X
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৩১ বৈশাখ ১৪৩২

উদ্যানে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করা নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী: সারজিস

ঢাবি প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৫, ১২:৪৯আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ১২:৪৯

উদ্যানে দোকান বসানো চাঁদাবাজ ছাত্রনেতারাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। 

বুধবার (১৪ মে) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। পাশাপাশি সারজিস মনে করেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য ও প্রক্টরের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা মূল ঘটনাকে আড়াল করার পাঁয়তারা।

চাঁদাবাজ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, ঘটনা ঘটেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শৃঙ্খলার দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের না। দ্বিতীয়ত, এই উদ্যানের মাদক সেবন, হেনস্তা, চাঁদাবাজিসহ যাবতীয় অপকর্ম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয় বরং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কিংবা প্রভাব খাটানো বিভিন্ন সংগঠন এবং তাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে থাকে। উদ্যানের গেট এবং উদ্যানের ভেতরের অংশে ভাসমান দোকান দিয়ে বস্তি বানানো, মন্দিরের গেটের আশেপাশে এবং পুরো ক্যাম্পাসে শতাধিক ভাসমান দোকান ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্টের অন্যতম কারণ। এই দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসায়নি, বরং ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কোনও না কোনও সংগঠনের কিছু চাঁদাবাজ নেতাকর্মী বসিয়েছে। তারা এর ভাগ নেয় এবং প্রটেকশন দেয়।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব অপকর্মে প্রশ্রয় দেয় এবং নিজের ভাগ বুঝে নেয়। কেউ ভালো উদ্দেশ্যে কাজ করতে চাইলে তাকে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন নেতাকর্মীর দ্বারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এগুলো উচ্ছেদ করতে যায়, তখন তাদের বাধা দেওয়া হয়, ক্ষমতার দাপট দেখানো হয়। উদ্যানের গেট যখন বন্ধ করা হলো তখন এই গেট খুলে যারা গেটের ভেতরে ও বাইরে পঞ্চাশের অধিক দোকান বসিয়েছে, তারা এই হত্যার পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে অন্যতম দায়ী।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেট্রোরেল স্টেশন এবং শহীদ মিনারকে ব্যবহার করে যারা সেখানে শতাধিক ভাসমান দোকান বসিয়ে, চাঁদাবাজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে, তারা এমন হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে দায়ী। যারা উদ্যানের ভেতরে মাদকের সিন্ডিকেট চালায়, মাদক সাপ্লাই দেয়, মাদক সেবনের পরিবেশ তৈরি করে এবং সেখান থেকে চাঁদাবাজি করে তারা এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে পরোক্ষভাবে দায়ী।’

সারজিস তার পোস্টে আরও লেখেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কখনও একটা শহরের মানুষের চা, পান, সিগারেট খাওয়ার, আড্ডা দেওয়ার কিংবা অবাধ মেলামেশার জায়গা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিএসসির ভেতরের ক্যাফেটেরিয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য যাবতীয় চা, কফি, নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে‌। কিন্তু সেই ক্যাফেটেরিয়াকে অকার্যকর করে টিএসসিতে প্রায় ৩০টা চা দোকানের আসর বসানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো বন্ধ করতে যাক, দেখবেন একদল ভণ্ড এবং সো-কল্ড লিবারেল সুশীল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের বদহজম শুরু হয়েছে। তাদের চেতনা থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো লাভার নির্গমন শুরু হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে অনেকটাই অপ্রয়োজনীয় এই চা দোকানগুলোতে প্রতিদিন পুরো ঢাকা শহর থেকে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে আসে। সঙ্গে কিছু বখাটে মাদকসেবীও আসে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে। যারা টিএসসির এই দোকানগুলো রাখতে বাধ্য করেছে এবং যারা চাঁদাবাজি করছে তারাও এই হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী।’

তিনি লেখেন, ‘দোয়েল চত্বরের এক পাশে প্রায় ৩০টার মতো বিভিন্ন কারুকার্যখচিত পণ্যের দোকান এবং অপর পাশে প্রায় ২০টা গাছের দোকান বসানো হয়েছে। দেখতে সুন্দর লাগলেও এখানেও প্রতিদিন হাজার হাজার খদ্দের ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এবং পুরো ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধি করে। যানজট সৃষ্টি করে। অবৈধভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে লাখ লাখ টাকা প্রতি মাসে কারা এখান থেকে চাঁদাবাজি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। তারাও এই হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টিতে পরোক্ষভাবে দায়ী।’

পদত্যাগের বিষয়ে সারজিস বলেন, ‘আমার যেকোনও একজন ভাইয়ের হত্যা হওয়া তো দূরের কথা, তার গায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত একটা আঘাত প্রত্যাশা করি না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের কাজগুলো করতে দেবো না, নিজেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য অবৈধ দোকান বসাবো, মাদকের ব্যবসা চালাবো, চাঁদাবাজি করবো, বহিরাগত নিয়ে আসার যাবতীয় আয়োজন করবো, আর কোনও একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টরের পদত্যাগ চাইবো; এইসব দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে।’

এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের ভাই সাম্যের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সাম্যের মতো আর কোনও ভাইকে যেন হারাতে না হয় কিংবা কারো গায়ে আঘাত না লাগে, তার যথাযথ ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অনতিবিলম্বে কার্যকর দেখতে চাই।’

এর আগে আরেকটি পোস্টে তিনি বলেন, ‘সময়ের সাথে সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের আখড়া। অথচ এই উদ্যান সংলগ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং অফিস থাকা সত্ত্বেও তারা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন না নিয়ে এসবের ভাগীদার হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের অনেক ভাই বোনকে বিপথে যেতে দেখেছি, একাধিক প্রাণনাশের ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল সাম্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখেছি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক আর বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে নিয়মিত সাঁড়াশি অভিযান চালানো হোক, উদ্যান এলাকা সম্পূর্ণ নজরদারিতে আনা হোক, অপ্রয়োজনীয় ইট পাথরের অবকাঠামোগুলোকে ভেঙে প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।’

এদিকে এনসিপির দক্ষণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক পোস্টে লেখেন, ‘আমাদের ভাই সাম্যর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর যেন অন্তত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক, চাঁদাবাজি ও অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কঠোর নজরদারীর আওতায় আনার তাগিদ অনুভব করে।’

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সাম্যের মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা, এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি
সাম্যের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন বড় ভাই সাগর
সর্বশেষ খবর
সেলিব্রিটি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন রাজ-সিয়াম
সেলিব্রিটি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন রাজ-সিয়াম
সাম্যের মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা, এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া
সাম্যের মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা, এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি
লিবিয়ার রাজধানীতে চলছে সংঘাত, আতঙ্কে স্থানীয়রা
লিবিয়ার রাজধানীতে চলছে সংঘাত, আতঙ্কে স্থানীয়রা
সর্বাধিক পঠিত
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
রাতে চিয়া বীজ খেলে এই ৬ উপকার পাবেন
বাড়লো স্বর্ণের দাম, বুধবার থেকে কার্যকর
বাড়লো স্বর্ণের দাম, বুধবার থেকে কার্যকর
রাজধানীতে ৩০০ লিমিটেডের যাত্রা শুরু
রাজধানীতে ৩০০ লিমিটেডের যাত্রা শুরু
শেখ হাসিনাকে অবসরে গান শোনাতেন মমতাজ: পাবলিক প্রসিকিউটর
শেখ হাসিনাকে অবসরে গান শোনাতেন মমতাজ: পাবলিক প্রসিকিউটর