X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থের অভাব থাকলেও তাদের ছিল ‘প্যাশন’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ মে ২০২০, ২২:২৬আপডেট : ১১ মে ২০২০, ২২:৩৫

তামিমের সঙ্গে লাইভ আড্ডায় তিন সাবেক অধিনায়ক (ওপর থেকে) হাবিবুল বাশার, খালেদ মাহমুদ ও নাঈমুর রহমান খুব বেশি আগের নয়। টেস্ট যুগে পা রাখার সময়ও দেশের ক্রিকেটে সুযোগ-সুবিধা খুব বেশি ছিল না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) ছিল না এখনকার মতো বিত্তশালী। সেই সময় খেলার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন খেলোয়াড়রা, সেই গল্পগুলোই রবিবার তামিম ইকবাল তুলে এনেছেন নাঈমুর রহমান, খালেদ মাহমুদ ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে ফেসবুক লাইভ আড্ডাতে।

এখনকার মতো সুযোগ-সুবিধা কিংবা টাকা-পয়সা না থাকলেও সেই সময়ের ক্রিকেটাররা লড়ে গেছেন দেশের জার্সি গায়ে। দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর জানালেন, এটা সম্ভব হয়েছে ওই সময়ের ক্রিকেটারদের অত টাকা না থাকলেও প্যাশন অনেক বেশি ছিল বলে।

‘আমাদের সবেচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলা। আবাহনী, মোহামেডান, বিমানের মতো দলে খেলতে উদগ্রীব হয়ে থাকতাম আমরা। সুমন (হাবিবুল) যেমন বিমান থেকে যেতই না। কেননা বিমানে পারিশ্রমিক ছিল নিরাপদ। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সে খারাপ খেললে টিম অফিসিয়ালদের খুঁজেই পাওয়া যেত না। বিদেশ ট্যুরে ৫-৬ ডলার করে ডিএ বা অন্যান্য বিল থাকতো। আইসিসি ট্রফি জয়, বিশ্বকাপে খেলার পর ধাপে ধাপে কিছুটা বাড়লো। ৩০ ডলার, ৪০ ডলারে আসছে, সেটাও আইসিসির চাপে।’- বলেছেন বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট অধিনায়ক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অর্থ না থাকায় বিদেশ সফরে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো খেলোয়াড়দের। ফলে সেই সময় ক্লাবের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশ সফরে যেতেন তারা। সেই দিনগুলোর বর্ণনা দিলেন নাঈমুর এভাবে, “বিদেশ সফরের আগে আমরা ক্লাবের কাছে পাওনা টাকার জন্য দৌঁড়াতাম যে, বাইরে যাব টাকা লাগবে।  আমাদের তখন ৫-৬ ডলার খাবারের জন্য বরাদ্দ থাকতো। অনুশীলন থেকে ফেরার পথে ম্যাকডোনাল্ড’স-এ খেয়ে নিতাম। রাতে হয়তো আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বাইরে গিয়ে খেতো। কিন্তু সবাইতো সেটা পারতো না, অনেকের ক্লাবের পেমেন্টইতো সে রকম ছিল না। অনেকে দুপুরের খাবার খেয়ে রাতের জন্য আবার নিয়ে আসতো। রাতের জন্য যে ট্যাক্সি ভাড়া করে বের হবে, সেটা কঠিন ছিল।’

তার কথা ধরে হাবিবুল বলতে থাকলেন, ‘বাসাবো থেকে প্রতিদিন টেস্পুতে করে খুব কষ্ট করে গুলিস্তান আসতাম। ১ টাকা ভাড়া দিতাম। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের করতে হতো। ওটা অবশ্য ভবিষ্যতে কাজে দিয়েছিল। প্রথম নিউজিল্যান্ড সফরে ৭-৮ ডলার খাবারের জন্য বরাদ্দ ছিল। ভাত খেতে খুব ইচ্ছো করতো, কিন্তু খেতে পারতাম না। ভাত খাওয়ার পয়সা ছিল না। পেটে বালিশ দেওয়ার কথাটা খুব প্রচলিত ছিল আমাদের মধ্যে।’

