বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের মালিকানা নিয়ে গত কিছুদিন ধরে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। সাবেক অধিনায়ক ও সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জোর করে মালিকানা কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটিতে প্রথম আসরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সারোয়ার গোলাম চৌধুরী। এই নিয়ে তিনি পল্লবী থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন। এরপর সিলেট স্ট্রাইকার্স কর্তৃপক্ষ সারোয়ার গোলাম চৌধুরীর সমালোচনা করে বিশাল একটি পোস্ট করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। সাবেক চেয়ারম্যানও কম যাননি, তিনি আজ বুধবার সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত সব তুলে ধরবেন।
সারোয়ার গোলাম চৌধুরী পোস্টের শুরুতেই লিখেছিলেন, ‘আপনারা অনেকেই হয়ত আমাকে চিনবেন সিলেট স্ট্রাইকারস-এর মাধ্যমে। ২০২৩ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকারস নিজেদের প্রথম মৌসুমেই ফাইনাল খেলে, রানার্স আপ হয়। মাঠের সফলতা ছিল অসাধারণ, কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল আমাদের দেশি খেলোয়াড়দের চমৎকার পারফরম্যান্স।’
নিজের পরিচয় উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি মূলত আমেরিকায় ব্যবসা করি, এছাড়াও আমি নিউইয়র্কভিত্তিক (NYBCL Cricket League) এনওয়াইবিসিএল এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং দীর্ঘ ৫ বছর এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং নিউইয়র্কভিত্তিক বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে আমার হেলাল বিন ইউসুফের সঙ্গে পরিচয় এবং তার মাধ্যমেই আমার মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়।’
সারোয়ার গোলাম চৌধুরীর দাবি করেন, মাশরাফি কঠিন রূপ তাকে বিস্মিত করেছে, ‘হ্যাঁ, মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশ দলে আমার অন্যতম প্রিয় একজন প্লেয়ার ছিলেন। আর সেই প্রিয় প্লেয়ার যখন নিজেই আমাকে বিপিএলে দল নেওয়ার আহ্বান করলেন, তখন আমি সানন্দে, বিশ্বাসের সঙ্গে তা গ্রহণ করলাম। কিন্তু তখনও জানতাম না যে এক পর্যায়ে যেয়ে, যাকে আমি এতটা পছন্দ করতাম সেই মাশরাফি বিন মুর্তজার রাজনৈতিক অফিসে, তার এবং যার মাধ্যমে এখানে আশা সেই হেলাল বিন ইউসুফে শুভ্রের উপস্থিতিতে অবরুদ্ধ করে এবং অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না—যাকে এতটা ভালোবাসতাম, সেই মানুষই এমনভাবে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে! এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ অভিজ্ঞতা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাশরাফি বিন মুর্তজা এতদিন বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। ক্রিকেটার হিসেবে তার অবশ্যই অনেক জনপ্রিয়তা ছিল/আছে। আমি নিজেও তার এই অজানা হিংস্র চরিত্র দেখার আগে অনেক বড় ফ্যান ছিলাম এবং আমি জানি তখন হয়তো কেউ অভিযোগ করলে আমারও বিশ্বাস করতে কঠিন হত। আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজা-কে নতুনভাবে দেখা। তিনি শুধু বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়কই নন, তিনি তখন সরকার দলীয় এমপি, এবং সেই সরকার ছিল স্বৈরাচারী। এমন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই আমি আমার এবং আমার পরিবার-পরিজনের যারা অনেকে বাংলাদেশেই বসবাস করেন তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কিছু করতে পারিনি।’
এতদিন কেন চুপ ছিলেন, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন সারোয়ার গোলাম চৌধুরী, ‘বিশেষ করে আমাকে যখন অবরুদ্ধ করে হুমকি দেওয়া হল, এবং সেই সময় সরকারের প্রভাবশালী কারও বিরোধিতা করলে গুম হওয়া খুব অবাস্তব আশঙ্কা ছিল না। তাই হুমকি আমাকে সিরিয়াসভাবেই নিতে হয়েছে। কিন্তু এখন? এখন সময় বদলেছে, ছাত্রদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের সফলতার পর দেশ নতুন আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এখন আমি ন্যায়বিচার পাবার ব্যাপারে আশাবাদী। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ একদিন সমস্ত বাধা অতিক্রম করবে।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে নিজের লেখায় উল্লেখ করেন তিনি, ‘জীবনের হুমকি একবার সামনে আসার পর স্বাভাবিকভাবে নিরাপত্তার চিন্তা রয়েই যায়। কিন্তু মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আমি আইনি লড়াইয়ে নেমেছি এবং লড়াই চালিয়ে যাব, আমি শীঘ্রই একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সবকিছু পরিষ্কারভাবে তুলে ধরবো, ইনশাআল্লাহ্। আশা করি, আপনারা পাশে থাকবেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করবেন।'