X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
৩ পেরিয়ে বাংলা ট্রিবিউন

সব বাধা পেরিয়ে অসীমের পথে

খালিদ রাজ
১৩ মে ২০১৭, ২১:৫৩আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ২১:৫৩

নারীর জয়গান ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’- প্রবাদটা এখন সেকেলে। ‘অন্ধ’ সমাজের বেড়াজাল ভেঙে আপন আলোয় মুক্ত ডানা মেলেছে মেয়েরা অনেক আগেই। অফিস-আদালত, শিল্প-সাহিত্য কিংবা ক্রীড়াঙ্গন- সবখানেই এখন নারীর জয়গান। বদলে যাওয়া সময়ের স্রোতধারায় সাফল্যের পাল তুলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

ক্রীড়াঙ্গনের কথা ধরলে গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে সম্ভবত মেয়েদের ফুটবলে। যা কিছু দিন আগেও ছিল কল্পনাশক্তির বাইরে, সমাজের ফতোয়ায় হুমকি আর ধিক্কারের মুখে পড়তে হয়েছিল যাদের, তারাই উঁচিয়ে ধরেছে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা বিশ্বের বুকে। যে দেশে ছেলেদের ফুটবল ঢুকে আছে ‘আইসিইউ’তে, সোনালী দিন হাতড়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেই দেশের মেয়েরা উজ্জ্বল আলোর রোশনাইয়ে ভরে দিচ্ছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার অলিগলি।

এখন বাংলাদেশের ছেলেদের হারতে হয় ভুটানের কাছেও, যাদের একটা সময় আমরা ৭-৮ গোলে হারিয়ে দিতাম অবলীলায়! ছেলেদের ফুটবলের এই মুমূর্ষু অবস্থার চিকিৎসার জন্য কম চিকিৎসক (পড়ুন কোচ) নিয়োগ দেয়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কিন্তু ফলাফল শূন্য! অথচ ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা মেয়েদের ফুটবল মাত্র এক যুগেই ছাড়িয়ে গেছে চিন্তাশক্তিকে। আজ দেশ জয় করে বিদেশেও দেশের নাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন কৃষ্ণা-সানজিদারা। নিজেদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে তারা বাড়িয়ে নিচ্ছেন দেশের ফুটবলের উন্নতির গ্রাফ।

গত বছর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। পাসিং ফুটবলের ফুল ফুটিয়ে, ধারালো আক্রমণের ছুরিতে বিদ্ধ করেছিল প্রতিপক্ষদের। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৃষ্ণারা নিশ্চিত করেন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্ব। আগামী সেপ্টেম্বরে মূল পর্ব হবে থাইল্যান্ডে। এই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় নিয়ে  গড়া জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশের মূল ফুটবল দলও যে অনেক দূর এগিয়ে যাবে, সেই বাজি ধরা বাড়াবাড়ি হবে না মোটেও।

মেয়েদের ফুটবলের উত্থান ২০১৩ সালে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ (দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যাঞ্চল) ফুটবলে তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশের মেয়েরা পরের বছর তাজিকিস্তান থেকে ফেরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তাতে সাফল্যের ভিতটাও যেন তৈরি হয়ে যায়। সেই পথ ধরেই এগিয়ে চলা মেয়েদের। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যাঞ্চলে টানা দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া কিংবা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্ব নিশ্চিত করা-মেয়েদের জয়গানের সঙ্গে যেন বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়ারই উপলক্ষ্য।

অথচ শুরুতে কী বাধার সামনেই না পড়তে হয়েছিল মেয়েদের! ‘মেয়েমানুষ হয়ে হাফপ্যান্ট পড়ে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করবে, কখনোই না’-মৌলবাদীদের এই হুঙ্কারের মাঝে ২০০৪ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রথম মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ আয়োজিত হয় কমলাপুর স্টেডিয়ামে। ঢাকা ও বাংলাদেশ আনসারের সেই ম্যাচে না ছিল কোনও ছন্দ, না ছিল ফুটবলীয় কোনও সৌন্দর্য। একটা বলের পেছনে ২২ জনের শুধু ছোটাছুটি! অথচ ছন্দহীন সেই ফুটবলকে ভিত বানিয়ে আজ সাফল্যের আকাশে তাদের উড়ে চলা।

এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বঙ্গমাতা মহিলা গোল্ডকাপের। মেয়েদের স্কুল পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই পাওয়া যায় হীরক খনি। ‘আবিষ্কার’ হয়  গারো পাহাড় ঘেঁষা ময়মনসিংয়ের এক গ্রাম, নাম যার কলসিন্দুর। আধুনিকতার ছোঁয়া তো দূরে থাক, বিদ্যুৎ পর্যন্ত ছিল না ওই গ্রামে! অথচ কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পাল্টে দেয় মেয়েদের ফুটবলকে। ২০১৫ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটির ১৮ জনের ১৪ জনই ছিল কলসিন্দুরের। মার্জিয়া আক্তার, সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, মাহমুদা আক্তার, নাজমা আক্তারদের ছোঁয়ায় রচিত হয় বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন অধ্যায়।

উড়ছে মেয়েরা, উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। সব বাধা পেরিয়ে অসীমের পথে।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ যুবকের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
এবার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে সরব কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
এবার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে সরব কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি