বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে পেরে দারুণ খুশি নুরুল হাসান সোহান। সেই সঙ্গে বাবা নাসিবুল হাসানও গর্বিত ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায়। গর্ব করার মতোই বিষয়। কারণ বর্তমান জাতীয় দলে এতো তারকার ভিড়ে সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই অনেক কঠিন। সেই কঠিন কাজ যখন সোহান নিজ পারফরম্যান্সে করে দেখিয়েছেন তখন তার বাবা গর্বিত হবেন এটাই স্বাভাবিক।
শুক্রবার ৪৯ তম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছে নুরুল হাসান সোহানের। সোহান এতটাই ভাগ্যবান যে নিজ শহরে দেশের জার্সি গায়ে দিতে পেরেছেন। সোহানের বাবা কাজী নাসিবুল হাসান সান্নু ছিলেন ফুটবলার। জাতীয় দলে তার খেলার স্বপ্ন পূরণ না হলেও ছেলেকে দিয়ে সেই স্বপ্নটা পূরণ করেছেন তিনি।
জেলা অনূর্ধ্ব-১৩ বয়সভিত্তিক দলে ১১ বছর বয়সে সুযোগ পান সোহান। তবে টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। কিন্তু ছেলেকে একা একা ঢাকায় দিতে নারাজ ছিলেন মা জাকিয়া হাসান লাকি। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে বাবা-ছেলের জেদই। অনূর্ধ্ব-১৩ ক্রিকেটে খুলনার হয়ে নজর কেড়েছিলেন। এরপর থেকেই সোহানের ক্রিকেটার হয়ে উঠার গল্পটা থামেনি। সোহান নিজেও মনে করেন ক্রিকেটে তার এতোদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বাবার।
ক্রিকেটার সোহানের বাবা কাজী নাসিবুল হাসান সান্নুর সঙ্গে শনিবার সকালে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। কথোপকথনের অংশটি তুলে ধরা হলো-
বাংলা ট্রিবিউন : আপনি ফুটবলার ছিলেন। কিন্তু ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর কারণ কী?
নাসিমুল হাসান: আমি খেয়াল করেছি ফুটবল থেকে ক্রিকেটে ওর আগ্রহ বেশি। তাই ওর আগ্রহ জেনে স্থানীয় ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেই। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাতে কোনও সমস্যা হয় না। এজন্য সব সময় ওর সঙ্গেই থাকতাম। মূলত ওর আগ্রহ দেখেই আর বারণ করিনি।
ছেলেকে একটা কথাই বলেছি, যেন শৃঙ্খল ও নিয়ম অনুযায়ী চলে। কখনও যেন কোনও অহংকার না দেখায়। জাতীয় দলের হয়ে খেলছে বলে অনেক কিছু ভাবতে হবে এমন কিছু যেন কখনোই মনে না করে।
বাংলা ট্রিবিউন : ছেলে এখন জাতীয় দলে খেলছে; বাবা হয়ে কি গর্বিত?
নাসিমুল হাসান : হ্যাঁ। গর্ব না হওয়ার কোনও কারণ নেই। ছেলে আমার জাতীয় দলে খেলছে এর থেকে বেশি কিছু তো বাবা হিসেবে চাওয়ার নেই। সবাই ফোন করছে। অনেকেই এসে দেখা করেছেন। খুব ভালো লাগছে। এতদিন যেই কষ্ট করেছি সেটা আজ স্বার্থক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দোয়া করি ছেলে যেন বড় মাপের ক্রিকেটার হয়। সবাই ওর জন্যে দোয়া করবেন।
বাংলা ট্রিবিউন: সোহানের মা নাকি চাননি ছেলেকে ঢাকায় একা একা পাঠাতে…
নাসিমুল হাসান: অনূর্ধ্ব-১৩ খেলার জন্য যখন ঢাকায় যায় তখন সোহান অনেক ছোট ছিল। সেক্ষেত্রে প্রথমে কেউ চায়নি যে ও(সোহান) একা একা ঢাকায় যাক। পরে এগুলো কোনও সমস্যা হয়েই থাকেনি। আমরা কেউই তার উপর বিশ্বাস হারাইনি। ওকে সমর্থন করেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: ছেলের অভিষেকে মাঠে ছিলেন?
নাসিমুল হাসান: আমি আর ওর মা বাদে সবাই মাঠে ছিল। ওর ভাই-বোনরা সবাই মাঠে থেকে ওর খেলা দেখেছে। আসলে আমি যাওয়ার জন্যে গাড়িতেও উঠেছিলাম। কিন্তু ওর সাফল্যের জন্যে ওর মা রোজা রেখেছিলেন। একা একা ইফতার করতে হবে বলে আমিও বাসায় থেকে যাই। তবে টিভিতেও খেলা দেখেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: ম্যাচের পর ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে?
নাসিমুল হাসান: রাতে ও বাসায় এসেছিল কিছুক্ষণের জন্যে। সবার সঙ্গে দেখা করে গেছে। ওকে দেখে আমরা খুব খুশি হয়েছি।
বাংলা ট্রিবিউন: ছেলের জন্য কোনও উপদেশ আছে?
নাসিমুল হাসান : ছেলেকে একটা কথাই বলেছি, যেন শৃঙ্খল ও নিয়ম অনুযায়ী চলে। কখনও যেন কোনও অহংকার না দেখায়। জাতীয় দলের হয়ে খেলছে বলে অনেক কিছু ভাবতে হবে এমন কিছু যেন কখনোই মনে না করে।
/আরআই/এফআইআর/