জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, সংস্কার না করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে কোনও দলীয় সরকার জনগণের অধিকার দিতে চাইবে না। ডেমোক্র্যাসি হবে না। আবার দলীয় শাসন কায়েম হবে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু আবারও অভ্যুত্থান করবে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, বিপ্লব হলো—সেটা আমি তিন বছর আগে থেকে বলে আসছি, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। এটা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। ছাত্ররা আপনারা আন্দোলন করবেন, কিন্তু অতি বিপ্লবীও ভালো না আবার, সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়িও ভালো না। এই যে মব জাস্টিস, পিটিয়ে মেরে ফেলা, পিটিয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া, এটা কিন্তু ঠিক না। তাহলে হাসিনা সরকারের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়? ’
তিনি বলেন, ‘আজকে একটি কথাই বলবো, সাহসের কোনও বিকল্প নাই। অন্যায়কারী, জুলুমকারীর সঙ্গে পশুর কোনও পার্থক্য নাই। মানুষের সঙ্গে পার্থক্য—মানুষের বিবেক আছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। সেই দেশে আপনি (শেখ হাসিনা) কথা বলতে দেন না। পালিয়ে গেছেন। আমি জানি না কী হবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে। তবে একটা হত্যার জন্য যদি একজনের ফাঁসি হয়, তাহলে হাজার হাজার লোককে হত্যার জন্য কী হবে আমি জানি না। প্রত্যেকটি হত্যার বিচার, প্রত্যেকটি খুনের বিচার চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে আ স ম রব বলেন, ‘আপনার কমিশন তো ঘুমিয়ে গিয়েছে। আপনাদের সব কমিশন ঘুমন্ত হয়ে গিয়েছে। এদের জাগান। এদের বলেন, মানুষ কিন্তু সংস্কার দেখতেছে না। মানুষ কিন্তু শান্তির জন্য, সুখের জন্য, ভাত খাওয়ার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। নির্বাচনের জন্য প্রাণ দেয় নাই। তাই সংস্কার না করে যদি নির্বাচন হয়, কোনও দলীয় সরকার জনগণের অধিকার দিতে চাইবে না। ডেমোক্র্যাসি হবে না। আবার দলীয় শাসন কায়েম হবে। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু আবারও অভ্যুত্থান করবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। সেখানে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি যে সংস্কারের কথা বলছেন এই সংস্কারের মানে কী? আপনার যা মনে হবে সেই সংস্কার আপনি জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবেন? ড. ইউনূস আমাদের ধারণা মতে এখনও জনগণের পক্ষের লোক। উনি বলেছেন ‘আমি এরকম সংস্কার চাই না।’ আমরা জানতে চেয়েছি আপনি কীরকম সংস্কার করবেন। একটাই পথ আছে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেন। সেই কথার মধ্য দিয়ে ঠিক করেন—সবাই মিলে কোন কোন জিনিস চায়।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচনের যাত্রাটা শুরু হলো। নির্বাচনের ট্রেনের যে যাত্রাটা শুরু করেছে—এই নির্বাচনি ট্রেন কোথাও থেমে যাবে না। কোনও খাদে তারা পড়বে না। আমরা আশা করি দক্ষ, যোগ্য, সম্মানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধান ৭২ সালেই প্রতিষ্ঠাকালে একটা স্বৈরাচারী ক্ষমতা কাঠামোর সংবিধান। এই কথা সেই সময়ের জাসদ নেতারা অন্যভাবে উপস্থাপন করেছিলেন। সে সময় মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ন্যাপ নেতা প্রফেসর মোজাফফর আহমদও বলেছিলেন বাহাত্তর সালে যেভাবে সত্তরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে গণপরিষদ ঘোষণা করা হলো, তার মধ্য দিয়ে একাত্তর সালের মুক্তি-সংগ্রামকে অস্বীকার করা হয়েছে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।