‘যেকোনও সময়েই নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত আছে’ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (১০ জুন) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি দলের এই প্রস্তুতির কথা জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের পর শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব। রাজনীতি, নির্বাচন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক, নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড, সংস্কার কমিশনসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি। বিএনপি নির্বাচনের দল, বিএনপি অলওয়েজ রেডি ফর ইলেকশন। কারণ এটা (বিএনপি) নির্বাচনের দল, নির্বাচন করেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভাই, আমি তো বিপ্লবী দল নই। আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা কোনও বিপ্লবী দল নই, নির্বাচন করেই জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। যখন সবাই চাইবে, একমত হবে, তখন নির্বাচন হবে… অসুবিধা নাই।’
চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে সফল অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন ঈদের আগের রাতে।
‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন খুবই সম্ভব’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের দল বলেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব এবং এটা খুবই সম্ভব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন এই কথা। আমি বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব।”
জামায়াতে ইসলামী বলেছে এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে। তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাদের বক্তব্য কী প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে ডেমোক্র্যাসির মূল কথা হচ্ছে—আপনি আমার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবেন, আমি আপনার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবো। কিন্তু তাই বলে আমি মনে করবো না যে আপনি আমার শত্রু, তাই বলে আমি মনে করবো না যে আপনি দেশদ্রোহী হয়ে গেছেন, আপনি গণতন্ত্রবিরোধী হয়ে গেছেন। আমি মনে করবো, এটাই গণতন্ত্রের বিউটি।”
‘‘আমার দায়িত্ব হচ্ছে আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারকে নিশ্চিত করা, দিস ইজ দ্য রেসপনসিবিলিটি অ্যাজ এ ডেমোক্র্যাট… এই জায়গাটায় অনেককে বুঝানো সম্ভব হয় না। ডেমোক্র্যাসিটা আসলে আপনাকে একটু চর্চা করতে হবে, আপনার কালচারের মধ্যে আনতে হবে— আপনার বাসায়, আপনার পরিবারে, আপনার সমাজে সব জায়গায় আনতে হবে। সেটা আমরা করতে পারিনি। ওই জায়গাটা শুরু করা যাক… লেট আস স্টার্ট।”
এপ্রিলে নির্বাচন, বিএনপির অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেখুন, এ ব্যাপারে আমরা পার্টিগতভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা আশা করছি যে সরকারের একটা বিবেচনা করতে… কিছুটা বলা যেতে পারে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা বিবেচনা করবেন।”
‘‘সময়টা (এপ্রিল) তো ঠিক না। আমি প্রথম দিন বলেছি, টাইম ইজ নট গুড ফর ইলেকশন। এপ্রিল মাস, আপনার রোজার মাস, রোজা শেষ হবে, ঈদ শেষ হবে—এর কয়েক দিন পরে নির্বাচন। আপনি ভাবেন রোজার মাসটায় প্রার্থীদের কী অবস্থা হবে, রাজনৈতিক কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত যে প্রত্যেক দিন আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। ইটস নো জোক, এটা বিরাট ব্যাপার। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে এবং এ ক্ষেত্রে আমরা চিৎকার করি অর্থ ব্যয় কমাতে হবে, ওই সময় হলে তো ব্যয় বাড়বে।”
তিনি বলেন, ‘‘শুধু তাই নয়, ওই সময়ে প্রচণ্ড গরম থাকবে আবহাওয়া, ঝড়-বৃষ্টি আছে, দিনের বেলা আমাদের যে নির্বাচনি কালচার, জনসভা করতে হয়। সেই জনসভায় লোকজন আনাটাই মুশকিল হবে, রোদের মধ্যে কে আসবে? রাতের বেলা মিটিং করতে হবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সময়ে ডিসেম্বর-নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। দুবার বোধহয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে… দুই ইলেকশনই ঝামেলা ছিল।”
‘‘তারপরেও আমি মনে করি, নির্বাচন বেশি প্রয়োজন। অনেকে আবার আমাকে ভুল বুঝবেন, সংস্কার চাই না, নির্বাচন চাই—এই যে একটা আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা অপপ্রচার, এর কোনও যুক্তি নাই। আমরা তো বহু আগেই সংস্কারের কথা বলেছি। বহু আগেই বলেছি যে এই ব্যবস্থা চলবে না। সেই ব্যবস্থা পরিবর্তনে আমরা, ম্যাডাম খালেদা জিয়া এই রুমে বসে ভিশন-২০৩০ তৈরি করেছেন ৭/৮ বছর ধরে আলাপ-আলোচনা-বিতর্ক করে করে। তারপরে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম এবং সব শেষে যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক শরিকদের সঙ্গে কথা বলে ৩১ দফা দিয়েছি।”
‘নতুন দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কিনা, আপনি কী আশা করছেন, প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমি খুবই ইতিবাচক মানুষ এবং আমি সবসময় পজিটিভ দিকটাই দেখতে চাই, ব্রাইট দিকটা দেখতে চাই। তাতে করে আমি মনে করি, এই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে।”
‘‘সেই সুযোগগুলো তৈরি করার সুযোগ এসেছে আমাদের এই দুই নেতার। দিস ইজ এ প্রোপার টাইম, প্রোপার ভেন্যু, প্রোপার প্লেস যেটাতে নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে আর কী।”
‘সরকারের আন্তরিকতা অভাব নেই’
তিনি বলেন, ‘‘একটা বিশেষ মুহূর্তে এসে তারা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কথা বললে অস্বীকার করা হবে না যে আমরাই দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ, পণ্ডিত লোক, উইজডম সব আছে, কিন্তু পলিটিক্যাল উইজডম যে পুরোপুরি আছে, সেটা বলা যাবে না।”
‘‘বাট অ্যাট দ্য সেইম টাইম দে হ্যাভ গট দ্য সিনসিয়ারিটি। তাদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না… তারা কাজ করতে চান, কাজ করছেন। দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন হতে পারে। তবে এখানে একটা ইউনিক যে এখানে একটা চাপ আছে। চাপটা হচ্ছে, আপনারা জানেন যে এখানে নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে, নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে একটা জায়গায় নিয়ে আসা—এটাও বড় একটা চ্যালেঞ্জিং জব কিন্তু। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে, দুই নেতার মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে একটা বড় সমাধান হয়ে যেতে পারে। একেবারে মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এটা মনে করার কোনও কারণ নেই।”
তিনি বলেন, ‘‘১৫ বছরের একটা ফ্যাসিস্ট শাসক আওয়ামী লীগ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ইনস্টিটিউশনগুলোকে নতুন করে বিল্ডআপ করা একটা ছেলেখেলা নয়। আমি এই কথাটা বারবার বলার চেষ্টা করি, এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ জাতির জন্য।”
‘‘সবাই আশা করেন যে এটা ঠিক হচ্ছে না, ওটা ঠিক হচ্ছে না। এত সোজা? একটা রাষ্ট্রকে একটা যন্ত্রকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এখান থেকে আবার নতুন করে সুস্থ ভালো জিনিস নিয়ে আসবেন, এটা এত সহজে হয় না… ইটস টেক টাইম। ভালো কথা হচ্ছে যে সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোও চেষ্টা করছে। আমি কাউকেই অভিযুক্ত করতে চাই না, কারও বিরুদ্ধে বলতে চাই না। আমি মনে করি, এভরি বডি ট্রাইং দেয়ার বেস্ট। মে বি যে, হয়তো পথ ভিন্ন, চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন হতে পারে, কথাবার্তা ভিন্ন হতে পারে না। কিন্তু সবার চেষ্টা আছে।
‘টিক মার্ক দিয়ে কি রাজনীতি হয়?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সংস্কার কমিশনগুলো তারা যেভাবে জানতে চেয়েছে এটা অনেকটা স্কুলের টিক মার্ক দিয়ে… টিক মার্ক দিয়ে কি রাজনীতি হয় নাকি। এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী পরপর দুবারের বেশি কেউ হতে পারবেন না। আবার বলেছি যে এক বছর বাদ দিয়ে আরেকবার হতে পারবেন। অর্থাৎ থ্রি টাইমস। আমরা তো এ কথা বলিনি যে তারপরও হতে পারবেন।”
