বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, আমাদের ভোট বর্জনের আহ্বানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সমর্থন দিয়েছিলেন। তারাও কেউ কেউ ভোট দিতে যাননি। কিন্তু আমরা আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারিনি।’
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং এখন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে জানিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা কোনও অভ্যুত্থান করতে পারিনি। নানা রকম পরিবেশের কারণে সেটা আমরা করতে পারিনি। আমাদের সংবিধান ও আইনের সংকট ছিল। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা সংবিধানকে তাদের ইচ্ছা মতো করে ছিঁড়ে টুকরো করছে। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পরিচালিত করছে, এরমধ্যে আমরা পড়ে গেছি । তারা তাদের সংবিধানের বাইরে আর কিছু হতে দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ব্যবসায়ীদের হাতে বেশিরভাগ রাজনীতি চলে গেছে। তারা তাদের মুনাফা উদ্ধার করছে এবং মানুষকে শোষণ করছে। কীভাবে মেহনতি মানুষকে পিষ্ট করে নিজের প্রতিপত্তি বাড়াবে, সে চেষ্টা করছে। বর্তমান সংসদের বড় একটি অংশ ব্যবসায়ী। এই যে ব্যবসায়ীদের হাতে রাজনীতি চলে যাওয়া, রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি না থাকা, এটাও একটা বড় কারণ।’
বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন বলতে আর কিছু নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘সেটি এখন এ সরকারের হাতে বন্দি। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সংকটগুলো আমরা দূর করতে পারিনি। বিশ্ব রাজনীতির যে খেলা— সেটা আমাদের সাধারণ জনগণ বোঝেনি। আমরা তাদেরকে বুঝাতে পারিনি। সেটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা জানতাম নির্বাচনটা হয়ে যাবে। আমাদের হাতে নির্বাচন প্রতিহত করার কোনও অস্ত্র ছিল না। আমাদের আন্দোলন ক্ষমতার লড়াই নয়। আমরা রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে চেয়েছি। যেখানে সত্যিকার অর্থে মানুষের কল্যাণে রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হবে। যেখানে মানুষের মৌলিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আগামী দিনে আমাদের প্রধান টার্গেট হবে এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে দূর করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ের সেই ছাত্র ও সুশীলসমাজ আর নেই। যারা লড়াই করেছেন দেশের জন্য ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। তখনকার যে সুশীলসমাজ ছিল, সেই মধ্যবিত্ত সুশীলসমাজ। তারা ছিল বিবেকবান এবং সত্য কথা যারা লিখতেন, তাদের লেখা পড়ে তখনকার ছাত্রসমাজ গণআন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। সেই সুশীলসমাজ এখন আর নেই। আজকে ছাত্রসমাজে দেখা যাচ্ছে— হেলমেট বাহিনী, দুর্নীতি এবং নানা রকম কর্ম পরিধি। আজকে সুশীলসমাজ দ্বিধা বিভক্ত। সত্যিকার যে মধ্যবিত্ত সুশীলসমাজ ছিল, বাংলাদেশে যে একটা মূল্যবোধ ছিল, সেই মূল্যবোধ ও সমাজ ব্যাবস্থা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তবে এখনও কিছু লেখক আছেন, যারা এখনও সঠিক কথা লেখেন। এখনও তারা সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন— গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।