X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

একজন সব্যসাচী জালাল আহমেদকে অশ্রুসজল চোখে বিদায়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৫২আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৫২

ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান। এই ক্রিকেট ভালোবেসে দীর্ঘদিন ধরে আজিমপুরের এক ফ্লাটে একাই বসবাস করে আসছিলেন সব্যসাচী জালাল আহমেদ চৌধুরী। অথচ তার সন্তানরা সব আমেরিকান ‘গ্রিনকার্ড’ হোল্ডার। শত চেষ্টা করেও বাবাকে সঙ্গী করতে পারেননি সন্তানরা। সেই ক্রিকেটপাগল মানুষটি ২২ গজের অকৃত্রিম প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতেই হুট করে সবাইকে কাঁদালেন। নিজের শৈশব-কৈশোর কাটানো সেই আজিমপুরেই চিরনিদ্রায় শায়িত জালাল আহমেদ।

প্রথম দফা কিছুটা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছিলেন। সেখানে বসে আম্পায়ার নাদির শাহর মৃত্যুতে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন। নাদির শাহের বিদায়ের দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিনিও যে চলে যাবেন, কে-ই বা ভেবেছিল? হাসপাতালে দ্বিতীয়বার রাখা হয় ভেন্টিলেশনে, ছিলেন আইসিইউতে। ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে শেষ পর্যন্ত জীবনের লড়াইয়ে হেরে যান তিনি।

দেশের অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার জালাল আহমেদের হাতে গড়া। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানের পেছনেও ছিলেন তিনি। যে আইসিসি ট্রফি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছিল, সেই ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দলটিও তার হাতেই গড়া। জালাল আহমেদের তত্ত্বাবধানেই প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আকরাম-পাইলটরা। পরে কোচ হিসেবে যোগ দেন গর্ডন গ্রিনিজ।

তার মৃত্যুর দিনে নির্ধারিত বোর্ড সভা থাকায় বিসিবির কোনও পরিচালকই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজায় উপস্থিত হতে পারেননি। তবে আজিমপুরে দ্বিতীয় জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিসিবির পরিচালক আহমদ সাজ্জাদুল আলম ববি। আসেননি খেলা চালিয়ে যাওয়া ক্রিকেটাররাও। তবে এসেছিলেন সাবেক ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাবেক কোচ ও জালাল আহমেদের বন্ধু ওসমান খান, দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। সবার প্রিয় জালাল আহমেদের মৃতদেহ সামনে রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিপু-ওসমানরা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাবেক অধিনায়ক লিপু বলেছেন, ‘আসলে আমরা যারা আশির দশকের ক্রিকেটে ছিলাম, নব্বই ও এই একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকেও যারা ক্রিকেটে ছিল, আমার বিশ্বাস তাদের খুব নাড়া দেবে (জালাল আহমেদের মৃত্যু)। আমার বিশ্বাস এখনকার ব্যাচেরও অনেকে জালাল ভাইয়ের অধীনে কোচিং করেছিল। আমাদের ক্রিকেটে আইসিসি ট্রফি জয়কে যদি সেরা সাফল্য ধরা হয় তবে জালাল ভাই, ওসমান ভাইদের মতো কোচরা নেপথ্যে ছিলেন। তার বিদায় আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, ক্ষেত্রবিশেষে তাকে আমরা আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারতাম, তার মেধাকে কাজে লাগাতে পারতাম, আমরা সেই সুযোগের কিছুটা অপচয় করেছি এবং তাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু তার যে স্থান সেটা যারা তাকে চিনেন তাদের কাছে অম্লান থাকবে।’

সাবেক কোচ ও জালাল আহমেদের বন্ধু ওসমান খান বলেছেন, “জালাল ভাই বলতেন, ‘ওসমান আসো ক্রিকেটের জন্য কিছু করি।’ পাতিয়ালায় আমরা দুইজন যখন কোচিং কোর্স করি, ওখান থেকে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞাণে চেষ্টা করেছি সব শুধরানোর জন্য। আমরা কিন্তু টাকা-পয়সার দিকে তাকাইনি। এখন কতটুকু করেছি তা আমরা বলতে পারবো না, যারা দেখেছেন তারা বলবে। আমাদেরকে মূল্যায়নের ব্যাপারে যারা ছিলেন তারা হয়তো সেভাবে মূল্যায়ন করতে চাননি, কিন্তু তাতে আমাদের দুঃখ নেই। আমরা ক্রিকেট থেকে যা পেয়েছি তাতেই খুশি।’

জানাজা শুরুর আগে উপস্থিত সবার উদ্দেশে পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলেছেন জালাল আহমেদের ছোট ভাই বাবু। তিনি সবার কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে আজিমপুরে আরেক দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আছর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে জালাল আহমেদের মরহেদ দাফন করা হয়।

জালাল আহমেদের জন্ম ১৯৪৭ সালে। পড়াশোনা শেষ করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় টিকেও ক্রিকেটের ভালোবাসায় চাকরিতে যোগদান করেননি তিনি। তবে ক্রিকেট তাকে এক জীবনে বহু কিছুই দিয়েছে। তবে অপ্রাপ্তিও আছে অনেক! ক্রিকেটকে ভালোবেসে পাননি কোনও স্বীকৃতি। ষাট ও সত্তরের দশকে ঢাকা ক্রিকেট লিগে খেলেছেন তিনি। ১৯৬৫-৬৬ সালে উদিতি ক্লাব দিয়ে খেলা শুরু করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ইয়াং পেগাসাসের হয়ে প্রথম বিভাগে খেলা শুরু। এরপর আবার উদিতিতে ফেরেন। ১৯৭৮ সালে ধানমন্ডিতে শেষ ক্রিকেট খেলেন তিনি।

খেলোয়াড়ী জীবন ছেড়ে শুরু করেন ক্রিকেট কোচিং ও সাংবাদিকতা। ১৯৮২ সালে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ হয়। যোগ দেন নিউ নেশনে। এরপর টাইমসে। দেশের ক্রিকেটবিষয়ক যেকোনও ঐতিহাসিক তথ্যের সূত্র হয়ে ছিলেন তিনি। ইংরেজি ও বাংলা দুই ভাষাতেই লেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট কোচ হিসেবে নিয়েছেন উচ্চতর প্রশিক্ষণ। পাতিয়ালা থেকে ফেরার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চাকরি নেন। আজাদ স্পোর্টিং, মোহামেডান, আবাহনী, ভিক্টোরিয়া, পিডাব্লিউডিসহ বেশ কয়েকটি দলের কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তার। সবশেষ ২০১৮ সালে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের কোচ ছিলেন জালাল আহমেদ। বেশ কয়েকবার জাতীয় দলে কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের দিনগুলোতে যে কয়েকজন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, তাদের অন্যতম জালাল আহমেদ।

/আরআই/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
নির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
উপজেলা নির্বাচননির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
আমের মিষ্টি আচার বানাবেন যেভাবে
আমের মিষ্টি আচার বানাবেন যেভাবে
জিসিসি’র সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন
জিসিসি’র সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল