X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘দিক-নির্দেশনা’ না পেয়ে হতাশ বিএনপির কর্মীরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:০০আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:৪৩

নানা আলোচনা-সমালোচনা আর অঘটনের পর শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ের গণসমাবেশ কর্মসূচি। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিকাল সোয়া ৪টায় এ সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।  একদিন আগে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর রাতে গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় সমাবেশে ছিলেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে তার শূন্যতা ছিল লক্ষ্য করার মতো, যার রেশ পাওয়া গেছে সমাবেশে আসা বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেও। শনিবার সমাবেশ শেষে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক চৌধুরী আকবর হোসেন, জুবায়ের আহমেদ, সাজ্জাদ হোসেন, আবিদ হাসান ও আতিক হাসান শুভ।

শনিবার সন্ধ্যার দিকে গোলাপবাগে বসে ঢাকায় আসা বিএনপির অনেক অনুসারীর সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকদের কথা হয়। আলাপে পাওয়া গেছে নানামাত্রিক প্রসঙ্গ। কারও মতে, প্রত্যাশা মাফিক কিছু পাননি সমাবেশে। কেউ বলছেন, মির্জা ফখরুল না থাকায় তারা হতাশ। অনেকে এসেছিলেন ঢাকায় টানা আন্দোলনে শরিক হতে।

লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা বিএনপির নেতা আবদুল কাদের বলেন, ‘নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনা হয়েছে সরকারের পতন ঘটিয়ে, আমরা নিজেরা সরকার গঠন করে, আগামীকাল থেকে দেশ পরিচালনা করবো। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমান উল্লাহ আমান আজকের মিটিং শেষে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন। সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই কাঁথা, কম্বল নিয়ে জড়ো হয়েছিলাম মূলত সরকার পতনের জন্য।’

বিএনপির তৃণমূলের এই নেতার ভাষ্য— এখানে (সমাবেশে) সবাই নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে হাজারো বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, তেজোদীপ্ত হয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে জড়ো হয়েছে। অনেকে কাফনের কাপড় পরে সমাবেশে এসেছে। কিন্তু কোনো রূপ দিকনির্দেশনা না পেয়ে এবং আমান সাহেবের বক্তব্যে আমরা দারুণভাবে আশাহত হয়েছি।’

‘আজকে যদি মির্জা ফখরুল, রুহুল কবির রিজভী বা এ্যানির মতো নেতারা এই সমাবেশে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই আশানুরূপ দিকনির্দেশনা পেতাম। তবে আমরা আশাবাদী, শিগগিরই এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করবে,’ বলছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বিএনপি নেতা আবদুল কাদের।

তবে ‘আজকের সমাবেশ কোনও সরকারকে গদি থেকে নামানোর সমাবেশ ছিল না’ বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মী আবিদ-ঊর-রহমান মিশু। তার ভাষ্য, ‘আজকের সমাবেশ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করবো।’

মিশু বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়, বাংলাদেশের একজন  নাগরিক হিসেবে আজ  চোখে যা দেখেছি, তা আত্মাকে প্রশান্ত করবার মতো। জেল, জুলুমের চেয়েও শক্তিশালী জনতার উপস্থিতি আজকেই অনুধাবন করলাম। জনগণ মাঠে নেমে এসেছে, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার।’

উজ্জীবিত অনুসারীরা

বিএনপি কর্মীদের কেউ-কেউ মনে করছেন, গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় পুলিশের অভিযানের পর দলের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। যদিও বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্যে— ‘১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ঢাকায় হবেই’ তা নিয়ে তারা দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল। তবে কোথায় হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল, বলে জানান কর্মীরা।

কর্মীরা বলছেন, সমাবেশের একদিন আগে বিকালে বিএনপির সমাবেশস্থল নির্ধারণ হওয়ার পরপরই আবারও একত্রিত হন নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, সমাবেশ সফল হোক কিংবা না হোক, সমাবেশে উপস্থিত হওয়া চাই— এটাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

