শহরের ক্লান্তিকর জীবন পেছনে ফেলে কিছু দিনের জন্য প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ছুটেছে মানুষ। তাদের মধ্যে আছেন পেসার রুবেল হোসেনও। ঈদের ছুটি শুরুর আগেই বাগেরহাটে চলে গেছেন স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে ১ মে সুপার লিগ শুরুর আগে ঢাকায় ফিরবেন। যাওয়ার আগে পেসার রুবেল ও তার সহধর্মিণী ইসরাত জাহান দোলা বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই আড্ডায় উঠে এসেছে তাদের ঈদ কেমন করে কাটে, জানা গেছে তাদের পারিবারিক জীবনের নানান খুনসুটিও।
বাংলা ট্রিবিউন: এবারও বাগেরহাটে ঈদ করছেন, কতদিন পর গেলেন?
রুবেল: ঈদ তো প্রতি বছরই করি। এবারও যাচ্ছি। তবে এবার গরম বেশি, তাই দুশ্চিন্তায় আছি।
দোলা: বাগেরহাটে ঈদ প্রতি বছরই করা হয়। দুটো ঈদই আমরা এখানে করি। স্বাভাবিকভাবেই শহর ছেড়ে এখানে পরিবার-পরিজনের কাছে ঈদ করাটা বিশেষ।
বাংলা ট্রিবিউন: ঈদের দিনের শুরুটা কীভাবে করবেন?
রুবেল: ঘুম থেকে ওঠার পর গোসল করে নামাজের জন্য তৈরি হই। এবার আয়ানকে নিয়ে নামাজে যাবো। ছেলে ছাড়া আমাদের বাসায় আরও কিছু ছোট বাচ্চা আছে, ওরাও আমার সঙ্গে যাবে। বড় ভাই, মেজ ভাইও আছেন। তবে আমি খুবই দুর্ভাগ্যবান যে এবার আব্বার সঙ্গে নামাজে যেতে পারবো না। ৮ মাস ধরে আমার আব্বার শরীরের বামপাশ অবশ হয়ে রয়েছে। প্রত্যেকবার আব্বার সঙ্গে নামাজে গেলেও এবার সেটা হচ্ছে না।
দোলা: সকাল বেলা আয়ানকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আমার ঈদের দিন শুরু হয়। ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তৈরি করবো। আগে তো ছোট ছিল, নামাজ পড়তে যেতে পারতো না। এখন তো বড় হয়ে গেছে, এবার নামাজ পড়তে যাবে।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন ধরনের খাবার প্রিয়?
রুবেল: গরুর মাংস আমার সবসময় প্রিয়। তবে এবার একটু কম খেতে হবে (হাসি)। কারণ, প্রচণ্ড গরম। ইলিশ মাছ, আইড় মাছও আছে প্রিয়র তালিকায়। ঈদের দিনের কথা বললে বলবো খিচুড়ি-গরুর মাংস আমার প্রথম পছন্দ।
দোলা: আমার পছন্দের খাবার পোলাও আর গরুর মাংস। মুরগির রোস্টও আমার পছন্দের তালিকাতে আছে। তবে আমার আম্মুর হাতেরটা বেশি পছন্দের।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন ধরনের পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
রুবেল: এমনিতে আমার জিন্স ও টি-শার্ট ভালো লাগে। এটাতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ঈদে তো সাধারণত দুপুর পর্যন্ত পাঞ্জাবি পরে থাকি। তারপর আমি আমার ফেভারিট পোশাক জিন্স ও টি-শার্টে চলে যাই।
দোলা: পোশাক বলতে থ্রি পিসই পরতে বেশি পছন্দ করি। এটাতেই বেশি আরাম। আর আমি যেহেতু হিজাবি, এই কারণে নানা রঙের হিজাব পরতে পছন্দ করি। শাড়িও পছন্দের তালিকায় আছে। ঈদে আমি দুটোই পরি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের পরস্পরের মধ্যে ভালো দিক কোনটি?
