X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রগতিশীল দলগুলোকে পাশে না পেলে জামায়াতকে ছাড়বে না বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি
০৩ আগস্ট ২০১৬, ২৩:৪৬আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ২৩:৫৩

বিএনপি খালেদা জিয়ার প্রস্তাবিত জাতীয় ঐক্যে প্রগতিশীল দলগুলোকে না পাওয়া গেলে, ১৭ বছরের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে হারাতে রাজি নয় বিএনপি। অপরদিকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে প্রগতিশীল সমমনা দলগুলো সম্মত হলে, প্রধান শরিক এই দলটিকে ২০ দলীয় জোটের বাইরে রাখার ‘ঝুঁকিটুকু’ বিএনপি নেবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারক একাধিক নেতা।
নেতারা আরও জানান, এক দলকে বাদ দিয়ে দশ দলকে পাওয়া গেলে জামায়াতকে ছাড়তে অসুবিধা নেই।
জানা যায়, কৌশলগত কারণে এ মুহূর্তে সরাসরি জামায়াতের পক্ষে বা বিপক্ষে দৃশ্যমান কোনও অবস্থান নিতে রাজি নন বিএনপি নেতারা। নেতাদের মতে, সরকারের বাইরে থাকা প্রগতিশীল দলগুলো শেষ পর্যন্ত কী করে, তা দেখেই জামায়াত-প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। তা না হলে, ‘অকারণে’ এখন জামায়াতকে বিদায় করা হলে, তা আগামী ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির এখন আলোচনা চলছে। আপাতত দলটির কৌশল হলো: আলোচনা ও ঐক্য দুটিই হবে ২০ দলীয় জোটকে বাইরে রেখে, শুধুমাত্র বিএনপির নেতৃত্বে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই  জামায়াতকে কৌশলগতভাবে দূরে রাখা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আলোচনা করে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এখনও। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও শুরু হয়নি।

স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘জামায়াতকে বাদ দিয়ে  অন্য দলগুলোকে জোটে পাওয়া গেলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি লাভবান হবে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে অন্য কেউ না এলে কোন কারণ ছাড়াই জামায়াতকে দূরে ঠেলে দেওয়া সম্ভব নয়।’ 

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হলো একটি দল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দলটিকে আর ২০ দলে রাখার প্রয়োজন নেই। জামায়াত এখন আর বিএনপির জন্য ‘সম্পদ নয়, বোঝা।’

শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিস্তারিত না হলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনায় জামায়াত প্রসঙ্গ যে একেবারে আসেনি সেটি ঠিক নয়। হয়তো বিস্তারিতভাবে বলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিএনপির নেতৃত্বে যে বৃহত্তর জোটের কথা বলা হচ্ছে সেখানে সবাই জানেন, জামায়াতবিরোধী দলগুলোকেই ডাকা হচ্ছে।

এমাজউদ্দিন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এটি হঠাৎ করে বলা সম্ভব নয়, সম্মানজনকও নয় যে, ২০ দলের বৈঠকে বললাম, তোমরা আর এসো না। ফলে জামায়াত চলে যেতে পারে এমন ‘এক্সিটে’র কথা বিবেচনায় রেখেই প্রেসক্লাবে কথাগুলো বলা হয়েছিল।’   

এমাজউদ্দিন আহমেদের ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহেরের দেওয়া এই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমাজউদ্দিন সাহেবরা কোন উদ্দেশ্যে কার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলছেন, তা বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘২০ দলীয় জোট এমাজউদ্দিন সাহেবকে কোনও মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। এ জোটের পক্ষ থেকে কথা বলার অধিকার তার নেই।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতের এ প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ যা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে বিএনপির কোনও সম্পর্ক নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। কারণ, এ প্রশ্নে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে। বৃহত্তর ঐক্যের জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সেখানে অগ্রগতি হলে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আরও কী কী প্রয়োজন, বিএনপির দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বলেন, ‘সবদিক বিবেচনায় নিয়েই বিএনপির অবস্থান নেওয়া উচিৎ। এমাজউদ্দিন সাহেব হয়তো দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে এবং বিএনপিকে বাঁচানোর জন্যে জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তার এ বক্তব্য বিএনপি এড়িয়ে গেলেও  ক্ষতি ছিলো না।’
বিএনপির প্রস্তাবিত বৃহত্তর ঐক্যের জন্য তৎপর সুধী সমাজের এই প্রতিনিধি আরও বলেন, ‘জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটে রাখা বা না রাখার বিষয়টি বিএনপির নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে এ প্রশ্নে বেশি কৌশল করলে বিএনপি বোকামি করবে।’

সিপিবি ও বাসদ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্যের জন্য প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির প্রাথমিক আলোচনায় জামায়াত প্রসঙ্গটি সবচেয়ে বেশি উঠলেও শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে বিএনপি ছাড়তে পারবে না বলে মনে করে এই দুটি দল। এদিকে গণফোরাম. বিকল্প ধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও জামায়াতের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। জামায়াতকে না ছাড়লে এর কোনও একটি দলও বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে রাজি হবে না।

সূত্রমতে, দলগুলোর এই রাজনৈতিক অবস্থানের কথা বিএনপির তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত অবগত। জামায়াত বিষয়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে এখন শুধু দলগুলোকে পাশে পাওয়ার অপেক্ষা, এমনটিই জানিয়েছেন নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র। 

/এইচকে/ 

আরও পড়ুন: আগাম নির্বাচনের পথে যেতে পারে সরকার !

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
নীরবে মামুনুল হক,  শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
নীরবে মামুনুল হক, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক