X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রেসিংরুমে ‘দুর্গন্ধযুক্ত’ ভাত খেয়ে খেলছে ওরা!

তানজীম আহমেদ
১৮ মার্চ ২০২৪, ২২:৪০আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৩

দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে আগে কখনও এমনটি হয়েছে কিনা স্মৃতি হাতড়ে বলা কঠিন। ঘরোয়া হকির শীর্ষ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয়েছে প্রায় তিন বছর পর। ক্লাব কাপের পর লিগ চলছে। তবে লিগ নিয়ে নানান সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বড় ক্লাবগুলোর পারিশ্রমিক কিংবা থাকা-খাওয়া নিয়ে সমস্যা না থাকলেও অপেক্ষাকৃত ছোট ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়রা পড়েছেন বিপাকে! সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তো নেই। তার ওপর যোগ হয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিবেশ!  

থাকা-খাওয়া নিয়ে ক্ষুদ্ধ

লিগে খেলছে ১১টি ক্লাব। পারিশ্রমিক ছাড়া এরমধ্যে অন্তত চারটি ক্লাবের খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়া নিয়ে নানান অভিযোগ-অনুযোগ। হকির একমাত্র ভেন্যু গুলিস্তানের মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম। এখানেই লিগসহ সব খেলা হয়ে থাকে। স্টেডিয়ামের নিচে রয়েছে ড্রেসিংরুম। সেখানে খেলোয়াড়রা খেলার আগে কিংবা পরে পরিধেয় বদল করে থাকে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো এবার সেখানকার অর্ধেক জায়গায় তিনটি ক্লাব আবাসিক ক্যাম্প করেছে। ভিক্টোরিয়া ও দিলকুশা স্পোর্টিংয়ের সবাই এবং পুলিশ স্পোর্টিংয়ের ৫ জন সেখানে থেকেই লিগ খেলছেন। শুধু তাই নয়, প্রথম দুটি ক্লাবের থাকার সমস্যার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া নিয়ে রয়েছে অভিযোগ।

ড্রেসিংরুমের ফ্লোরে ঢালাও বিছানা দিয়ে গাদাগাদি করে কোনওমতে খেলোয়াড়রা থাকছেন। গরমে রাতে ঘুমানোও কষ্টকর। শিষ্যদের এমন অবস্থা দেখে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ের কোচ সাবেক তারকা খেলোয়াড় তাবিব এ নূর বাংলা ট্রিবিউনের কাছে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘এভাবে প্রিমিয়ার লিগের কোনও দল থাকতে কিংবা খেতে পারে না। আমার খেলোয়াড়ী জীবনে কখনও শুনিনি ড্রেসিংরুমে রেখে ক্যাম্প চলেছে। ওখানে কি থাকার কোনও পরিবেশ হলো? একপাশে সবাই ড্রেস বদল করছে। আরেক পাশে খেলোয়াড়রা ঘুমাচ্ছে, কাপড় শুকাচ্ছে। অনেকটাই গুমোট পরিবেশ। এছাড়া খেলোয়াড়দের বন্ধু-বান্ধবরা আসছে। আসলে সবকিছুই নামকাওয়াস্তে হচ্ছে। যদি ন্যূনতম সুবিধা না থাকে তাহলে দল গড়ে লাভ কী?’

তাবিব এ নূর মনে করেন, ‘দুই মাস চলবে লিগ। এভাবে না রেখে ফ্ল্যাট কিংবা মাঝারি মানের হোটেলে রাখলে কতো টাকাই বা খরচ হতো।’

গাদাগাদি করে কোনওমতে খেলোয়াড়রা থাকছেন। তিন বেলা খাবার ও ইফতার নিয়ে অভিযোগ কম নয়। ক্যাম্পে ভিক্টোরিয়া ও দিলকুশা মিলে ৩০ জনের মতো খেলোয়াড় থাকে। তাদের খাবারও সময়মতো আসে না। ভাতে অনেক সময় দুর্গন্ধ থাকে। এমনকি খাবারের পরিমাণ থাকে কম। এমন অভিযোগের কথা তুলে ভিক্টোরিয়ার অন্যতম খেলোয়াড় অধিনায়ক আসিফ এ নূর জানালেন, ‘ওখানে থাকার পরিবেশ নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ জুনিয়ররা থাকে। তাই ওরা কোনওমতে থেকে খেলছে। ওখানে ছারপোকার ভয় আছে। আছে ইদুরের সমস্যাও। এসি নষ্ট। আরেকটি টিম টিম করে চলছে। ড্রেসিংরুমে থেকে আমাদের খেলতে হবে এটা কখনও ভাবিনি। তাছাড়া খাবার নিয়ে কী বলবো… ভাতে প্রায় দুর্গন্ধ থাকে। এমনকি বাসি ভাত দেওয়া হয়। মানসম্মত তো নয়ই। ফল কিংবা ইফতারে শরবতও পাই না। অভিযোগ দিয়েও ক্লাবের কাছ থেকে কোনও সমাধান দেখছি না। কর্মকর্তারা কেউ আসেনও না।’

