২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্রিকেট-বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কার্ডিফের ওই ম্যাচের নায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। তার বীরোচিত ইনিংসের উপর ভর করেই বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে। এক যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরও আগের সুখস্মৃতি বিন্দুমাত্র ভোলেননি আশরাফুল।
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপে স্মৃতিকাতর হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের প্রথম পোস্টারবয়, ‘ম্যাচে নামার আগে আমার মাথায় ছিল, এই ম্যাচে না পারলে দল থেকে বাদ পড়ে যাব। কিন্তু শেষে হিরো হয়েই মাঠ ছেড়েছিলাম। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটা সবচেয়ে বড় জয়ের স্মৃতি। এটা আমাদের ক্রিকেটে বড় অর্জন ছিল।’
বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া ভেন্যু কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্স এখন অনেকটাই বদলে গেছে। এমনকি নাম বদলে রাখা হয়েছে এসএসই সোয়ালেক। তবে নাম বদলে গেলেও স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এখনও সোফিয়া গার্ডেন নামেই পরিচিত। এরই মাঝে কেটে গিয়েছে এক যুগ। তারপরও বিন্দুমাত্র ছন্দপতন হয়নি অজি বধের সুখের কাব্যতে, ‘ওই সময় অস্ট্রেলিয়ার দল বিশ্ব র্যাংকিংয়ের অন্যতম সেরা দল। ওদের সঙ্গে খেলাটাইতো অনেক বড় প্রাপ্তি ছিল আমাদের।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশকে নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছিল। সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য দারুণ একটি সুযোগ খুঁজছিলেন আশরাফুল। ওই ম্যাচের আগে বেশ কয়েক ইনিংসে সেভাবে রানও পাচ্ছিলেন না। সবমিলিয়ে বেশ ভালোই তেতে ছিলেন আশরাফুল। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ওই সময় আমাদের নিয়ে সাবেক ক্রিকেটাররা অনেক বাজে ধরনের মন্তব্য করেছিল। তাই কার্ডিফেই এমন একটা জবাব দিতে চেয়েছিলাম। ওই ম্যাচটি জিতে আমাদের আনন্দ ছিল বাঁধন হারা। কী করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যদিও আমরা ভাগ্যবান ছিলাম।’
কারণটা নিজেই জানালেন সাবেক অধিনায়ক, ‘কেন না টস হারার পরও আমরা বোলিং করেছি। এখানে আগে ব্যাটিং করলে আমার ধারণা আমরা ১০০ রানে আউট হয়ে যেতাম। খুবই ভয়ঙ্কর উইকেট ছিল। ভাগ্যবান যে আমরা আগে বোলিং করে ওদেরকে ২৫০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পেরেছি। এরপর কীভাবে কীভাবে যেন তাড়া করে ফেললাম। তারপরতো ইতিহাসই হয়ে গেল।’
১০১ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলেই সোফিয়া গার্ডেন্সের নায়ক হিসেবে আশরাফুলের নাম ইতিহাসে ঢুকে যায়। তবে শুরুতে কিন্তু স্বাভাবিক ছিলেন না আশরাফুল, ‘ইনিংস শুরু করার আগে মানসিকভাবে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আগের বেশ কয়েকটা ইনিংসে ভালো ব্যাটিং হয়নি। এই কারণে এ ম্যাচে রান করতেই হতো। নয়তো পরের ম্যাচগুলোতে বাদ পড়ে যেতাম। মাঠে নেমে কভার ড্রাইভ, পুল ও সুইপের মাধ্যমে তিনটা চার মারার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। তখনই মনে হয়েছিল আজকে রান করতে পারব। শেষ পর্যন্ত বড় ইনিংস খেলতে পেরেছিলাম।’
সেই ঐতিহাসিক ভেন্যুতেই আজ দুপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আশরাফুল মনে করেন ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে চার জন পেসার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে চারজন পেসার রাখা উচিত। এই মাঠে নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের ম্যাচে পেস বোলারদের অতিরিক্ত একটা বাউন্স পেয়েছে। মিরাজের জায়গায় শফিউলকে আমি পছন্দ করব। এছাড়া ইমরুলের বদলে মোসাদ্দেক থাকলে অফস্পিনার হিসেবে সাকিবের সঙ্গে বাড়তি একজন পাওয়া যাবে। মোট ৬ জন বোলার মাশরাফির হাতে থাকলে তার পকিল্পনা করতে সহজ হবে।’
এছাড়া আশরাফুল মনে করেন, জেতার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে গেলে টসটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই এ ম্যাচের আগে টস জিতলে ফিল্ডিং নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি, ‘টসটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়াটা যেহেতু খারাপ। এখানে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে পরে ব্যাটিং করার সুবিধা আছে। তখন ক্যালকুলেশন করে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। আমার মনে হয় টসে জিতলেও ফিল্ডিং নেওয়া উচিত।’
/এফএইচএম/