X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে ক্রিকেটার অভিষেক

রবিউল ইসলাম
০৫ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০১আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:০০

অভিষেক দাস। তিনবারের জেলা চ্যাম্পিয়ন অভিষেক দাস নড়াইলে জেলা পর্য়ায়ে  ব্যাডমিন্টন  খেলছিলেন ২০১২ সালে । সেখান থেকেই তার ক্রিকেটার হওয়ার পথটা তৈরি হয়। ৬ ফুট দীর্ঘ অভিষেককে দেখে মুগ্ধ হন তার বাবার বন্ধু ক্রিকেট কোচ সৈয়দ মনজুর তৌহিদ তুহিন। তিনি ওই টুর্নামেন্ট চলাকালীন অভিষেকের বাবা অসিত দাসকে বলেন ছেলেকে ক্রিকেটে দিতে। রাজী হয়ে যান অসিত দাস।

অভিষেক ক্রিকেট খেলার জন্য পরিবারের বাধা পাননি, বরং সমর্থনই পেয়েছেন সবসময়। তবু পড়াশোনার কঠিন সূচি মেনে ক্রিকেট খেলা কঠিন হয়ে পড়েছিলো। ২০১৮ সালে অনেক কষ্টে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে চ্যালেঞ্জ সিরিজে খেলেন। ওই সিরিজের প্রথম ইনিংসে তিন উইকেট পেয়ে সুযোগ মেলে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে।

ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনকে ভালো লাগে। তবে মাশরাফিই অভিষেকের আসল অনুপ্রেরণা। মাশরাফির মতই বড় ক্রিকেটার হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দীর্ঘদিন খেলতে চান দেশের হয়ে।

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ যোদ্ধাকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা ট্রিবিউনে। আজ থাকছে পেস বোলিং অলরাউন্ডার অভিষেক দাস অরণ্যর একান্ত সাক্ষাৎকার-

বাংলা ট্রিবিউন: মাশরাফি বিন মুর্তজাই কি ক্রিকেটে আসার পেছনে আপনার বড় প্রেরণা?

অভিষেক: সত্যিই, নড়াইলে জন্ম বলে মাশরাফি ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ফলে তার জীবন-যাপন, তার খেলা আমাকে মুগ্ধ করতো। তাই ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছি।

বাংলা ট্রিবিউন: এ পর্য়ন্ত ক্রিকেটে আপনার জার্নিটা যদি বলেন…

অভিষেক: ছোটবেলায় নড়াইলে টেপ টেনিস দিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু। এলাকার বন্ধু ও বড় ভাইদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। ক্রিকেট বলে খেলা শুরু ২০১২ সালে, নড়াইল জেলার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে । এরপর বয়সভিত্তিক যত খেলা হয় সবগুলোই খেলেছি। আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খুলনা জেলার হয়ে খেলা। ওখানে ভালো খেলে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে সুযোগ পাই। অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৭ দলে ভালো কাটেনি। তারপরও সুযোগ হয় অনূর্ধ্ব-১৮ নড়াইল জেলা দলে। ওখান থেকে  অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে চ্যালেঞ্জ সিরিজে ডাক পাই। ডাক পেয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে যাই।

বাংলা ট্রিবিউন: কী সেই বিপদ?

অভিষেক: তখন আমার এসএসসি পরীক্ষা চলছিলো। তবে ভাগ্য ভালো, পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে খেলতে পেরেছিলাম। চ্যালেঞ্জ সিরিজের ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট পাই । ওখানে ভালো করেই আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে সুযোগ পাই।

অভিষেক দাস। বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো ভালো ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ও ছিলেন, এই নিয়ে কোনও গল্প আছে?

অভিষেক: আমি ক্রিকেটের পাশাপাশি ব্যাডমিন্টনও ভালো খেলতাম, জেলায় তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ২০১২ সালে ওই টুর্নামেন্টটি খেলতে গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমার বাবার বন্ধু ছিলেন কোচ সৈয়দ মনজুর তৌহিদ তুহিন । আমার উচ্চতা দেখে বাবাকে আমার কোচ বলেন, ওকে ক্রিকেটে দাও, দেখো কী হয়। ওখান থেকেই মূলত ক্রিকেটে আসা।

বাংলা ট্রিবিউন: নড়াইলে ক্রিকেটের শুরু কীভাবে?

অভিষেক: আমার শুরুটা বেসিক ক্রিকেট ক্লিনিকে । এটা আমাদের তুহিন স্যারের একাডেমি। আমার এখানে আসার পেছনে সঞ্জীব বিশ্বাস সাজুর অনেক অবদান, তিনি আমাদের নড়াইলের কোচ। উনি মাশরাফি ভাইয়েরও খুব ভালো বন্ধু। উনার অধীনে অনুশীলন করেই আমার এতদূর আসা। যেকোনও সমস্যায় পড়লেই আমি তার কাছে ছুটে যাই।  

বাংলা ট্রিবিউন: মাশরাফির জেলার ছেলে হিসেবে নিশ্চয়ই একটু বাড়তি অনুপ্রেরণা পান?