গণসমাবেশ শেষে আলাপ হয় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা রওনক জাহান শাহিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকতা রেখে সুশৃঙ্খলভাবে আগাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই গত ৯টি সমাবেশ ও আজকের ঢাকার সমাবেশসহ ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছি। এই সমাবেশেগুলোতে শুধু বিএনপির কর্মীরাই ছিলেন না, সারা বাংলাদেশের অধিকার-বঞ্চিত মানুষের উপস্থিতিও ছিল অনেক।’

রওনক জাহানের মন্তব্য, ‘আমরা অনেক উজ্জীবিত। আমরা আশাবাদী, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে, আমরা মাঠে আছি।’

সমাবেশের মাধ্যমে দলীয় ঐক্যের পথকে সুদৃঢ় করবে বলে মনে করছেন অনেকে। সমাবেশে যোগ দিতে সাভার থেকে এসেছিলেন আজমল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কর্মীরা যেকোনও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়েও ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, সেটি আজ দেশের মানুষ দেখেছে। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের জেলে নিয়ে যাওয়ার পরও কেউ মনোবল হারাননি।’

নারায়গঞ্জ থেকে আসা ছাত্রদল কর্মী জাবের হোসেন বলেন, ‘আজ আমরা আগামী দিনের কর্মসূচি বাস্তাবায়নের প্রত্যয় নিয়ে বাড়ি ফিরছি। ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে আন্দোলন আরও  জোরদার হবে।’

এ সমাবেশে সরকারের প্রতি দেশের মানুষের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করেন নাজমুল আলম। যাত্রাবাড়ী এলাকার যুবদল কর্মী নাজমুল বলেন, ‘এ সমাবেশে শুধু বিএনপির কর্মীরা আসেননি, মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও এসেছেন। সাধারণ মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছে।’

মির্জা ফখরুলকে দেখতে না পেয়ে হতাশ গাড়িচালক আব্দুল মান্নান (মাঝখানে), ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

মির্জা ফখরুলকে দেখতে কুমিল্লা থেকে দুই কর্মী

ঢাকার গণসমাবেশে আসা অনেকের চোখেমুখে ছিল অপ্রাপ্তি ও হতাশাও। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে দেখতে না পেয়ে অনেকেই হতাশ প্রকাশ করেছেন।

কুমিল্লার মুরাদনগর থানা থেকে ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সমাবেশে মির্জা ফখরুলকে না দেখে আমি হতাশ। ৮ তারিখ থেকে আমি একাধিকবার পল্টনে প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছি, কিন্তু ভেতরে যেতে পারি নাই। আমি মহাসচিবকে অনেক ভালোবাসি। তিনি অনেক ভালো মানুষ। তাই ওনাকে দেখতে এসেছি।’

বিএনপির মহাসচিবকে এক পলক দেখতে ঢাকার সমাবেশে আসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার আবদুল মান্নান। পেশায় গাড়িচালক এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ৭ তারিখ এসেছি। মহাসচিব স্যারকে এক পলক দেখবো বলে।’

মির্জা ফখরুলকে সমাবেশে আশা করেছিলেন কুমিল্লা থেকে আসা সাইফুল ইসলাম. ছবি: সাজ্জাদ হোসেন নেতাকর্মীদের হতাশার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ সদস্যের মত হচ্ছে, ‘এরকম সমাবেশ করে কি সরকারের পতন আশা করা যায়? বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। ধীরে-ধীরে আমরা সেদিকে যাবো। পাঁচ লাখের মতো লোক হয়েছে ধারণা করি। এই লোক জমায়েত দিয়ে তো সরকারের পতন হয় না, যে সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো মার্চ করছে।’

নেতাকর্মীদের হতাশা ও দিক-নির্দেশনার অভাবের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এটা ছিল বিভাগীয় সমাবেশগুলোর সর্বশেষ গণসমাবেশ। আমরা ১০ দফা দাবি দিয়েছি। এটাতে স্পষ্ট আমরা কী চাই। আর সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট আন্দোলন শুরু হয়েছে এমপিদের পদত্যাগের মাধ্যমে, আমরা এটা করেছি।’

/এসটিএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ঢাকা দক্ষিণ আ.লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শুক্রবার
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!