রুবেল: আমার কাছে মনে হয় ও (দোলা) আমাকে পুরোপুরি বুঝতে পারে। আর ওর সবচেয়ে ভালো গুণ হচ্ছে রান্নার হাত খুব ভালো। ওর হাতের গরুর মাংস আমার খুব পছন্দের।
দোলা: রুবেলের ভালো দিক হচ্ছে ও অনেক ভালো মনের একজন মানুষ। ও আমাকে খুব বোঝে। আরও অনেক ভালো দিক আছে। তবে একটা মানুষ যখন অন্যজনকে পরিপূর্ণভাবে বোঝে, তখন কোনও সমস্যাই থাকে না।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের প্রিয় ক্রিকেটার কে?
রুবেল: পেস বোলার হিসেবে আমি অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের খুব বড় ভক্ত। লাসিথ মালিঙ্গাকে আমার খুব ভালো লাগে।
দোলা: আমার বিয়ের আগে তো খেলা ওতটা দেখা হতো না, খেলা আগে তেমন বুঝতামও না। এখন বুঝি, যেহেতু আমার স্বামী একজন ক্রিকেটার। আমার প্রিয় ক্রিকেটার বলতে আমি আমার স্বামীকেই বুঝি। ওর খেলাই আমার ভালো লাগে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা মুভি দেখেন?
রুবেল: এমনিতে আমি মুভি খুব একটা দেখি না। তামিল অ্যাকশন মুভিগুলো আমার ভালো লাগে।
দোলা: হরর মুভিগুলো বেশি দেখা হয়। আমি হরর মুভি দেখতেই বেশি পছন্দ করি।
বাংলা ট্রিবিউন: কোথায় বারবার যেতে চাইবেন?
রুবেল: আমার জীবনে আমি অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আমি আসলে শীতের দেশে যেতে চাই। সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে আমি সুযোগ পেলে যেতে চাই।
দোলা: সমুদ্র..। সমুদ্র-পাহাড় আমাকে খুব বেশি টানে। প্রায়ই পাহাড়-সমুদ্রে যেতে আমার ছটফট করে।
বাংলা ট্রিবিউন: অবসর কীভাবে কাটান?
রুবেল: বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করি। বাসায় যতখানি পারি বাচ্চাকে সময় দেই।
দোলা: আমার যেহেতু বাচ্চা আছে, ওর সাথে দুষ্টুমি করে...। আয়ান আমার সঙ্গে খেলতে খুব পছন্দ করে। তাছাড়া আমি বই পড়তেও খুব পছন্দ করি।
বাংলা ট্রিবিউন: ঈদের সেলামি নিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা শুনতে চাই?
রুবেল: ঈদের সেলামি তো একসময় নিতাম বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। আব্বার কাছ থেকে, মার কাছ থেকেও। এখন সেলামি বেশি দিতে হয়। সবারই আমার কাছে প্রত্যাশা থাকে। সেলামি দেওয়ার মাঝে অনেক আনন্দও থাকে।
দোলা: এখন তো দিতে হয়। আগে তো (দিতে) হতো না। পরিবারের ছোট বলে ইচ্ছেমতো সেলামি পেতাম। এখন তো আমি বড় হয়ে গেছি, পরিবারের ছোটদের সবাইকে সেলামি দিতে হয়। এতে ভীষণ আনন্দ পাই।
বাংলা ট্রিবিউন: ঈদে ছেলেকে নিয়ে আলাদা কোনও পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়?
রুবেল: ওকে নিয়ে তো সবসময় বিশেষ পরিকল্পনা থাকেই। বাড়িতে গেলে আশপাশে আমার ছেলেকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করি। এবার ও তো আরও একটু বড় হয়েছে।
দোলা: আয়ান দুই ঈদেই আমাদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে আসে। ঈদের সময় ওর দাদা বাড়ি থেকে নানা বাড়িতে যাওয়া হয়। ও ঘুরতে খুব পছন্দ করে। ঢাকাতে ফ্ল্যাটের মধ্যে থাকি, শহরেও ঘোরাঘুরির তেমন সুযোগ নেই। ও যেসব জিনিস পছন্দ করে কিংবা যেখানে যেতে পছন্দ করে, ওর সেসব ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করবো।
