত শনিবার (১১ আগস্ট) দিনব্যাপী আলোচনায় চারটি ইস্যু এজেন্ডা হিসেবে ছিলো। এগুলো হচ্ছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গ, সাংগঠনিক সক্ষমতার আলোকে কর্মসূচি দেওয়া ও নির্বাচনি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য। এছাড়া পার্শ্ব আলোচনায় জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচনায় ছিলো। তবে আলোচনা দিনব্যাপী হলেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি ওইদিন।

এর আগে শনিবার স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলন ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন, ‘আলোচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত সব সদস্যরাই ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। প্রত্যেকেই চাইছেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিটিকে সামনে নিয়ে আসতে। এ বিষয়টি গত ৩ ও ৪ আগস্ট জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও ওঠে আসে। ওই বৈঠকেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ আসে।’

শনিবার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচি নিয়ে প্রেডিক্ট করা সম্ভব না। রাজনীতি তো একটি চলমান বিজ্ঞান। একটি গতিশীল বিজ্ঞান। এখানে কখন কী হবে, যেমন কোটা আন্দোলন হল, শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে যেটা ঘটল, এটা কী ’

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘আন্দোলনের কোনও টাইমলাইন থাকে না। আমরা তো আন্দোলনেই আছি। আমরা মুভমেন্টেই আছি।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্যের ইঙ্গিত, ‘যতটা সম্ভব, দ্রুত কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেপ্টেম্বরে রাজপথে আসার বিষয়ে সবার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ হয়েছে। নেতাকর্মীদের বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মসূচি দেওয়া হবে, যেন আর কাউকে জেলে যেতে না হয়। বিশেষ করে নির্বাচনে অংশ যদি নিই আমরা, তাহলে কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল করতে হবে।’

বৈঠকসূত্র জানায়, নির্বাচনি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এ বিষয়ে আরও আলোচনা ও সমমনা দলগুলোর মনোভাব সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে অবগত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বরাবরের মতো সমন্বয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এ বিষয়ে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কথা বলবে, তাদের ভাবটাব বুঝবে। এরপর সিদ্ধান্ত।’ যদিও শনিবার বিকালে যুক্তফ্রন্টের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি।’ বিএনপির একটি সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য ঐক্যের প্রধান নেতা হিসেবে খালেদা জিয়াকে মানতে কোনও সমস্যা নেই আগ্রহী দলগুলোর। এক্ষেত্রে সমন্বয়ক হিসেবে বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলো থেকে দুজনকে দেখা যেতে পারে

আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিন দলটির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হবে। সোমবার বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সমাবেশ করা হবে। এক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন বা নয়াপল্টন দেওয়ার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে প্রস্তাব করা হবে। আর সমাবেশ করার অনুমতি না মিললে র‌্যালি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ করতে না দিলে সেপ্টেম্বর থেকেই রাজপথে কর্মসূচি

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
চালককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রিকশা ছিনতাই করতো তারা
চালককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে রিকশা ছিনতাই করতো তারা
হলফনামায় তথ্য গোপন, ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের মনোনয়নপত্র বাতিল
হলফনামায় তথ্য গোপন, ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের মনোনয়নপত্র বাতিল
মানবপাচার: মিল্টন সমাদ্দার আবার ৪ দিনের রিমান্ডে
মানবপাচার: মিল্টন সমাদ্দার আবার ৪ দিনের রিমান্ডে
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে
আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে