গত ৩০ ডিসেম্বর পর্দা উঠেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ১১তম আসরের। প্রায় দেড় মাসের জমজমাট লড়াই শেষে আজ শুক্রবার ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে বিপিএলের। ৭ দলের প্রতিযোগিতায় শিরোপার লড়াইয়ে টিকে আছে ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংস। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মিশনে দুটি দল আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে। এর আগে বরিশাল একবার শিরোপা জিতলেও চিটাগং এখনও পায়নি। চিটাগং চাইবে প্রথম শিরোপার স্বাদ নিতে, অন্যদিকে বরিশাল নিজেদের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সন্ধ্যা ৬টায় ২২ গজের লড়াইয়ে নামবে। এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস।
চলমান বিপিএল দিয়ে প্রায় ১০ বছর পর টুর্নামেন্টে ফিরেছে চিটাগং। এর আগে বিপিএলের প্রথম দুই আসরে খেলেছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে উঠেছিল তারা। কিন্তু তাদের শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে ৫২ রানে হেরেছিল তারা। ১১ বছর পর ফিরে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো কখনোই ছিল না তারা। পুরো আসর জুড়ে ছন্দময় ক্রিকেট খেলে ফাইনালে উঠেছে চিটাগং।
অন্যদিকে শুরু থেকেই ফেভারিটের তকমা নিয়ে মাঠে নামে ফরচুন বরিশাল। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে গত বিপিএলে প্রথমবারের মতো সেরার তকমা গায়ে মাখে বরিশাল। এর আগে একবার কুমিল্লার কাছেই ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বরিশালের। এবারও দল গড়েছে সেরা হতেই। তাদের পক্ষে বাজি ধরার লোকের অভাব নেই। নিজেদের সক্ষমতা পুরো আসরে প্রমাণ করে পঞ্চমবার ফাইনালে উঠেছে বরিশাল।
দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বরিশালের। ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলে তারা পেয়েছে ফাইনালের টিকিট। চট্টগ্রামের লোকাল বয় তামিম ইকবাল, অথচ তার নেতৃত্বেগুণে ব্যাক টু ব্যাক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের আশায় বরিশাল সমর্থকরা। শিরোপার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও বরিশালের অধিনায়ক তামিম মনে করেন চিটাগং যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে, ‘মাঠের ক্রিকেটে তারা প্রমাণ করেছে তারা ডিজার্ভিং। এমন না যে শুধু সেমিতে এসে খেলেছে। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলেছে। ম্যানেজমেন্টের অনেক কৃতিত্ব পাওনা। ফাইনাল মানেই কঠিন চাপ। ম্যাচে যে দল বেশি শান্ত থাকবে তাদের জেতার চান্স বেশি। আমি আগের ২ বার ফাইনাল খেলেছি। অত বেশি চিন্তিত থাকি না ফাইনালে। আশা করি কালকের দিনও এভাবে যাক। ফাইনাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি শান্ত থাকতে না পারেন, চাপে পড়ে যান, তখনই ভুল করবেন। শান্ত থাকা দলই বেশি সুযোগ পাবে।’
ফাইনালের আগের দিন কঠোর অনুশীলন করেছে বরিশালের ক্রিকেটাররা। এদিন স্কোয়াডে যোগ দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। বৃহস্পতিবার বোলিংয়ের পর ব্যাটিং সেরেছেন তিনি। বরিশালের টিম ম্যানেজমেন্ট আছে মধুর সমস্যায়। একদিকে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তাওহীদ হৃদয়, অন্যদিকে কাইল মায়ার্স, ডেভিড মালান, নিশাম, নবী, ফুলার। সবমিলিয়ে একাদশ নিয়ে মধুর সঙ্কটে তারা। এইদিকে খুব বেশি তারকা নেই চিটাগংয়ে। তারপরও দলীয় পারফরম্যান্স দিয়ে সাফল্য তুলে নিতে ভুল করেননি শন টেইটের শিষ্যরা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আসেন চিটাগংয়ের প্রধান কোচ টেইট ও তার সহকারী এনামুল হক।
ফাইনালে ওঠার টোটকা প্রসঙ্গে টেইট বলেছেন, ‘স্কোয়াডের মধ্যে আমরা বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। ম্যাজিক হতেই পারে। ভালো জিনিস হলো, টুর্নামেন্টজুড়ে আমরা খুব বেশি কিছু পরিবর্তন আনিনি। আমরা এভাবেই টুর্নামেন্টে খেলেছি। কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা আছে। তবে আমার মনে হয়, আমরা এখানে থাকার যোগ্য। আমি মনে করি, সেরা দুই দলের মধ্যেই খেলা হবে। এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। এর আগেও আমরা ক্লোজ কিছু ম্যাচ খেলেছি। এটা যেকোনও দিকেই যেতে পারে। তবে ফাইনাল ম্যাচে আমরা চ্যালেঞ্জ প্রত্যাশা করছি। বরিশাল খুবই ভালো দল। তাদের দলে ভালো কিছু খেলোয়াড় আছে। আমি মনোযোগটা আমাদের মধ্যেই রাখতে চাই।’
শক্তির বিচারে দুই দলের কিছু পার্থক্য থাকলেও ফাইনালে দুই পক্ষই উপভোগ্য ম্যাচ আশা করছে। গ্রুপ পর্বে দুই দলের লড়াইয়ে একবার করে ম্যাচ জিতেছে বরিশাল-চিটাগং। এরপর প্রথম কোয়ালিফারে চিটাগংকে হারিয়ে ফাইনালে তারা। পুরানো সেই হিসাব নিকাশ ফাইনালে কোনও কাজেই আসবে না। কেননা শেষটা ভালো হলেই তো সবটা ভালো! এখন দেখার অপেক্ষা বরিশাল দ্বিতীয় নাকি চিটাগং প্রথমবারের মতো বিপিএল ট্রফির স্বাদ পায়।