X
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৭ মাঘ ১৪৩১

মতবিরোধ থাকলেও সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে এক থাকতে হবে: গণতন্ত্র মঞ্চ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
১২ জুলাই ২০২৪, ২০:১৬আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৪, ২১:২৬

সরকার পতনের আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, যেসব রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী আন্দোলন করছি, তাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু সবাই মিলে একটি কাজই করতে হবে—এই সরকারের পতন। আমরা যদি অতীত দেখি, তাহলে দেখা যাবে আমরা কেউ কেউ আলাদা হয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের বরং আরও বেশি যুক্ত হতে হবে। অন্যদেরও যুক্ত করতে হবে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ‘যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা ও একদফা ঘোষণা’র বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মঞ্চের নেতারা।  

আলোচনা সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আমাদের পেছনে ১৫ বছর আছে। এই ১৫ বছরে আমাদের সাফল্য কতটুকু, ব্যর্থতা কতটুকু; সেটা ভাবতে হবে। আমাদের আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। প্রয়োজনে এই কোটা সংস্কারের দাবিও আমাদের ১৫ দফার মধ্যে আনতে হবে, যাতে আমরা ছাত্রদেরও আমাদের আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং বড় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পারি। সবাই মিলে লড়াইটা করতে হবে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ তখনই লড়াই করতে আসে, যখন সে মনে করে এই লড়াই তাকে কিছু দেবে। এই যে ছাত্ররা হুলুস্থুল করে দিয়েছে, এমন হুলুস্থুল আমরাও তো করতে পারিনি। কাল যখন পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করেছে, এই ব্যারিকেড যে ভাঙা যাবে—এই কথা আমরাও ভাবতে পারিনি। আমাকে অন্তত তিন জন ফোন করে বললো, দেখেন কীভাবে ছাত্ররা ব্যারিকেড ভাঙছে। পুলিশ প্রচণ্ড নির্যাতন করেছে কুমিল্লায়, হামলা করেছে চট্টগ্রামে, বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড দিয়েছে, ছাত্রলীগ পাল্টা মিছিল করেছে। তারপরও ছাত্ররা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে, পুলিশ পরাজিত হয়েছে। এই ছাত্রদের মুখে আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, সেই সংস্কারের দাবি নেই। ওই ছাত্রদের কর্মসূচির মধ্যে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি নেই। কেন নেই বলেন তো? ওরা ছাত্ররাজনীতি জাতীয় রাজনীতি থেকে আলাদা দেখতে চায়?’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ৫৩-৫৪ বছর পরে একটা জাতিরাষ্ট্র তাদের নিয়োগ পদ্ধতি কী হবে, মেধার ভিত্তিতে, যোগ্যতার ভিত্তিতে; এটা নিয়ে জাতির মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কোটা আন্দোলন ইতোমধ্যে জনগণের মন স্পর্শ করেছে। ছাত্র-তরুণরা বাস্তবে সমগ্র জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে এখন প্রতিনিধিত্ব করছে।’

এই কোটা আন্দোলন এটা মামলা-মোকদ্দমার বিষয় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়, এটা একটা প্রশাসনিক বিষয়। সুতরাং আজ সরকারকে নীতিগতভাবে কোটা সংস্কারের দাবি গ্রহণ করে খুব দ্রুত একটা কমিশন গঠন করে কীভাবে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ হবে; সে ব্যাপারে একটা কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে তারা দাপট দেখাবে, এটাই তাদের (সরকার) কাজ। এই ফ্যাসিস্ট সরকার কোনও কথাই শুনছে না। আমাদের আন্দোলনের জায়গায় যেতে হবে। মানুষ আশা করে বিরোধী দলগুলো আবার বড় আকারের সংগ্রাম গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। সেই লড়াই গড়ে তুলবেন, এই আশাবাদ আমি রাখছি।‘

৩১ দফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ এই শাসন উৎখাত করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে এবং সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা ৩১ দফা। আমরা কেবল আশা দিয়ে, একটা স্লোগান দিয়ে এটা শেষ করিনি। কীভাবে বাংলাদেশ হবে, সেটাও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট ও গণবিরোধী একটা জায়গায় পরিপূর্ণভাবে নিমজ্জিত হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের (আওয়ামী লীগ) কোনও প্রস্তাব নেই। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে, এই জমিদারি, এই ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত; এটাই চলতে থাকবে, এটাই চিরস্থায়ী হবে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন করে এই ডাক আমাদের নিয়ে যেতে হবে, এই ডাক জাগ্রত করতে হবে। সমাজের নানান অংশ আজকে জেগে উঠছে। বিশেষ করে ছাত্রসমাজ যেভাবে জেগে উঠেছে, শিক্ষকরা পর্যন্ত আন্দোলন করছেন। সরকারের নিজের পক্ষের লোকদেরও আর রাখতে পারছে না। এই ফ্যাসিস্ট শাসন সমাজের সব অংশে তাদের সব অধিকার ও তাদের মর্যাদা কেড়ে নিচ্ছে। এই লড়াইগুলো আরও জোরদার হবে।

এসময় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া রব এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।

/এএজে/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
অন্তর্বর্তী সরকার গরিব মানুষের কল্যাণে একটা কাজও করেনি: মান্না
গণতন্ত্র মঞ্চের বিবৃতিনাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে
সংস্কারকে নির্বাচনের বিপরীতে হাজির না করার আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের
সর্বশেষ খবর
সমাজবিরোধীরা কোনও ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা
সমাজবিরোধীরা কোনও ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়: নাহিদ ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়: নাহিদ ইসলাম
আ.লীগ ভারতের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করেছে: চরমোনাই পীর
আ.লীগ ভারতের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করেছে: চরমোনাই পীর
প্রবাসীর স্ত্রী-মেয়েকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি, ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার
প্রবাসীর স্ত্রী-মেয়েকে জিম্মি করে চাঁদা দাবি, ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আল্টিমেটাম, না করলে শাটডাউন
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আল্টিমেটাম, না করলে শাটডাউন
‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
সমীক্ষাতেই ব্যয় ১৩৬ কোটি টাকা‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
ভাঙছে সাইফ-কারিনার সংসার?
ভাঙছে সাইফ-কারিনার সংসার?
৩২ নম্বরে মিলেছে হাড়গোড়, পরীক্ষা হবে ল্যাবে
৩২ নম্বরে মিলেছে হাড়গোড়, পরীক্ষা হবে ল্যাবে
চট্টগ্রামে দুই থানার ওসিকে বদলি
চট্টগ্রামে দুই থানার ওসিকে বদলি