X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আবেগই এখন তাদের যন্ত্রণা!

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩০আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১৩:০৬

বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আবেগই এখন তাদের যন্ত্রণা! শুরুর পর থেকে অভিযোগ আর বিতর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের অভিযোগের ফর্দটা এতই বড় থাকে যে তা মাঝে মাঝে শেষ হয় গভর্নিং বডির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আর ব্রেকিং নিউজের জন্ম দিয়ে। এত প্রতিকূলতার মাঝে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দাবি, তাদের লোকসান হলেও টুর্নামেন্টে তারা ভূমিকা রাখছে ক্রিকেটের প্রতি তীব্র আবেগ ও সুদিনের আশায়। একদিন হয়তো দেখা মিলেবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের। কিন্তু সেই অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর অনেকের কাছে রূপ নিয়েছে যন্ত্রণায়!

বলতে গেলে ‘ক্যাশ রিচ’ টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মডেল অনুসরণ করে যাত্রা শুরু হয়েছিল বিপিএলের। কিন্তু মুখে বলা হলেও কাগজে কলমে নিজেদের মানের আলাদা একটি মডেল প্রতিষ্ঠিত করেছে বিপিএল। প্রশংসার বদলে যাতে প্রতিনিয়ত সঙ্গী থেকেছে নানা বিতর্ক!

তবে একটি কথা নিঃসন্দেহে সত্যি, বিসিবি ঘরোয়া ক্রিকেটের মধ্যে বিপিএলকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতে পারার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। শুধু তাই নয় বিশ্বের অনেক প্রান্তে সৃষ্টি করতে পেরেছে দর্শক চাহিদা। তবে সমান্তরালে ক্ষতির পরিমাণও ছিল চোখে পড়ার মতো। এই যেমন প্রথম দুই সংস্করণে বেতন অনিয়মিত হলে, আবার দেখা দিয়েছে ফিক্সিং বিতর্ক। পরে আবার বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে শুধুমাত্র নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে।

২০১৫ সালে টুর্নামেন্টের নতুন সংস্কারের ফলে অপেশাদারি মনোভাব কিছুটা বিলুপ্ত হলেও কিছু বিষয় রয়ে গেছে এখনও। তার ওপর যোগ হয়েছে নতুন নতুন কিছু সমস্যা। সবশেষ উল্লেখযোগ্য হলো গভর্নিং কাউন্সিল যেভাবে নিজেদের মতো করে টুর্নামেন্টের নিয়ম নীতি পাল্টেছে তা ছিল বিতর্কিত। একই সঙ্গে বাইলজের দোহাই দিয়ে নতুন করে শুরুর ঘোষণা দিয়েছে এই কাউন্সিল। এর পেছনে বিতর্কিত কারণ থাকলেও তা এখন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত।

সঙ্গে টুর্নামেন্টে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর টেনেটুনে চলার অক্ষমতাও যোগ হয়েছে। দূর থেকে দেখলে হয়তো কেউ কেউ মনে করবে বিপিএলে দলগুলো আর্থিকভাবে অনেক উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু ভেতরের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। ৬টি আসর শেষ হয়ে গেলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যা বিনিয়োগ করছে সেই অর্থের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি! তাদের উপার্জনের অন্যতম উপায়ের একটি হলো জার্সি বিক্রি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দেওয়া তথ্য মতে তারা যা বিনিয়োগ করছে তার অর্ধেকও মার্কেট থেকে তুলতে পারেনি। এক্ষেত্রে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত দলের প্রতি মৌসুমে ব্যয় হয় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু উপার্জন বিবেচনায় বেশিরভাগেরই সেই টাকার ২৫ ভাগ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিসিবির কাছে অবশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আলাদা করে অনুরোধও করেছিল লাভের অংশ চেয়ে। টুর্নামেন্ট থেকে যা আয় হয় তার একটি অংশ যেন তাদের দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ‍অনুরোধ পাত্তা দেয়নি বিসিবি। লোকসানে কেউ কেউ তো নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে মালিকানা থেকে। সবশেষ তাতে যুক্ত হয়েছে চিটাগং ভাইকিংসের নাম। যার মালিকানায় থাকা ডিবিএল গ্রুপ এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি নাম প্রত্যাহারের। তবে বিশাল লোকসানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে তারা।

কেউ কেউ লোকসান সত্ত্বেও এই টুর্নামেন্টে এখনও রয়েছে ক্রিকেটের প্রতি আবেগ থেকে। তবে এ ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে তাদের মাঝেও। রংপুর রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী ইশতিয়াক সাদেক জানান, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বহুদিন ধরেই যুক্ত। ক্রিকেট, ফুটবলসহ অন্যান্য ক্রীড়াঅঙ্গনেও সম্পৃক্ত। এটা আর কিছু নয়, শুধু ক্রিকেটের প্রতি গভীর আবেগ থেকে বিপিএলে আমাদের যাত্রা অব্যাহত আছে। আমরা এমন পরিবার থেকে এসেছি যেখানে আমাদের রক্তেই খেলাধুলা সম্পর্কিত। লোকজন হয়তো মনে করে আমরা অনেক টাকা উপার্জন করছি। এমনকি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই মনে করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখন প্রতি বছরে নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দিতে নিয়ম পাল্টানো হচ্ছে। যেটা খুবই দুঃখজনক।’

সবশেষ এই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে বিতর্ক যুক্ত হয়েছে সাকিব আল হাসানকে চুক্তি করানোর পর। আইকন ক্রিকেটার হিসেবে তার চুক্তির বিষয়টি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল অস্বীকার করলে টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়েছে রংপুর রাইডার্স। তাই বির্তক থাকছেই।

তাদের মতো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে একই সুরে কথা বলেছেন রাজশাহী কিংসের প্রধান নির্বাহী তাহমিদ আজিজুল হক, ‘আমরা আসলে আশার ভেলাতে চড়েই টুর্নামেন্টে টিকে আছি। হয়তো একদিন গভর্নিং কাউন্সিল বুঝতে পারবে টুর্নামেন্টকে সফল করতে হলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে কিছু বিনিময়ে দিতে হবে। যারা কিনা খেলাটিকে সফল করতে বিনিয়োগ করে চলেছে।’

লাভের অংশের প্রাপ্তি নিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘লাভ এমন একটি বিষয় যেটাতে গভর্নিং কাউন্সিলের সহায়তা করা প্রয়োজন। বিনোদনের যে কোনও খাতে এটা প্রযোজ্য যেখানে লাভের একটা অংশ ভাগাভাগির বিষয়টি মেনে চলা হয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ব্যয় করে যাচ্ছে কিন্তু বোর্ড, প্লেয়ার কোচ, স্টাফসহ টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্টরা আয়ের সুযোগ পাচ্ছে। তারা ব্যয় করছে এই আশাতেই যে একদিন হয়তো তারা কিছু বিনিময়ে পাবে। সবাই বুঝে একটি ব্যবসা কিন্তু দুই বছরেই লাভ পেতে শুরু করে না। কিন্তু এখানে প্রেরণা দেওয়ার মতো কিছু তো থাকা উচিত।’

 

/এফআইআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
সর্বাধিক পঠিত
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