বৃষ্টির কারণে কানপুর টেস্টের দুই দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। সোমবার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় চতুর্থ দিনে নির্ধারিত সময়ে মাঠে গড়ায় খেলা। বৃষ্টি ও আউটফিল্ডের সমস্যা থাকার পরও কানপুরের উইকেট এখনও সেভাবে ভাঙেনি। এমন উইকেটে ব্যাটারদের জন্য কঠিন কিছুই নেই। তারপরও সাকিব-লিটনরা নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন। সাকিব-লিটনের ব্যর্থতার দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুমিনুল হক। দারুণ এই সেঞ্চুরির পর মুমিনুলের পিঠ চাপড়ে দেন বিরাট কোহলি। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ভারতের বিপক্ষে এটিই প্রথম সেঞ্চুরি।
কানপুরের উইকেট সাধারণত কিছুটা স্লো হয়ে থাকে। এখানে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে চতুর্থ দিনে স্পিনারদের জন্য হয়ে উঠে স্বর্গরাজ্য। কানপুরে ব্যাটিং করা অতটা কঠিন না হলেও বল বেশ নিচু হচ্ছিল। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি ভারতীয় পেসাররা দারুণ বোলিংও করছিলেন। এই অবস্থায় মুমিনুল যেভাবে দাপট দেখালেন, সেটি অবিশ্বাস্য। এদিন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ করে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। সেঞ্চুরি ছুঁয়ে হেলমেট খুলেছেন, ব্যাট উপরে তুলে এরপর মুমিনুল সেজদা দিয়ে উদযাপন করেন সেই সেঞ্চুরি। ১৭২ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁহাতি ব্যাটার।
মুমিনুলের ক্যারিয়ারে এটি তার ১৩তম সেঞ্চুরি। এই সেঞ্চুরিতে কানপুরে একটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার। ২৭ তম ক্রিকেটার হিসেবে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। সর্বোচ্চ ৩টি সেঞ্চুরি ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের। এই তালিকায় আছেন গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম হতে শুরু করে কপিল দেব ও সুনীল গাভাস্কার। সবমিলিয়ে এখানে ৩৫টি সেঞ্চুরি হয়েছে।
কানপুর টেস্টে দেড় বছর পর তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন মুমিনুল। আগের টেস্টে দুই ইনিংসে ব্যর্থতার পর বাঁহাতি ব্যাটারের জন্য ভালো ইনিংসের বিকল্প ছিল না। এদিন যেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে একমাত্র কান্ডারি ছিলেন তিনিই। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে ভক্তদের আনন্দে মাতিয়েছেন।
মুমিনুলের জন্যও এই সেঞ্চুরি বিশেষ কিছু। বিশেষ হওয়ার কারণ লম্বা সময় ধরে তিনি সেঞ্চুরিহীন। ১৩ ইনিংস আগে সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। সর্বশেষ গত বছর জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ১২১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত মার্চে ঘরের মাঠে টেস্টে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছিলেন। যোগ্য সঙ্গীর অভাবে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকতে হয়েছিল তাকে। এরপর আরও দুটি হাফ সেঞ্চুরি পেলেও সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি খরা কাটালেন সাবেক অধিনায়ক।
প্রথম দিন ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। পরের দুইদিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। সোমবার চতুর্থদিনে এসে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করে গেছেন। অপরপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারালেও মুমিনুল ছিলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বার দেশের বাইরে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। প্রথমটি করেছিলেন ২০২১ সালের এপ্রিলে, শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে। এবার কানপুরে ভারতের বিপক্ষে। বাকি ১১ সেঞ্চুরির সবগুলোই ঘরের মাঠে।