সংকট মোকাবিলায় ছয়টি অর্থনৈতিক প্যাকেজের প্রস্তাব করেছে জাসদ। শুক্রবার (১২ আগস্ট) দলের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এসব প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, আফরোজা হক রীনা, আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, শওকত রায়হান, রোকনুজ্জামান রোকন ও ওবায়দুর রহমান চুন্নু।
সভায় গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাব
জাসদ মনে করে, বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বাস্তবসম্মত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকার ভারসাম্য বজায় রেখে কৃষি ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর রাখা, অসহায়-নিরুপায়-আয়হীন-কর্মহীন মানুষকে নগদ অর্থ-খাদ্য-ত্রাণ ও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করে জাতীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় অর্থনীতির সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন।
আন্তর্জাতিক সংকট বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বর্তমানে যে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে সেটা মোকাবিলা করা সম্ভব উল্লেখ করে দলীয়ভাবে জানানো হয়েছে, এই সক্ষমতা জাতীয় অর্থনীতির আছে। করোনা মোকাবিলায় জাতীয় অর্থনীতি সেই সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন অস্থিরতা ও দিশেহারা ভাব পরিহার করা। সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করা।
জাসদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা মোকাবিলায় এবং ভবিষ্যতের যেকোনও সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি আগামী ছয় মাসের জন্য সরকারকে বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ গ্রহণ করতে হবে।
জাসদের ছয়টি প্রস্তাব হচ্ছে-
১. সরকারকে অস্থিরতা ও দিশেহারা ভাব ঝেরে ফেলে বর্তমান সংকটের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ, সমীক্ষা, চিত্র এবং এগুলো সমাধানের বাস্তব ও যৌক্তিক পথ এবং উপায় সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের সামনে সুস্পষ্ট, স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা।
২. আগামী ছয় মাসের জন্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। জ্বালানি তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। প্রয়োজনে বাজেটের বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ সমন্বয় করে জ্বালানি খাত, কৃষি খাত ও সারের দাম কমাতে ভর্তুকি দিতে হবে।
৩. রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সম্পদের ওপর সরাসরি কর বৃদ্ধি, কর-ভ্যাট আদায়ে অটোমেশন চালু, জাতীয় পরিচয়পত্র ও গণশুমারির তথ্য ধরে করের আওতাবহির্ভূত কর ফাঁকিদাতাদের চিহ্নিত করে করের আওতায় আনা, দেশের ৯ লাখ হাট-বাজারের করের আওয়াতাভুক্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে করের আওতায় আনতে হবে।
৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বর্তমান বাস্তব চিত্র স্বচ্ছ ও সুস্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরে এ খাতে নীতি-কৌশলগত ভুল ত্রুটি, সমন্বয়হীনতা, অপচয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, অলাভজনক ব্যয়, পদ্ধতিগত লোকসান, দুর্নীতি, লুটপাটের যত অভিযোগ সামনে এসেছে সেগুলোর যৌক্তিক জবাব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতির পুনর্মূল্যায়ন করে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। তার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে পুনর্গঠন করতে হবে।
৫. ‘বিলাসী দ্রব্য’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয় আমদানির সংজ্ঞা’ সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের ঘোষণা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় ও বিক্রয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে তা কঠোরভাবে দূর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে হবে।
৬. নিরুপায় ও অসহায়, আয়হীন, কর্মহীন মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাত ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও প্রসারিত করতে হবে।
