বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অসহনীয়ভাবে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানবিক তহবিল দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এর মধ্যে একমাত্র আশার আলো সিরিয়ায় বাস্তুচ্যুতদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বৃদ্ধি করা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বার্ষিক ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট’ প্রকাশিত তথ্যে এসব কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ১২ দশমিক ১ কোটি; যা গত বছরে একই সময়ে ছিল ১২ কোটি। এটি প্রায় এক দশকের প্রত্যেক বছরেই শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিকেই ইঙ্গিত করে। বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণগুলো হলো—সুদান, মিয়ানমার ও ইউক্রেনের মতো দেশগুলোর সংঘাত এবং যুদ্ধ থামাতে ক্রমাগত ব্যর্থতা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক তীব্র অস্থিরতার সময়ে বাস করছি; যেখানে আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহ এক ভঙ্গুর, মর্মন্তুদ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা তীব্র মানবিক যন্ত্রণার সাক্ষ্য দেয়। শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য আমাদের শান্তি ও টেকসই সমাধানের খোঁজে আরও বেশি প্রচেষ্টা করতে হবে।’
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে রয়েছে—নিজ দেশের অভ্যন্তরে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষ, যাদের সংখ্যা ২০২৪ সালের শেষদিকে ৬৩ লাখ বেড়ে বেড়ে ৭ কোটি ৩৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থী ৪ কোটি ২৭ লাখ। এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে সুদানে। দেশটিতে ১ কোটি ৪৩ লাখ শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ (আইডিপি) রয়েছে। এর আগে এই অবস্থানে ছিল সিরিয়ায় ১ কোটি ৩৫ লাখ। এরপর রয়েছে আফগানিস্তানে ১ কোটি ৩ লাখ এবং ইউক্রেনে ৮৮ লাখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী অঞ্চলে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেয়—এই বিপরীতে জানা যায়, ৬৭ শতাংশ শরণার্থী প্রতিবেশী দেশগুলোতেই আশ্রয় নেন। আর বিশ্বজুড়ে ৭৩ শতাংশ শরণার্থী এই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই রয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ৬০ শতাংশ তাদের নিজ দেশের মধ্যে থেকে যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু ইউএনএইচসিআর’র তহবিল এখনও ২০১৫ সালের সমানই রয়েছে। মানবিক সহায়তায় চলমান কঠোর কাটছাঁটের কারণে শরণার্থী বাস্তুচ্যুতরা আরও অতি ঝুঁকির মুখোমুখি রয়েছে।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি আরও বলেন, ‘বিধ্বংসী কর্তনের মধ্যেও, আমরা গত ছয় মাসে আশার আলো দেখেছি। সিরিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এক দশকেরও বেশি সময় বাস্তুচ্যুত থাকার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটি এখনও ভঙ্গুর এবং মানুষের জীবন পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন। ২০২৪ সালে মোট ৯৮ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৬ লাখ শরণার্থী; যা ২ দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং ৮২ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ। এটি এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।’
তবে, এই প্রত্যাবর্তনের অনেকগুলো প্রতিকূল রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে ঘটেছে। যেমন: ২০২৪ সালে বিপুলসংখ্যক আফগানদের আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল, যারা দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দেশে ফিরেছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মায়ানমার ও দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোতে শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে নতুন করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিও ঘটেছে।
এই প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর’র জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলোর জন্য ক্রমাগত অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। কর্মসূচিগুলো দেশে ফেরত আসা শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সহায়তা করে এবং আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়গুলোতে মৌলিক অবকাঠামো ও সামাজিক পরিষেবাগুলোকে শক্তিশালী করে; যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক অপরিহার্য বিনিয়োগ।