X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি বছর

রবিউল ইসলাম
২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৬:২৬আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:৫৯

পুরো বছর জুড়েই অব্যাহত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যগাঁথা। শুরু হয়েছিল গত বছরের শেষ দিক থেকে। সেই ধারা অব্যাহত ছিল বছর শেষেও। ২-১টি ম্যাচ ছাড়া সাফল্যের কক্ষপথ থেকে কখনও ছিটকে যায়নি লাল-সবুজরা। সেই সুবাদে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ২০১৫ সালটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাঠের পারফরম্যান্সে ধরাশায়ী হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার তিন জায়ান্ট ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। এ বছর ১৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৩টি জিতেছে টাইগাররা ।

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ২০১৫ সালের শুরুটাই হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দিয়ে। ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে বিশ্ব দেখেছিল নতুন বাংলাদেশকে। এটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে আখ্যায়িত। গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচের ৩টিতে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। গ্রুপপর্বে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডকেও প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল তারা।

বিশ্বকাপ শেষে ফেরার পর বিমানবন্দরে মাশরাফিদের সংবর্ধনা

কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্ভাগ্যবশত (আম্পায়ারদের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে) ভারতের কাছে হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নতুন করে খুঁজে পেয়েছিল অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। টানা দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহিম ছিলেন দুর্দান্ত ধারাবাহিক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ দুটি বল করে নায়ক বনে যান বিশ্বকাপের আগে ব্যক্তিগত জটিলতায় থাকা পেসার রুবেল হোসেন। দারুণ ব্যাটিং করে আস্থার প্রতিদান দেন সৌম্য সরকারও । বিশ্বকাপের মঞ্চে মাশরাফি-তাসকিনের ‘চেস্ট বাম্প’ হয়ে যায় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উদযাপনের অংশ।

মাশরাফি-তাসকিনের চেস্ট বাম্প

বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি পাকিস্তান। হোম সিরিজে ওই চ্যালেঞ্জও টপকে যান মাশরাফি-সাকিবরা। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো যেখানে ছিল বাংলাদেশের একমাত্র সুখস্মৃতি; সেই পাকিস্তানকেই ওয়ানডে সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে টাইগাররা; দিয়েছে বাংলাধোলাই। একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও জিতে নেয় বাংলাদেশ। এই ম্যাচেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন বর্তমানে দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে আলোচিত তারকায় পরিণত হওয়া বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তখনও অবশ্য মুস্তাফিজকে চেনেনি বিশ্ব!

কিন্তু বছর শেষ হতেই মুস্তাফিজ যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বিজ্ঞাপন। বর্ষসেরা ক্রিকেটার না হলেও আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অবশ্য বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে ১-০তে হেরে যায়। তবে খুলনায় সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১২ রানের এক রেকর্ড গড়া উদ্বোধনী জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। আর তাতে করে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ পায় অসাধারণ এক ড্র।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে তামিম- ইমরুলের রেকর্ড গড়া জুটি

এরপর জুনে বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। তাদের বিপক্ষে ফতুল্লার একমাত্র টেস্টটি ছিল বৃষ্টিবিঘ্নিত। বৃষ্টির বিড়ম্বনায় ড্র ছাড়া এই টেস্টের ভাগ্যে তখন আর কিছু লেখা ছিল না। পরবর্তীতে ভারতীয়দের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটিতে জিতে বাংলাদেশ সিরিজ নিজেদের করে নেয়। এই সিরিজে ওয়ানডে অভিষেক হয় 'বিস্ময় বালক' মুস্তাফিজুর রহমানের। বিখ্যাত 'কাটারে' অভিষেক ম্যাচেই নেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে নেন ৬টি। সিরিজে মোট ১৩ উইকেট নিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে কোনও বোলারের সর্বোচ্চ সংখ্যক উইকেট নেওয়ার বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন এই বাঁহাতি পেসার; হয়েছেন সিরিজ সেরাও।

বিস্ময়বালক মুস্তাফিজকে নিয়ে মাশরাফিদের উল্লাস। বছরজুড়ে দেখা গেছে এমন চিত্র

এরপর দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এসেছে সর্বশেষ সাফল্যটি। টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটি ম্যাচেই হারার পর ঢাকাতে প্রথম ওয়ানেডে ম্যাচেও অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকানদের কাছে হেরে হঠাৎই পথ ভুলতে বসে বাংলাদেশ! কিন্তু এরপরই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাটিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে জিতে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে নিজেদের পকেটে পুরে নেয় মাশরাফির দল। গৌরবোজ্জ্বল এক কীর্তি লেখা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

চট্টগ্রামে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলার মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের দীর্ঘ পরিসরেও অভিষেক হয়ে যায় নতুন সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমানের। টেস্ট অভিষেকেও চমকে দেন তিনি। এক ওভারে চার বলের মধ্যেই ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজ; এর সুবাদে ম্যাচে প্রথম ইনিংস লিড নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দুই দিন বৃষ্টিতে খেলা না হওয়ায় ম্যাচ ড্র হয়। তবে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেকে ম্যাচসেরা হওয়ার কীর্তি গড়েন মুস্তাফিজ। ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের শেষ চার দিন বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় দুই দলের টেস্ট সিরিজটাই সমাপ্ত হয় ড্র দিয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর

 

সর্বশেষ গত অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ছিল মুশফিকদের। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে খেলতে আসেনি ক্যাঙ্গারুরা। পরে জিম্বাবুয়েকে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে ও ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য আমন্ত্রণ জানায় বিসিবি। মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচই প্রভাব বিস্তার করে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দূর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হেরে যায় মাশরাফিরা। ওই হারে বছরের শেষটা ভালো হয়নি লাল-সবুজদের।

এমন ২-১টি ম্যাচ বাদ দিলে পুরো বছরটি বাংলাদেশের ক্রিকেটে দারুণ কিছু প্রাপ্তি যোগ হয়েছে। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আর নেই।

/এমআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডেঙ্গু সংক্রমণ: দাউদকান্দির দুই ওয়ার্ডকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা
ডেঙ্গু সংক্রমণ: দাউদকান্দির দুই ওয়ার্ডকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা
ইতিহাসে প্রথমবার তিন সুপার ওভার!
ইতিহাসে প্রথমবার তিন সুপার ওভার!
জি৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যান ট্রাম্প
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতজি৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যান ট্রাম্প
পৃথক দুর্ঘটনায় দিনাজপুরের সড়কে ঝরলো ৩ জনের প্রাণ
পৃথক দুর্ঘটনায় দিনাজপুরের সড়কে ঝরলো ৩ জনের প্রাণ
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল