বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সম্ভাব্য নতুন সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বুলবুল কাউন্সিলর না হয়েও কীভাবে বোর্ডে আসবেন- সেই ব্যাপারটি নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বুলবুলের পরিচালক হয়ে বিসিবির সভাপতি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোনও নির্বাচিত কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে তার জায়গাতে আসতে পারবেন বুলবুল! যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে যা দাঁড়িয়েছে, তাতে বুলবুলের বোর্ডে আসাটা বেশ জটিলই। তারপরও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বুলবুলের বোর্ডে আসতে বাধা নেই।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে দুই জনকে পরিচালক মনোনয়ন করতে পারবেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্যাটাগরির পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির পরিবর্তে নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও ফারুক আহমেদ পরিচালক মনোনীত হন। ২০২১ সালে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিকেএসপির কাউন্সিলর হয়ে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করেছিলেন। এরপর তিনি বিকেএসপির চাকরিতে না থাকায় তার কাউন্সিলরশিপ চলে যায়। ফলে ফাহিমের কোনও কাউন্সিলরশিপ ছিল না। বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস পরিচালকের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলর থেকেও পদত্যাগ করেন। এরপর এনএসসি নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে প্রথমে কাউন্সিলরশিপ দিয়ে পরে পরিচালক মনোনয়ন করেছে। অন্যদিকে, ফারুক সাবেক অধিনায়ক ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর ছিলেন। ববি পদত্যাগ না করলেও এনএসসি তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে একদিনের মধ্যেই মনোনীত পরিচালক ফারুক সভাপতি নির্বাচিত হন।
এবারও তেমন কিছুই হয়তো হতে পারে। তবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল দেশের বাইরে থাকায় তার কোথাও কোন কাউন্সিলরশিপ ছিল না। কাউন্সিলরশিপ না থাকায় মনে হতে পারে বুলবুলের পরিচালক হওয়ার সুযোগই নেই, আর পরিচালক হওয়ার সুযোগ না থাকলে তিনি সভাপতিও হতে পারবেন না। কিন্তু গঠনতন্ত্রে ১২.৭-এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বে বা বোর্ড কর্তৃক প্রতিনিধির নাম প্রেরণের নোটিশ প্রদানের পূর্বে কোনও কাউন্সিলর পরিবর্তন করা যাইবে না। তবে কোন কাউন্সিলর পদত্যাগ, স্থায়ীভাবে প্রবাসী হওয়া, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হইয়া অযোগ্য বা অক্ষম হওয়া, সংস্থার ক্ষেত্রে বদলি ও অবসর বা অনুচ্ছেদ ১০ অনুযায়ী অযোগ্য হওয়া অথবা মৃত্যুজনিত কারণেই কেবল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ক্লাব বা সমিতি কাউন্সিলর পরিবর্তন করার আবেদন জানাইতে পারে। ‘যারা পরিচালনা পরিষদে অনুমোদিত হইতে পারে’, এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বিসিবিতে কাউন্সিলরশিপ রদবদলের সুযোগ রয়েছে। বিসিবির বিদ্যমান কোনও কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে সেখানে ওই সংস্থা/প্রতিষ্ঠান নতুন কারও নাম বিসিবিতে পাঠাতে পারে। সেটি পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত হলে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে যোগ্য হবেন।
অন্যদিকে, বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১৩.২-এর ক-তে বলা হয়েছে সভাপতি পদের প্রার্থীকে অবশ্যই পরিচালক হতে হবে। সভাপতি একজন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। অনুচ্ছেদ-১৯-এ বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের কোনও পদ শূন্য হলে সেই পদ পূরণের লক্ষ্যে পরিচালনা পরিষদের অনুরোধক্রমে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং ওই পদ পূরণের জন্য অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী উক্ত কমিশন শূন্যের সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ফলে পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর সভাপতি নির্বাচিত হওয়াতেও কোনও সমস্যা নেই।
সব মিলিয়ে তাই সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কাউন্সিলর হতে হবে। সেটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে আসা কোনও পরিচালকের পদত্যাগের মাধ্যমেই হতে হবে। যেমনটা হয়েছিল দশ মাস আগে। জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির পরিবর্তে নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও ফারুক আহমেদ পরিচালক হয়ে এসেছিলেন। ফাহিমের কাউন্সিলরশিপ না থাকায় তাকে আগে কাউন্সিলর মনোনীত করে এরপর পরিচালক বানানো হয়। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ক্ষেত্রে তেমনটাই হওয়ার কথা। তবে এখানে জটিলতা অন্য জায়গায়। বিসিবির গঠনতন্ত্র ও আইসিসির নিয়মের বাইরে গিয়ে ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনে সরকার হস্তক্ষেপ করলে সংকট আরও বাড়বে।
অতীতে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে তাদের মতামত ও বর্তমান পরিস্থিতি আইসিসিকে জানিয়েই বিসিবিকে যা করার করতে হবে। ইতোমধ্যে ফারুক আহমেদ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না। ফারুক যদি পদত্যাগ না করেন, সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই বুলবুলের আসার সুযোগ নেই। উল্টো আইসিসির রোষানলে পড়বে বাংলাদেশের ক্রিকেট।