২০১৩ সালের ৫ মের অবরোধ-বিক্ষোভের পর এবারই (শুক্রবার) প্রথম মাঠে নামল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। বরাবরের মতো এদিনের কর্মসূচিতেও সক্রিয় ছিলেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। হেফাজতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও আমন্ত্রণ না জানালেও জুমার নামাজের পর সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অন্তত দুই শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়। এই সময় ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জামাল উদ্দিনকেও দেখা গেছে। মিছিলে শিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের নিজস্ব স্লোগান, ‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’, ‘নাস্তিকদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’-এও সরব হয়েছিলেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের রিটের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে হেফাজত। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত মিছিলপূর্ব সমাবেশে সংগঠনের ঢাকা মহানগরের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় তারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, ইসলাম ধর্ম সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। কর্মসূচিতে ঢাকার বারিধারা জামিয়া মাদানিয়া, জামিয়া রাহমানিয়া, মালিবাগ মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসাসহ ঢাকার হেফাজত অনুসারী উল্লেখযোগ্য মাদ্রাসার অন্তত সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকেও দেখা গেছে তাদের সঙ্গে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশে পল্টন থেকে দৈনিক বাংলা মোডে অবস্থান নেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। সড়কটির আইল্যান্ডের ওপরে, পল্টন থেকে দৈনি বাংলা যাওয়ার দিকটিতেও বেশ কয়েকজনকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ সময় সড়কের পাশে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি জামাল উদ্দিনকে দেখা যায়।
মিছিল শেষে ফিরতিপথে কথা হয় ছাত্র শিবিরকর্মী মাহবুবুল ইসলামের সঙ্গে। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ পর্বে অধ্যয়ন করছেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আমি মুসলিম হিসেবে, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে, এই দাবিতেই হেফাজতের বিক্ষোভে এসেছি। এই দেশে ইসলামি আইন থাকা উচিৎ। এটা মনের ভেতর থেকে আসে। তাই হেফাজতের কর্মসূচিতে এসেছি।
সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দাসংস্থা দুজন দায়িত্বশীল সদস্য জানান, হেফাজতের সমাবেশ অন্তত ৫ থেকে ৬শ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের দেখা গেছে তাদের নিজস্ব স্লোগান দিতে। ‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’, ‘নাস্তিকদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’-শীর্ষক স্লোগান দিয়েছেন তারা।
যদিও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মুখে স্লোগান ছিল, ‘বীর মুজাহিদ জাগরে জাগ, আহমদ শফী দিচ্ছে ডাক’, ‘রক্ত দিয়ে লিখব নাম, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম,’ ‘রাজপথে হেফাজত, কায়েম হবে শরীয়ত’ শীর্ষক স্লোগান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান করিনি. দাওয়াতও দেইনি। তিনি বলেন, এটা ইসলাম ধর্মের ব্যাপার। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাপা সবাই আসতে পারে। এটা নির্দলীয়। এমনকি বামধারা কেউ আসতে পারে, যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চায়।
হেফাজতনেতা ও ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের মহাসচিব অধ্যাপক আবদুর করিম বলেন, আমাদের কাছে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত একই। তাদের আমরা বলিনি।
দায়িত্বশীল গোয়েন্দাসূত্র জানায়, শুক্রবারের সমাবেশে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চারহাজার নেতাকর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। যদিও আব্দুর রব ইউসূফ দাবি করেন, মিনিমাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার জমায়েত ছিল।
আবদুর রব ইউসূফী জানান, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হলেও হেফাজত আইনি লড়াইয়ে যাবে না। তিনি মনে করেন, সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় এই বিতর্কের অবসান করা উচিত।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/এমএনএইচ/