‘‘আমরা বলছি যে দুইটা হাউজ দরকার। ইটস এ মেজর রিফর্ম। আমরা বহু আগে থেকে বলেছি যে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দরকার হবে। তখন তো সব উড়িয়ে দিয়েছে ড্যাম ইস্যু, অমুক ইস্যু, তমুক ইস্যু। এমনকি বিদেশিরা আমাকে নিজে বলেছে যে গুড টক অ্যাবাউট দিস ইস্যু। এটা প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে যে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশে আপাতত একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।”
‘বিএনপি ইজ রিয়েলিটি’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘কেমন জানি একটা নেগেটিভ প্রচারণা বিএনপির বিরুদ্ধে চলছে। কিন্তু কারণটা কী? আমরা নতুন নতুন সংস্কারের কাজ করেছি তো, পরিবর্তন আনার কাজ করেছি তো। এখন আমি জানি না কিছু কিছু মানুষ আছেন, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বলেই যাচ্ছেন।”
‘‘বাস্তবতা হচ্ছে যে বিএনপি ইজ এ রিয়েলিটি। বিএনপি এমন একটা দল, একে যতকিছুই বলুক, তাকে সহজেই শেষ করা যায় না, কখনোই যায়নি। বিএনপির জন্মের পর থেকে অনেকবার চেষ্টা হয়েছে, তার বড় প্রমাণ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া। ১৫ বছরে তো আমরা বিলীন হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। ভাবছে যে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে, বিএনপি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাবে। কত লেখালেখি কত কিছু… পারে নাই তো। একটা লোক ছাড়া দুইটা লোক নিতে পারে নাই, তাই না। সব নেতাকর্মীকে ভেড়ার পালের মতো জেলে ঢুকিয়েছে, অত্যাচার করেছে, ছাত্র-যুবকদের নখ তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে, গুম করেছে, তারপরও তো নিতে পারেনি। বিএনপি ইজ দেয়ার, ভেরিমাচ দেয়ার।”
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে ‘জাতিকে বিভক্ত’ না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটা বিষয়ে জাতি ইউনাইটেড যে আমরা গণতন্ত্র চাই, রেস্ট্রোরেশন অব ডেমোক্র্যাসি চাই, আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই, আমার ভোটটা আমি দিতে চাই—ভোট দিয়ে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। সংস্কার চাই।”
‘‘অযথা ডিভিশনটা করবেন না। আমরা যদি ডিভিশনটা করি, তাহলে আমাদের জাতির যারা শত্রু বাইরে আছে, তারা এই সুযোগটা বেশি করে পাবে।”
‘কেয়ারটেকার সরকার কেন দরকার’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ম্যাডাম সেদিনই বলেছিলেন যে একটা বীজ বপন করা হলো চিরস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা রাজনীতিতে। আমরাও একইভাবে সেই কথা বলে গেছি। কেয়ারটেকার কেন দরকার? বারবার করে আমাদের পশ্চিমারা কিছুটা বলা যায় যে আমাদেরকে কি আপনারা হিউমোলেটেড করার চেষ্টা করছেন। কারণ ওদের দেশে এগুলো নাই।”
‘‘আমি বলেছি, তুমি তো এটা বুঝবা না। আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে হবে। কারণ এখানে উই ডোন্ট ট্রাস্ট ইজ আদার। আমরা একটা দল আরেকটা দলকে বিশ্বাস করি না। যে যখন আমরা ক্ষমতায় যাই দখল করার চেষ্টা করি। সেজন্যেই ওই সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকাটাই একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের একমাত্র জায়গা। তখন তো ওরা (পশ্চিমারা) উড়িয়ে দিয়েছে। এখন তো দেখছে দিস ইজ ট্রু। ওরাই এখন বলছে যে এটার দরকার হবে। এখন সব রাজনৈতিক দল বলছে, লাগবে এটা।”
নির্বাচনের সময় চলে আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের ‘কেয়ারটেকার সরকারের ব্যবস্থা’য় চলে যাওয়া উচিত কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘‘আমি আগেই বলেছিলাম কথাটা—ইলেকশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য দেয়ার শুড বি এ কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট। অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো কী থাকবে না থাকবে, ইলেকশনটা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।”