অভিষেক: মাশরাফি ভাইয়ের এলাকার ছেলে হিসেবে সবসময়ই অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই। তার মতো হতে পারবো কিনা জানি না। তবে স্বপ্ন দেখি মাশরাফির ভাইয়ের মতো দেশসেরা পেসার হওয়ার। তার মতো ভালো মানুষও হতে চাই। আমি নিজের সেরাটা সবসময় দেয়ার চেষ্টা করব। আমার স্বপ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলকে সার্ভিস দেওয়া।   

বাংলা ট্রিবিউন: মাশরাফির সঙ্গে বোলিং নিয়ে কোনও আলাপ হয়?

অভিষেক: বাড়িতে যখন যাই, তার সঙ্গে কথা বলি, পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করি। যখন দেশের বাইরে কোথাও খেলতে যাই, তার সঙ্গে দেখা করে যাই। তার অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটাও যদি নিতে পারি, সেটা আমার ক্যারিয়ারে অনেক কাজে দেবে।

বাংলা ট্রিবিউন:  পরিবারের সমর্থন কেমন পেয়েছেন?

অভিষেক: পরিবার সাপোর্ট না দিলে এতদূর আসতে পারতাম না।  আমাকে কখনওই আমার বাবা-মা-ভাই কোনও কিছু চাপিয়ে দেয়নি। তারা সবসময় বলতো তুমি যা হতে চাও সেটাই করো। আমাদের ইচ্ছে পূরণের জন্য কিছু করতে হবে না। পড়াশোনা নিয়ে  কখনও তেমন চাপ আসেনি।

বাংলা ট্রিবিউন: দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনের জন্য আপনার ব্যক্তিগত প্রস্তুতি কেমন?

অভিষেক: আমার কাছে টিম ম্যানেজমেন্টের অনেক প্রত্যাশা। আমি সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাবো। কঠিন পরিশ্রম করছি, নিজের ভুল এবং শক্তির জায়গা নিয়ে কাজ করছি। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো । এমনিতে শেষ সিরিজগুলো আমার ভালো কেটেছে। সেখানে (দক্ষিণ আফ্রিকা) আমরা কিছুদিন অনুশীলন করার সুযোগ পাবো। আশা করি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবো। আমি তো ইংল্যান্ডেও খেলেছি। আমার মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন অনেকটাই ইংল্যান্ডের মতো। সুতরাং আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: পেস বোলার হিসেবে আপনার শক্তির জায়গা কোনটি?

অভিষেক: সুইংয়ে, আমাদের পেস বোলিং কোচ জাকি স্যার সবসময় আমার সুইং আর পেস নিয়ে কাজ করে আসছেন। প্রায় সবসময়ই সিমে বল ফেলার চেষ্টা করি আর সিমে অনেকটাই হিট করে। বলের গতি ১৩০-এর আশপাশে। আশা করি দক্ষিণ আফ্রিকায় গতিটা আরও বাড়াতে পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: হার্দিক পান্ডিয়া ও শেন ওয়াটসনের ভক্ত হলেন কীভাবে?

অভিষেক: হার্দিক পান্ডিয়ার মতো আমিও হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান। তার মতো আমিও পেস বোলিং অলরাউন্ডার। শেন ওয়াটসনও আমার প্রিয়, কারন তিনিও অলরাউন্ডার। আমি ছোটবেলা থেকেই তাদের অনুসরণ করে আসছি।

বয়স ভিত্তিক দলের জার্সিতে অভিষেক। প্রোফাইল

নাম :  অভিষেক দাস

ডাকনাম : অরণ্য

জন্ম : ৫ সেপ্টেম্বর ২০০১

জন্মস্থান : নড়াইল

উচ্চতা : ৬ ফু্ট

পড়াশুনা : এইচএসসি

প্রথমক্লাব :   বেসিক ক্রিকেট ক্লিনিক

বর্তমান ক্লাব : উদয়াচল ক্লাব

বোলিং স্টাইল: ডানহাতি মিডিয়াম পেসার

প্রিয়ডেলিভারি : আউটসুইং

ব্যাটিং স্টাইল : ডানহাতি ব্যাটসম্যান

প্রিয় শট: পুল

প্রিয়মানুষ : মাশরাফি

প্রিয়ক্রিকেটার : মাশরাফি, শেন ওয়াটসন ও হার্দিক পান্ডিয়া

প্রিয়বন্ধু : মা-বাবা ও ভাই

ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮ নটআউট। তবে ওই সিরিজে বেশ কিছু অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ছিলো।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন। 

/আরআই/পিকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
জাতিসংঘের পানি কনভেনশনে যোগ দিলো বাংলাদেশ
জাতিসংঘের পানি কনভেনশনে যোগ দিলো বাংলাদেশ
চাঁদপুরে বসতঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা
চাঁদপুরে বসতঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা
ব্রিজটাউনে প্রথম দিনেই পড়লো ১৪ উইকেট
ব্রিজটাউনে প্রথম দিনেই পড়লো ১৪ উইকেট
সর্বাধিক পঠিত
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’