ওই সময় বিদেশ সফরে প্রবাসীদের দাওয়াতের অপেক্ষায় থাকতেন ক্রিকেটাররা। মাহমুদের বর্ণনা, ‘একটা সত্যি কথা বলতে হয়, তখন বাঙালিদের বাসায় দাওয়াত পেলে খুব ভালো লাগতো। খুব খুশি হতাম। এখন যেমন বাঙালিদের বাসায় দাওয়াত দিলে তামিমরা যেতে চায় না। তখন দাওয়াত দিলে ভাত খাওয়ার পাশাপাশি একবেলা পয়সা বাঁচতো (হাসি)।’

এখনকার খেলোয়াড়রা এনার্জি ড্রিংকস নষ্টও করেন। কিন্তু নাঈমুর-মাহমুদরা শোনালেন বাথরুমের পানি দিয়ে বানানো ‘এনার্জি ড্রিংকস’ পান করে ‘দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর গল্প’। শুরুটা করলেন নাঈমুর, ‘তোরা (তামিমকে উদ্দেশ্য করে) কত রকম এনার্জি ডিংকস খাস। কিন্তু আমরা এগুলোর কোনও কিছুই দেখিনি। খোকন ও জয়নাল ভাই নামে আমাদের দুই অফিসিয়াল অপু ভাইয়ের বাথরুম থেকে বালতি নিয়ে আসতো। ওই বালতিতে বাথরুমের পানি নিয়ে লেবু আর চিনি নিয়ে হাত দিয়ে গুলিয়ে নিতো। ৫-৬টা গ্লাস থাকতো। লবণটা দিতো না। হাতের লবণেই হয়ে যেত (হাসি)। ওইটা ছিল আমাদের এনার্জি ড্রিংকস। আমাদের পেটও খারাপ হতো না। সব হজম হয়ে যেত।’

এরপর মাহমুদ বলে ওঠেন, ‘আমাদের থেকেও বেশি কষ্ট করেছেন ১৯৭১ সালের পরের ব্যাচ। উনারাতো পয়সা  ছাড়া ক্রিকেটে খেলেছেন। উনারা খেলছিলেন বলেই আমাদের ক্রিকেট আজকে এই পর্যায়ে এসেছে। আমরা খেলতে পেরেছি, তোরা খেলছিস। এটাইতো নিয়ম, আস্তে আস্তে ক্রিকেট অবকাঠামো উন্নতি হবে।’

এত কষ্টের পরও কিভাবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ধরে রেখেছিলেন? তামিমের এমন প্রশ্নে নাঈমুর বললেন, ‘আসলে অর্থ না থাকলেও আমাদের খেলার প্রতি প্যাশন অনেক বেশি ছিল। কেননা তোমরা এখন অনেক ব্যস্ত। প্রচুর খেলা তোমাদের। আমাদের ব্যস্ততা বলতে প্রিমিয়ার লিগ, আর কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আইসিসি ট্রফির পর থেকে সেটা আস্তে আস্তে বাড়লো। কিন্তু আমাদের প্যাশন ছিল অন্যরকম, সেটা ক্রিকেটার বলো আর ক্লাব অফিসিয়ালদের কথা বলো।’

হাবিবুল বললেন, ‘জাতীয় দলের খেলোয়াড় হওয়াটা সবচেয়ে বড় মোটিভেশন ছিল। ওই সময় জাতীয় দলে নির্দিষ্ট সংখ্যক খেলোয়াড়রা খেলতো। খুব ভালো খেললেও আমরা অনেকে সুযোগ পেতাম না। আরেকটা মোটিভেশন ছিল জাতীয় দলের খেলোয়াড় হলে ক্লাবের পারিশ্রমিক ভালো পাওয়া যেত।’

/আরআই/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