‘‘সেই সময়ে কিছু রাজনৈতিক দল সমালোচনাও করেছে যে আমি এখানে ১/১১ আনতে চাই, অমুক আনতে চাই বলেছেন অনেক। এটা হয়েছে অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে। আমি যে কথাগুলো বলেছি, অভিজ্ঞতার আলোকে। আপনাদের মনে আছে, ৫ আগস্টের পরে আমরা নয়া পল্টনে একটা জনসমাবেশে বলেছিলাম, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিলাম। এটা নিয়ে আমাকে যথেষ্ট সমালোচনা ফেস করতে হয়েছে যে এখন বিএনপি নির্বাচন চায়, অমুক চায়-তমুক চায়। এটা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ওই নির্বাচনটা আমরা দ্রুত চাই কী কারণে? একটা ইলেকটেড সরকার দরকার।”
তিনি বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগে আমার বাসায় কয়েকজন ইনভেস্টর, বড় ব্যবসায়ী তারা এসেছিলেন, তাদের দুঃখের কথা বলতে। দুঃখের কথা কী? তারা কোনও দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না, তারা কী করবেন বুঝতে পারছেন না এবং ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে সেভাবে সহযোগিতাও করছে না।”
‘‘এই জিনিসগুলো খুবই অ্যালার্মিং। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি স্থবির হয়ে পড়ে, তাহলে কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এর কারণটা হচ্ছে, দেয়ার ইজ নো ইলেকটেড গভর্নমেন্ট, নাই এবং বিদেশিরা বলছে যে নির্বাচিত সরকার না থাকলে আমরা ইনভেস্টমেন্ট করবো না…এইগুলো হচ্ছে বাস্তবতা।”
‘বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব বিএনপির মতো করেই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব বিএনপির মতো করে দিয়েছে। বিএনপি যা বিশ্বাস করে, যেগুলো তার আদর্শ, যেগুলো আগেই ঘোষণা করেছে। আমাদের ৩১ দফা অভ্যুত্থানের অনেক আগেই ঘোষণা করা। সুতরাং দ্যাট ইজ মাই পয়েন্ট।”
‘‘তবে আলোচনা করে দুই-এক জায়গা ছাড়টাড় দিতে হয় সেগুলোতে তো আমরা দিচ্ছি। আমরা তো পরিষ্কার বলেছি, যেগুলোতে ঐকমত্য হয়, সেগুলো তোমরা করো, যেগুলোতে ঐকমত্য হবে না সেগুলো সংসদে চলে আসবে ইলেকশন মেনিফেস্টো হিসেবে। পিপলস এক্সসেপ্ট করবে, হয়ে যাবে, কঠিন ব্যাপার তো না।”
‘শরিকদের সমঝোতায় আসন ছাড়বে বিএনপি’
‘শরিকদের কিছু কিছু আসন বিএনপি ছেড়ে দেবে’ এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এটা তো অস্বাভাবিক না, এটা সংসদীয় রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিক, এটা ন্যাচারাল, এটা হওয়া উচিত। আমরা আগে থেকে কমিটেড যে আমরা নির্বাচনের পর একটা জাতীয় সরকার করবো।”
জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টিকে সমঝোতায় আসন দেওয়া হবে—এরকম আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এগুলোর ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নাই। আলোচনা থাকতে পারে, এই ধরনের কোনও আলোচনা হয়েছে বলে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে আমার জানা নাই।”
‘‘এটা পরের ব্যাপার, যদি আলোচনা হয় হবে কিছু, সেটা ডিফারেন্ট প্রশ্ন। রাজনীতিতে পার্লামেন্টারি ডেমোক্র্যাসিতে শেষ কথা বলতে কিছু নাই। চরম বিরোধী দল, তার সঙ্গেও অ্যালায়েন্স হয়ে যায়। আপনি ভারতে তাকিয়ে দেখেন না, একেবারে কট্টর ডানপন্থি, কট্টর বামপন্থির মধ্যে অ্যালায়েন্স হয়ে নির্বাচন হচ্ছে। কারণ ওখানে সংখ্যার ব্যাপারটা ইম্পরটেন্ট।”
‘আওয়ামী লীগ তো নাই’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ তো নাই, ওরা তো নাই।”
জাতীয় পার্টির বিষয়ে কী অবস্থান? জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আপনারা যে পার্টিগুলোর কথা বলছেন, সেগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিরোধ বিএনপির। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন-ফ্যাসিবাদের বড় ভুক্তভোগী বিএনপি।”
‘‘একইভাবে জাতীয় পার্টির কাছেও আমরা ৯ বছর (এইচএম এরশাদের শাসনামলে) নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছি। তারপরও আমরা যেটা বলে এসেছি সবসময়, আমরা তো একমত হয়েছি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধে। আমরা বলেছি যে ঠিক আছে। আমরা যেটা পার্টি বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে দেওয়া উচিত।’