যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিরোধী দলগুলো। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতেই এই মহাসমাবেশ করবে তারা। এই সময়ের আগেই সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন মঞ্চের নেতারা। আর সেটা না হলে জনগণ ২৮ তারিখের পর সরকারকে গলায় গামছা বেঁধে নামাবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত গণসমাবেশে জোটের শীর্ষ নেতারা এই আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দুর্গাপূজায় যদি কোনও অঘটন ঘটে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আপনারা (সরকার) মনস্থির করেন, কীভাবে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আগামী ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশ আছে। এর আগেই মনস্থির করেন। সেটা না হলে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো জনগণ আপনাদের গলায় গামছা বেঁধে ক্ষমতা থেকে নামাবে। আরেকটি শাপলা চত্বর করতে গেলে জনগণ সেটি প্রতিহত করবে। জনগণ আর ভয় পায় না। তাই জনগণের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের পাখা গজাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিরোধীদের রাস্তা দখল করতে দেবে না। আমরা এখানে রাস্তা দখল করেছি। বিজয়নগরে অন্যান্যরা সমাবেশ করছে, নয়াপল্টনে বিএনপির লাখো মানুষ। আর উনি বলছেন রাস্তা দখল করতে দেবে না। এই সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তলে তলে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ভারতের সঙ্গে কথা হয়েছে কিন্তু কিচ্ছু নাই, সব খালি। এরা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। সারা দেশ, বিশ্ব আমাদের পক্ষে। আমরা জানি, আমরা জিতবো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গতকাল তথ্যমন্ত্রী বলেছে, আগামী তিন মাস নাকি সরকারকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। তাহলে গত পনের বছরে কী করেছেন যে আপনাদের পাহারা দিয়ে রাখতে হবে? লুটের টাকা রক্ষা করতে তারা পাহারা বসাতে চায়। আরেকটা হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকা মানে বেহেশতে থাকা। তাই আজকে বেহেশত থেকে বের হয়ে যেতে হয় কিনা সে জন্য পাহারা। কোনও পাহারা দিয়ে এই সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, বিরোধীদের ওপর তারচেয়ে বড় আক্রমণ হবে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উনি স্বীকার করে নিয়েছেন শাপলা চত্বরে সরকার মানুষ খুন করেছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, 'এই দেশে আর রাতে বাক্স ভরার ভোট হবে না। দেশে কতজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত। এরা আরেকবার ক্ষমতায় এলে মানুষকে কী পরিমাণ অত্যাচার, নির্যাতন করবে তার সীমা নাই।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ক্ষমতার লোভে এই ফ্যাসিবাদী সরকার গতকাল কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। বলেছে, তারা যদি ক্ষমতায় না থাকে তাহলে নাকি উন্নয়ন ব্যাহত হবে। হায়রে উন্নয়ন! দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে যে দেশের রিজার্ভ তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কতটা বেহায়া হলে তারা কোর্টের দ্বারস্থ হয়। আমরা বলতে চাই, আপনাদের (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতা ছাড়তে হবে। আগামী ১০ নভেম্বরের আগে আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। তাই এখনও সময় আছে, পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।