কারাবন্দি নেতাদের বিদেশে পাঠানোর অতীত উদাহরণ তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘রবিবার আমাদের মহাসচিব বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে হবে। আজকে দেখলাম উনারা (সরকার) বলছেন, আইনের জটিলতা আছে। আমি আজকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের সময়ে আ স ম আবদুর রবকে জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তার সময়ে রাশেদ খান মেননকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন, তার লিভার টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল, তাকে সুস্থ করেছিলেন। আজকে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন।”
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য ও ছাত্র দলের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে অসুস্থ খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় এই দোয়া হয়।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘হাজী সেলিম সেদিন ব্যাংকক গেলো, চিকিৎসা করে ফেরত এলো— সে বাইরে আছে, এখন সহি-সালামতে আছে। ম খা আলমগীর (মহিউদ্দিন খান আলমগীর) একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বাইরে ঘোরাফেরা করছে, মায়া (মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বাইরে ঘোরাফেরা করছে। অথচ আমার নেত্রী কিছুই অপরাধ করেনি— তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘আমি আবারও অনুরোধ জানাবো, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে… এরইমধ্যে ১২ ঘণ্টা চলে গেছে… আর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে যেন দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য। একটা কথা আমি আবারও বলছি, এই অবস্থায় দেশনেত্রীর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আপনাদের কারও কোনও অস্তিত্ব বাংলাদেশে আমরা রাখবো না। আমি দুঃখিত আমি একটু বোধ হয় আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি।”
গত ৯ আগস্ট থেকে খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অবস্থা সংকটজনক। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো জরুরি।
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমরা আসলে বোকার স্বর্গে বসবাস করছি… আমরা বুঝতে পারিনি। যেদিন নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেদিন থেকেই তাকে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে। এই গ্রেফতার ছিল তাকে হত্যা করার জন্যে… আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা বুঝেছি গ্রেফতার করা হয়েছে মানে গ্রেফতার করা হয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পরে আমরা বলা শুরু করেছি তিনি অসুস্থ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আসলে উনাকে গ্রেফতার করে অসুস্থ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে এটাই ছিল তাদের প্ল্যান। সেই প্ল্যান এখন কার্যকর করছে। আর না হলে কীভাবে অমানুষের মতো, অমানবিকতার মতো একটা কথা বলেন, যে খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানোর কোনও সুযোগ নাই… আইনের জটিলতা আছে।”
তিনি বলেন, ‘‘একটা মানুষের জীবন বাঁচাতে পৃথিবীর কোনও আইন-টাইন কাজে লাগে না। যখন জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন হয় তখন তার জন্য যে চিকিৎসা দরকার, যেটা করা দরকার— সেটা করা মানবিক, এটা আইন। আন্তর্জাতিক জেনেভা কনভেনশনের একটা আইন আছে— সেই আইনে উনি চিকিৎসা পেতে পারেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আশা করছি— সরকার এই সুযোগটা নেবেন যে দেশনেত্রীকে বিদেশে তারা পাঠিয়েছেন। এই সুযোগটা তারা নিতে পারেন।”
এই মিলাদ মাহফিলে সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন,জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, আসাদুর রহমান খান, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।