দিনকয়েক আগে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সম্মেলন করেছিল বাফুফের নির্বাহী কমিটি। সেই সংবাদ সম্মেলনে হঠাৎ নির্বাহী কমিটির সদস্য শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে বসেন। এনিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনা এখনও চলছে।
সেই ঘোষণার পর নোফেল স্পোর্টিংয়ের কর্মকর্তা শাহীন এখনও আগের বক্তব্যে অনড়। এনিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে নানান ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
আপনি কী মনে করেন কাবরেরা পদত্যাগ চেয়ে যা বলেছেন, তা ঠিক ছিল?
শাহীন: অবশ্যই। আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি। আমি বুঝে শুনেই কাবরেরার পদত্যাগ চেয়েছি। এখনও আমি চাই কাবরেরা যেন না থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে কাবরেরার পদত্যাগ না চেয়ে টিমস কমিটি কিংবা নির্বাহী কমিটির সভাতে তো চাইতে পারতেন...
শাহীন: হ্যাঁ অবশ্যই পারতাম। তবে সেই সভা তো হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলতে হলো।
আপনার এমন মন্তব্যে তো নির্বাহী কমিটির অনেকেই বিব্রত হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন কাজটি ঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় কাবরেরার পদত্যাগ ইস্যুটি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি কী বলবেন?
শাহীন: এখন কেউ বিব্রত হলে কী করার আছে। আমি দেশের ১৮ কোটি ফুটবলমোদীর স্বার্থে কথা বলেছি। তারা যা চায় সেই মনের কথাগুলো বলেছি।
গুঞ্জন আছে, এর জন্য আপনাকে ‘শাস্তি’ পেতে হতে পারে!
শাহীন: আমি এখনও কোনও চিঠিপত্র পাইনি। আর আমি এমন কোনও কথা বলিনি যে শাস্তি পেতে হবে। যদি আমাকে শাস্তি দিতে হয় তাহলে ফিফা থেকে আসতে হবে! আমার আগে মাহফুজা আক্তার কিরণ ও টিপু সুলতান নানান কথা বলেছে। ওদের কথা বার্তা ছিল নিয়মের বাইরে। কই তাদের তো কিছু হয়নি। আমি তো নিয়মের মধ্যে থেকে কথা বলেছি। তাহলে আমার শাস্তির প্রশ্ন আসবে কেন?
কেউ কেউ বলছেন আপনি বাফুফের কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন...
শাহীন: প্রশ্নই আসে না। কোড অব কন্ডাক্ট যারা ভঙ্গ করার কথা বলছেন তারা কী তা পড়ে দেখেছেন? ওখানে লেখা আছে গোপনীয় কিছু কিংবা ফেডারেশনের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না।
কই আমি তো কোচের ব্যর্থতায় পদত্যাগ চেয়েছি। তাতে করে আইন ভঙ্গ হলো কোথায়? আর বেতনভুক্ত লোকজনের বিষয়ে কথা বলাই যায়। এতে ক্ষতির কিছু নেই।
অনেকেই বলেন আপনি সভাপতির ঘনিষ্ঠ মানুষ... কাছের মানুষ। একই ক্লাব করে আসছেন। তার সঙ্গে আলাদা করে বিষয়টি বলতে পারতেন...
শাহীন: দেখুন এখানে তাকে আলাদা করে বলার কিছু নাই। উনার সঙ্গে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক। এখন ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক বিষয় আর পেশাদারিত্ব অন্য বিষয়। আমি যা বলেছি ফুটবলের স্বার্থে বলেছি। কোনও কিছু ভাইরাল হওয়ার জন্য বলিনি।
এছাড়া আমি শুনেছি অনেকে বলছেন আমি নাকি সভাপতির ইন্ধনে এগুলো বলেছি। এটা মোটেও সত্যি না। উনি এই বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানেন না। আমি ওই দিন যা বলেছি তা আমার নিজস্ব মতামত।
এছাড়া আমি নিয়মিত বাফুফের সভাগুলোতে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। কোচ নিয়ে বলেছি। সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের নিয়োগ নিয়ে বলেছি। কেন তার মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। সে কতটুকু যোগ্য এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। এছাড়া ইতালি প্রবাসী ফাহামিদুল ইসলামের জাতীয় দলে খেলানোর কথা আমি টিমস কমিটির সভাতে প্রথম বলেছিলাম। এটা রেকর্ডেও আছে।
আমাকে আগের কমিটির সময় অন্যায়ের প্রতিবাদের কারণে চারবার ফেডারেশনে ঢুকতে দেয়নি। সুতরাং যা ভালো মনে করি তাই বলি আমি।
আসলে আমাদের এখানে অনেকেই ফিফা এএফসির নিয়মকানুনগুলো পড়ে না। আমি তো পড়ে এসে সভায় অংশগ্রহণ করে থাকি।
আবার অনেকে এও বলছেন আপনি আলোচনায় থাকার জন্য কোচের বিষয়ে কথা বলেছেন। আপনি কোনও কমিটির চেয়ারম্যান কিংবা শীর্ষ পদে নেই। কেউ কেউ আপনার চেয়ে কম ভোট পেয়ে কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছে। তাই বাফুফেতে আপনাকে আলাদা করে যেন মূল্যায়ন করা হয়... এই জন্য কোচ নিয়ে কথা বলা!
শাহীন: এটাও ঠিক নয়। আমি তো ফুটবলে আছি অনেক দিন হলো। আমি তো ভেসে আসি নাই। ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবো বলে আছি। আর মোটেও পদের জন্য লালায়িত নই।
আপনারা বাফুফেতে আছেন। কিন্তু আপনাদের নিজস্ব ক্লাব নোফেল স্পোর্টিং আর ফুটবলে নেই। খারাপ লাগে না?
শাহীন: খারাপ তো লাগে। এ নিয়ে নতুন করে কী আর বলবো। তবে সামনে নোফেল স্পোর্টিং আবার ফুটবলে ফিরবে। এটা বলতে পারি।
এখন শেষ পর্যন্ত কী মনে হয়, কাবরেরা কোচ থাকবেন?
শাহীন: আমি বলতে পারবো না। সভাপতি মহোদয় দেশের বাইরে আছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের পর এ নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। যদি সভা হয় তাহলে কোচ নিয়ে আবারও নিজের মত তুলে ধরবো।