X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা: বিএনপিতে কর্মসূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব

সালমান তারেক শাকিল
২২ নভেম্বর ২০২১, ২১:০৭আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২১, ২২:২২

২০২০ সালের ২৫ মার্চে শর্তসাপেক্ষ মুক্তির পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) প্রথম কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। সেদিন ‘গণ-অনশনে’ দলের সিনিয়র নেতাদের অধিকাংশ অংশ নেন। ঠিক একই দাবিতে একদিন পর সোমবার (২২ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে আবার সিনিয়র নেতাদের একটা বড় অংশই অনুপস্থিত ছিলেন। আর এর রেশ দেখা গেছে সমাবেশ চলাকালেই, শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একে-অপরের সঙ্গে কথা বলছিলেন, ‘পারতপক্ষে কারা কারা সমাবেশের মতো প্রোগ্রামগুলোতে আসেন না’।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এবং দলটির সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কর্মসূচি কেন্দ্রিক এই পরিস্থিতির মূলে দলের নেতৃত্ব। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টিতে ‘অনাগ্রহ’ থাকার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ড ‘গণ-অনশন বা বিক্ষোভ সমাবেশের’ মতো কর্মসূচিতে এখনই যেতে রাজি নয়। আর এই অনাগ্রহের বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও পড়েছেন দোটানায়।  

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে বেশ কয়েকটি কারণ বেরিয়ে এসেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতি। সোমবারের সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির মাত্র দুজন সদস্য অংশ নেন। বাকি সদস্যদের মধ্যে  তিন জন অসুস্থ থাকায় যেতে পারেননি। এছাড়া, অন্য সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন ধারাবাহিকভাবে মাঠের কর্মসূচিতেও অনুপস্থিত থাকেন।

সোমবারের বিক্ষোভ সমাবেশে তুলনামূলক তরুণ নেতারা অংশ নিলেও সিনিয়র নেতাদের প্রায় সবাই ছিলেন অনুপস্থিত। ‘ঘরোয়া বা নিরিবিলি পরিবেশ’ ছাড়া এসব নেতা সাধারণত মাঠের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকেন।

সমাবেশ চলাকালীন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পরস্পরের আলাপেও বিষয়টির রেশ পাওয়া গেছে। এদিন সকাল ১১টার দিকে সমাবেশের সভাপতি আবদুস সালামের বক্তব্যের সময় একাধিক নেতার কথোপকথন ছিল অনেকটাই এরকম, ‘যে কয়জন আসার আসছি। ...... পারতপক্ষে এসব প্রোগ্রামে আসেন না। তারপর আপনার …., উনি তো আপনার আসেই না। কালকে আসছিলেন.... তিনি তো…. কোর্টে হাজিরা দিতে গেছেন ….ভাই তো অসুস্থ।’

কর্মসূচিতে সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমেরিকা থেকে ফোনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা তো রং কনসেপ্ট। বিএনপি একটি বড় দল। স্থায়ী কমিটির সবাই যদি বক্তৃতা করে, তাহলে ৩ ঘণ্টা ধরে বক্তব্য শুনতে হবে। মানুষ তো বিরক্ত হয়ে যাবে। এটা কোনও দলেই হয় না, একেকটা মিটিংয়ে একেকজন যাবেন।

 সোমবারের সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

সোমবারের কর্মসূচিতে আরেকটি বিষয় ছিল লক্ষণীয়, ‘তারেক রহমানের বিশ্বস্ত’ হিসেবে বিএনপির নানা সভা-সেমিনারে পরিচয় করিয়ে দেওয়া নেতাদের দেখা যায়নি। এর কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে কর্মসূচি কেন্দ্রিক মতবিরোধের প্রসঙ্গ। কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে যারা যারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব পরিষ্কার হয়ে গেছেন, তারা কেউ-ই সমাবেশে মুখ দেখাতে আসেননি। 

সোমবারের সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণের দুই আহ্বায়ক আবদুস সালাম, আমানউল্লাহ আমানসহ সমাবেশে বক্তব্য দেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, নাজিমউদ্দিন আলম, ইশরাক হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন। সঞ্চালনায় ছিলেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হক।

অন্যদিকে বিএনপির বাংলাদেশে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন—তাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই নেতাকর্মীদের কর্মসূচির চাহিদা সংবলিত স্লোগান ফেস করতে হয়। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ক্রমাগত চাপ কর্মসূচির। সেক্ষেত্রে ‘নেতৃত্বের অনাগ্রহের’ বিষয়টিকে কেন্দ্রে রেখে কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে ‘আন্দোলনের’ কথা বলছেন সিনিয়র নেতারা।

শনিবারের অনশন ও সোমবারের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যেও এর প্রভাব দেখা গেছে। শনিবার তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে না দিলে রাজপথে সমাধান হবে। চেয়ারপারসনকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানো না হলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।’ সোমবারের বক্তব্যেও তিনি আন্দোলনের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেন। বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন আর কোনও পথ খোলা নেই। আমাদের সামনে একটাই পথ, আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলন। এই আন্দোলন তীব্র করে সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে।’

একইসঙ্গে তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন, ‘আমার দলের ভাইবোনদের উদ্দেশে আমি একটা কথা বলতে চাই, হঠকারিতা করবেন না। অতীতে হঠকারিতার জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং তাকে সুচিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাবো।’

বক্তব্যের পর ফখরুল জানান, দলের পরবর্তী কর্মসূচি ২৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান। দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘কঠোর আন্দোলনের অংশ হিসেবেই স্মারকলিপি দেবে বিএনপি।’

রাজনৈতিক নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, শনিবারের গণঅনশন বা সোমবারের সমাবেশ—এসব কর্মসূচি নিয়ে পরিষ্কারভাবেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে বিএনপিতে। এমনকি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও তার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে ‘আলো-ছায়া’র অবস্থানে রয়েছে দলটি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অগ্রগতি বা অবনতির বিষয়ে নিয়মিত বুলেটিনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এ নিয়েও অনীহা রয়েছে পরিবার ও দলের। চিকিৎসকেরাও এ বিষয়ে জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

আর সব পক্ষ থেকেই নীরবতা পালনের কারণে কয়েক দিন পরপরই বেগম জিয়াকে নিয়ে গুজব রটনা হচ্ছে বলে জানান তার রাজনৈতিক একজন শুভানুধ্যায়ী। তিনি বলেন, ম্যাডাম জিয়া নিঃসন্দেহে খারাপ আছেন। ক’দিন আগেই কেবিনে আনার কথা থাকলেও তিনি এখনও সিসিইউতেই চিকিৎসাধীন। সেক্ষেত্রে কেন প্রতিদিন বুলেটিনের মাধ্যমে তার শারীরিক অগ্রগতি বা অবনতির বিষয়টি জানানো হয় না। এতে সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে বলেও মনে করেন এই শুভানুধ্যায়ী।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইনডাইরেক্টলি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে, ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কানাডার হাইকমিশনারের বৈঠকফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের আশা বিএনপির
নারী নির্যাতনকারীর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না: মির্জা ফখরুল
সর্বশেষ খবর
এনবিআর সংস্কারে কমিটি করবে সরকার
এনবিআর সংস্কারে কমিটি করবে সরকার
মুরাদনগরে ধর্ষণের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল
মুরাদনগরে ধর্ষণের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল
বাহরাইনকে ৭ গোলে হারালো বাংলাদেশ
বাহরাইনকে ৭ গোলে হারালো বাংলাদেশ
ইনডাইরেক্টলি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে, ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস
ইনডাইরেক্টলি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে, ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস
সর্বাধিক পঠিত
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ উপপরিচালকের‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
খুলনা প্রেসক্লাবে কী ঘটেছে, জানালেন প্রেস সচিব
খুলনা প্রেসক্লাবে কী ঘটেছে, জানালেন প্রেস সচিব