দিলকুশা স্পোর্টিংয়ের অধিনায়ক মেহেদেী হাসান শ্বাসনের সরাসরি অভিযোগ, ‘থাকা নিয়ে সমস্যা তো আছেই। খাবার একদম অযোগ্য। আমরা কিছু বলেও প্রতিকার পাচ্ছি না।’

দুই ক্লাবের কর্মকর্তা কী বলছেন

দুই ক্লাবের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আবু তাহের (যিনি মেরিনার্সের সহ-সভাপতিও) আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, ‘আমাদের বাজেটের ঘাটতি আছে। ইচ্ছে করলেও সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে পারছি না। আপনারা জানেন দুই ক্লাবের অবকাঠামোর সমস্যা রয়েছে। ওখানে থাকার মতো অবস্থা নেই। তাই আমরা ফেডারেশনের অনুমতি নিয়ে ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের রেখেছি। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলে ভালো সুযোগ সুবিধা দিতে আমাদের কোনও সমস্যা ছিল না। এখন খেলোয়াড়রা খাবার নিয়ে যা বলছে, সেটা আমি জানি না। এখন শুনলাম। বিষয়টি দেখবো। আর শোনেন যদি টাকা-পয়সা থাকতো তাহলে তো আমরা বড় দলই গড়তাম। সুবিধাও সেভাবে দেওয়া যেতো। খেলোয়াড়দের বর্তমান অবস্থা বুঝেই খেলতে হবে।’

ড্রেসিংরুমে ‘দুর্গন্ধযুক্ত’ ভাত খেয়ে খেলছে ওরা! স্কুলের ভবনে রেখে ক্যাম্প!

এতো গেলো দুই ক্লাবের অবস্থা। পুরোনো ঢাকার বাংলাদেশ স্পোর্টিংয়ের খাবার নিয়ে সমস্যা না থাকলেও আবাসিক ক্যাম্প নিয়ে প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে। শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্কুলের নতুন ভবনের দুই রুমে চার ভারতীয়দের সঙ্গে স্থানীয়দের রাখা হয়েছে। ৬ জন থাকছেন বেডে। বাকিরা ফ্লোরে গাদাগাদি করে। পাশেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের একটি বাথরুম ১২জন মিলে ব্যবহার করছেন।

গরমে কাহিলও থাকতে হচ্ছে। দলটির অধিনায়ক দেবাশিষ কুমার আফসোসের সঙ্গে বলেছেন, ‘আগে জানলে হয়তো এভাবে স্কুলের রুমে থেকে খেলতাম না। এটা কোনওভাবেই ভালো দেখায় না। বিশেষ করে চারজন ভারতীয় খেলোয়াড় রয়েছেন। তারা আমাদের দেশ সম্পর্কে কী ভাববেন?’

জানা গেছে, বিদেশি খেলোয়াড়রা এই অবস্থা দেখে সামনের দিকে আর না আসার কথা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের বর্তমান অবস্থা দেখে সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মনা অসহায় সুরে বলেছেন, ‘আমাদের ক্লাবের ভবন নির্মাণ চলছে। তাই স্কুলে বাধ্য হয়ে খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছে। তবে অর্থ সংকট না থাকলে এর চেয়ে ভালো পরিবেশে রাখা যেতো। আগে তো ফেডারেশন থেকে টাকা পেয়েছিলাম। এবার তো কিছু পাইনি। তবে আমিও মনে করি বিদেশিসহ স্থানীয়দের ভালো অবস্থায় রাখা উচিত।’

অন্যরা কী বলছেন

পুলিশ স্পোর্টিং টিমের প্রতিনিধি মো. তরিকুল ইসলাম ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমাদের পূর্বাচলে কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে। তাই আপাতত থাকার জায়গা নেই। এর জন্য বাধ্য হয়ে আমরা ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের রেখেছি।’

জাতীয় দলের সাবেক কোচ মাহবুব হারুন খেলোয়াড়দের দুর্ভোগের কথা শুনে বলেছেন, ‘আমার এতো বছরের ক্যারিয়ারে শুনি নাই মাঠের ড্রেসিংরুমে রেখে খেলোয়াড়দের ক্যাম্প করা হয়। আসলে দেশের সর্বোচ্চ লিগে খেলা দলগুলোর খেলোয়াড়দের আবাসন ও খাবারের অবস্থা ভালো হওয়া উচিত। তা নাহলে দেখতে খারাপ দেখায়’

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাঈদকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

/এফআইআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
নিউইয়র্কে সাকিবের ব্যবহারে মুগ্ধ বাংলাদেশের সাবেক গোলকিপার 
নিউইয়র্কে সাকিবের ব্যবহারে মুগ্ধ বাংলাদেশের সাবেক গোলকিপার 
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!