রাজশাহীতে চলছে জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। অনেক বাধা অতিক্রম করে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে দেশের আট জেলার মেয়েরা। মাঠের জয়-পরাজয়ের হিসাব একপাশে ঠেলে গত শনিবার (২৮ নভেম্বর) ও রবিবার (২৯ নভেম্বর) রংপুর, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, গাইবান্ধা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ ও মাগুরার মেয়েদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে নগরীর দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
রাজশাহী ছাড়া অন্য জেলার মেয়েদের কাছে রাজশাহী এক অচেনা শহর। ক্ষুদে খেলোয়াড়দের ভাষ্য, রাজশাহীতে এর আগে কখনও আসা হয়নি তাদের। ফুটবলের কারণে রাজশাহী শহরটা দর্শন হলো। শুধু বাইরের জেলা নয়, একেবারে গ্রাম থেকে উঠে আসা রাজশাহী জেলা দলের অনেক মেয়ের কাছেও শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো অপরিচিত।
কিশোরগঞ্জ দলের সুস্মিতা খান যেমন বললো, ‘আমরা এর আগে ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় খেলতে গিয়েছি। কিন্তু রাজশাহী শহরটা আসলেই অনেক সুন্দর। এখানকার মানুষরাও অনেক ভালো। আমাদেরকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এমন সুযোগ এর আগে আমরা পাইনি। এটি আমাদের সবার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। অন্য শহর থেকে রাজশাহী অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।’
কিশোরগঞ্জের আরেক খেলোয়াড় স্বর্ণা আক্তার রাজশাহীতে মুগ্ধ, ‘আমি তিন বছর থেকে ফুটবল খেলছি। তবে এতটা ভালো কোথাও লাগেনি, যতটা রাজশাহীতে লেগেছে। এখানকার সব জিনিসই আমার ভালো লেগেছে, তবে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানটি বেশি ভালো লেগেছে।’
রংপুর দলের নাসরিন আক্তারের কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ‘আমি ৪ বছর খেলছি। রংপুরের বাইরেও অনেক জায়গায় খেলেছি। তবে রাজশাহী শহরে এটি আমার প্রথম আসা। প্রথম আসাতেই রাজশাহী শহরটি অনেক ভালো লেগেছে। স্টেডিয়াম অনেক সুন্দর। অনেক জায়গা দেখার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা বেশি ভালো লেগেছে।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোনাদিঘী স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মায়া লাকড়ার কাছেও নতুনভাবে সামনে এসেছে শহরটি, ‘কাছে থেকেও রাজশাহী শহরের অনেক জায়গা আমার কাছে অচেনা ছিল। সেগুলো এই আসরে অংশ নিয়ে সবাই মিলে ঘুরলাম।’
মেয়েদের ফুটবল খেলা এতটা সহজ ছিল না। প্রায় প্রত্যেককেই অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক বাধা-বিপত্তি। কারও জীবন স্বপ্নের মতো, আবার কারও জীবন হয়েছে রঙিন। অনেকে ঝরে পড়েছে, আবার অনেকে বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পরিবার সমর্থন বেশিরভাগই পায় না।
রংপুরের মেয়ে সীমা আক্তার তাদেরই একজন, ‘ছোট থেকেই বড় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে ফুটবলে পা দিয়েছি। কিন্তু আমার বাবা কখনও আমার ফুটবল খেলাকে সমর্থন করেনি। মায়ের সহযোগিতায় এতদূর অতিক্রম করে এসেছি। একবার তো বাবা এই খেলার আগ্রহ দেখে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছি, ফুটবল খেলে বড় খেলোয়াড় হবো। সুনাম অর্জন করবো।’
জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের মিডিয়া ম্যানেজার জিয়া হাসান আজাদ হিমেল জানিয়েছেন, রাজশাহী শহরের প্রধান ফটকগুলো যেমন- রাজশাহী মেডিক্যাল ক্যাম্পাস, ঐতিহ্য চত্বর, নগর ভবন, রাজশাহী সেরিকালচারাল, ভদ্রা, রুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, জাদুঘর, শহীদ কামারুজ্জামান উদ্যান ও পদ্মাপাড় ঘুরে দাঁড়ানো হয়েছে মেয়েদের।