প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও প্রভাব বিস্তার করে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটে এমন নজির কিন্তু আর নেই। রাওয়ালপিন্ডিতে এমন জয়ের কৃতিত্ব লিটন দাসকে যেমন দেওয়া যায়, তেমনই মেহেদী হাসান মিরাজ ও পেসার হাসান মাহমুদও এর দাবি রাখেন। লিটনের সঙ্গে মিরাজ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে অবদান রাখতেই পারেন, কিন্তু একজন পেসার হয়ে দশ নম্বরে নেমে যেভাবে প্রতিরোধ গড়েছিলেন হাসান, সেটি ছিল অবিশ্বাস্য। নিজে সেঞ্চুরি করলেও শেষ দিকে স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান তোলার জন্য ব্যাটার হাসানকে কৃতিত্ব দিলেন লিটন।
রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ে ব্যাট হাতে সবচেয়ে বড় অবদান লিটনের। তার খেলা ১৩৮ রানের ঝকঝকে ইনিংসটাই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। এই ইনিংস খেলার পথে মিরাজের সঙ্গে লিটন গড়েছিলেন ১৬৫ রানের জুটি। মিরাজ ৭৮ রানে আউটের পর তাসকিনও দ্রুত ফিরে যান। এরপর পেসার হাসানকে নিয়ে লিটনে আরও একটি যুদ্ধে লিপ্ত হন। একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটারের মতো ব্যাটিং করে লিটনকে সঙ্গ দিয়ে যান হাসান। লিটন আউট হওয়ার আগে গড়ে ফেলেন ৬৯ রানের জুটি। এই জুটির ওপর দাঁড়িয়ে লিটন যেমন ১৩৮ রান করেন, তেমনই বাংলাদেশ আড়াইশ রানও তুলে ফেলে। পরে লিটন-নাহিদ রানা আউট হলেও হাসান ছিলেন অপরাজিত। ১২০ মিনিটে ৫১ বল খেলেছেন, করেছেন ১৩ রান।
হাসান ক্রিজে আসতেই ভিন্ন ফিল্ড সেটআপ করে পাকিস্তান। লিটনের রান আটকাতে বাউন্ডারিতে ফিল্ডার নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সমটাতে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন লিটন। ওই পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিটন বলেছেন, ‘হাসান যখন ব্যাট করতে আসে, তখন আমার কাছে কোনও রানের সুযোগ ছিল না। সব ফিল্ডার সীমানায় চলে গেলো। আমি আবার সময় নিয়েছিলাম এবং আমাকে ওভারগুলো খেলতে হয়েছিল। রান বা কিছুই নেওয়া হয়নি। আমার জন্য অনেক সিঙ্গেল খোলা ছিল। কিন্তু বাউন্ডারি আসেনি। ওদিকে হাসান বেশ দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছে। এবং কৃতিত্ব হাসানকে দিতে হবে; সে সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছে।’
ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারিয়ে কোনও দল এর আগে সপ্তম উইকেটে ১৫০ রানের বেশি করতে পারেনি। মিরাজ ও লিটন ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছেন। এই জুটি নিয়ে লিটন বলেছেন, ‘শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। ওই সময়টায় পাকিস্তান সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। আমি এবং মিরাজ আলোচনা করেছি যে আমাদের লম্বা সময় ব্যাটিং করা উচিত এবং তাদের ছন্দ পরিবর্তন করাতে হবে। এরপর মিরাজ কয়েকটি বাউন্ডারি মারে এবং গতি পাল্টে যায়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেলো।’
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এই জয়কে দলীয় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছেন। লিটনও সেটাই মনে করেন, ‘আমরা যখন এখানে এসেছিলাম (পাকিস্তানে), দেশের পরিস্থিতি ভালো ছিল না। আমরা আগে এখানে পৌঁছেছিলাম এবং নিজেদের প্রস্তুতি নিয়েছি। এটা সম্পূর্ণটাই দলীয় প্রচেষ্টা। এই কন্ডিশনে প্রতিটি খেলোয়াড় যেভাবে নিজেদেরকে নিংড়ে দিয়েছে… এখানে পাঁচদিন টেস্ট খেলা কঠিন। সাফল্যের সব কৃতিত্ব আমার সতীর্থ এবং কোচিং স্টাফদের দেওয়া উচিত।’